Advertisement
E-Paper

মাকে জড়িয়ে ঘুমের সময় ‘প্রেমিকের’ অ্যাসিড, ঝলসে গেল কিশোরী

মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল বছর তেরোর মেয়ে। হঠাৎ আর্তনাদ— ‘‘গা পুড়ে যাচ্ছে মা, কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না!’’ মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পোড়ে মায়েরও। ঘরে ঢুকে অ্যাসিড ছুড়ে ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে নাছোড়বান্দা ‘প্রেমিক’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৬

মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল বছর তেরোর মেয়ে। হঠাৎ আর্তনাদ— ‘‘গা পুড়ে যাচ্ছে মা, কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না!’’ মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পোড়ে মায়েরও। ঘরে ঢুকে অ্যাসিড ছুড়ে ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে নাছোড়বান্দা ‘প্রেমিক’।

পরিবারের দাবি, প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে না বলার মাসুল এ ভাবেই দিল পূর্বস্থলীর দামপাল এলাকার ওই কিশোরী। বাঁ চোখ, মুখ, বুক, হাতে পোড়া নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্ষত গভীর। ৪৮ ঘণ্টা না পেরোলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়েছেন, অ্যাসিড-হামলার অভিযোগে ধরা হয়েছে গৌরব মণ্ডল নামে মেয়েটির পড়শি এক যুবককে। পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে ওই অ্যাসিডের নমুনা।

নবমীর রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে ঠিক একই কারণে অ্যাসিড-হামলা হয়েছিল মা-মেয়ের উপরে। এক সপ্তাহ যুঝে মারা যায় একাদশ শ্রেণির মেয়েটি। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। যে লোকটি অভিযুক্তকে সালফিউরিক অ্যাসিড বিক্রি করেছিল, তাকেও ধরা হয়। কিন্তু অ্যাসিড-অপরাধ কমেনি।

বারবারই প্রেমে প্রত্যাখ্যান, পুরনো রাগের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আর আক্রোশ মেটানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাসিড। গত বছরেই দেশে অ্যাসিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৫০, যার বেশির ভাগই মেয়ে। কিন্তু এত কিছুর পরেও (অ্যাসিড বিক্রিতে কড়াকড়ি করতে নির্দেশ রয়েছে খাস সুপ্রিম কোর্টের) অ্যাসিড কী করে যার-তার হাতে আসছে, কেনই বা বিক্রিতে রাশ টানা যাচ্ছে না— সে উত্তর মেলেনি। ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী জানান, পূর্বস্থলীর এই ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যে গত তিন বছরে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা দাঁড়াল ৯৫। তার মধ্যে মাস দু’য়েকের মধ্যেই পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে।

দামপালের অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, গৌরব চিরকূট পাঠিয়ে, ফোন করে বছরখানেক ধরে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে বছর কুড়ির ওই যুবক কাজের সুবাদে কিছু দিন বেঙ্গালুরুতে ছিল। গত মাস চারেক সে বাড়ি ফিরে বিরক্ত করার মাত্রা বাড়ায়। শুক্রবারও সে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিরকূট পাঠিয়েছিল। মেয়েটির বাবার কথায়, ‘‘শত চেষ্টাতেও মেয়েকে বশ করতে না পেরে তিন মাস আগে কাপড়ের গোলা কেরোসিনে ভিজিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আমাদের ঘরে ছুড়েছিল গৌরব। সে যাত্রা আমরা দেখে ফেলেছিলাম বলে বিপদ হয়নি। এ বার হল।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পাশাপাশি টিনের ছাউনি দেওয়া দুই ঘরের একটিতে মা-মেয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। অন্যটিতে মেয়েটির বাবা। রাত ১টা নাগাদ মা-মেয়ের চিৎকারে বেরোতে গিয়ে ভদ্রলোক দেখেন, দরজার বাইরের দু’টি কড়া নারকেলের দড়ি দিয়ে বাঁধা। টানা আতর্নাদে পড়শিরা জড়ো হন। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সোমবার কালনা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চোখ খুলতে পারছে না কিশোরী। নড়ার অবস্থাও নেই। তাঁর মা বলেন, ‘‘গৌরব এমন কাণ্ড ঘটাবে বুঝতে পারিনি! বুঝলে তিন মাস আগেই পুলিশের দ্বারস্থ হতাম।’’ পরে মেয়েটিকে সরানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে।

গ্রামে গিয়ে এ দিন দুপুরে দেখা গেল, গৌরবের বাড়ি তালাবন্ধ। পরে অবশ্য গ্রাম থেকেই গৌরবকে ধরে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘ছেলেটা কোথা থেকে অ্যাসিড পেয়েছে জানলেই, সেই জায়গায় ধরপাকড় করব আমরা।’’

Acid Attack Purbasthali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy