Advertisement
E-Paper

মাকে জড়িয়ে ঘুমের সময় ‘প্রেমিকের’ অ্যাসিড, ঝলসে গেল কিশোরী

মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল বছর তেরোর কিশোরী। হঠাৎ আর্তনাদ: ‘‘শরীর জ্বলে যাচ্ছে মা, কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’’ মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পোড়ে মায়েরও। ঘরে ঢুকে অ্যাসিড ছুড়ে তত ক্ষণে পালিয়েছে নাছোড় ‘প্রেমিক’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ২০:০৪

মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল বছর তেরোর কিশোরী। হঠাৎ আর্তনাদ: ‘‘শরীর জ্বলে যাচ্ছে মা, কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’’ মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পোড়ে মায়েরও। ঘরে ঢুকে অ্যাসিড ছুড়ে তত ক্ষণে পালিয়েছে নাছোড় ‘প্রেমিক’।

প্রেমের প্রস্তাবে না বলার মাসুল এ বারে দিল পূর্বস্থলীর দামপাল এলাকার ওই কিশোরী। চোখ-মুখ-বুক-বাঁ হাতে পোড়া ক্ষত নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি সে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষত গভীর। ৪৮ ঘণ্টা না পেরোলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি ফাঁকা। তবে ওই যুবককে সোমবার সন্ধ্যার দিকে আটক করা হয়। কালনার এসডিপিও ওয়াই রঘুবংশি জানান, অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। মেয়েটির বাড়ির লোকজন অভিযোগ করার মতো অবস্থায় এলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।

নবমীর রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে ঘুমন্ত মা-মেয়ের মুখেও টিনের চালের ফাঁক দিয়ে অ্যাসিড ছুড়েছিল এক যুবক। এক সপ্তাহ যুঝে মারা যায় একাদশ শ্রেণির মেয়েটি। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে, যে সালফিউরিক অ্যাসিড বিক্রি করেছিল তাকেও ধরা হয়। কিন্তু অপরাধ কমেনি। বার বারই প্রেমে প্রত্যাখ্যান, পুরনো রাগের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আর আক্রোশ মেটানোর সবচেয়ে সহজ পন্থা অ্যাসিড। গত বছরেই দেশে অ্যাসিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৫০, যার বেশির ভাগই মেয়ে। কিন্তু এত কিছুর পরেও অ্যাসিড কী করে হাতে আসছে, কেনই বা বিক্রিতে রাশ টানা যাচ্ছে না সে উত্তর মেলেনি। সেভ ডেমোক্র্যাসির রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পূর্বস্থলীর এই ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যে গত তিন বছরে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা দাঁড়াল ৯৫। তার মধ্যে মাস দু’য়েকের মধ্যেই পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে।’’

দামপালের অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, প্রতিবেশী গৌরব মণ্ডল বছরখানেক ধরে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে। বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করা গৌরব মাস ছ’য়েক ধরে বাড়িতে থাকায় উত্ত্যক্ত করার মাত্রা আরও বাড়ে। তিন মাস আগে কেরোসিনে কাপড় ভিজিয়ে জানলা দিয়ে ঘরে ছুড়ে দিয়েছিল সে। তবে সে বার তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এ বার ক্ষতি অনেক বড়। পেশায় চাষি, ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, রবিবার রাতে পাশাপাশি টিনের ছাউনি দেওয়া দুই ঘরের একটিতে তিনি আর একটিতে মা-মেয়ে ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ মা-মেয়ের চিৎকার শুনতে পান তিনি। বেরোতে গিয়ে দেখেন নারকেলের দড়ি দিয়ে দরজা বাইরে থেকে বাঁধা। স্ত্রী এসে দরজা খুলতেই দেখেন মেয়ের চোখ-মুখ ঝলসে গিয়েছে। তত ক্ষণে একটানা আর্তনাদ শুনে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সোমবার দুপুরে কালনা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চোখ খুলতে পারছে না কিশোরী। বুকের উপরের অংশ, বাঁ হাত ঝলসে যাওয়ায় নড়ার ক্ষমতাও নেই। মা কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের ক্ষতে মলম লাগাচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মেয়ে কঁকিয়ে উঠতেই ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমারও হাত, ঘাড়ের কিছুটা পুড়েছে। গৌরব এমন কাণ্ড ঘটাবে বুঝতে পারিনি।’’ কিশোরীর এক দাদু বলেন, ‘‘গৌরব চিরকুট পাঠিয়ে, ফোন করে বন্ধুদের বাড়িতে পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করত। শুক্রবারও চিরকুট পাঠিয়েছিল। বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমরা রাজি ছিলাম না। মাস তিনেক আগে কাপড়ে আগুন ধরিয়ে ঘরে ছুড়ে দিয়েছিল সে।’’ তখন গ্রামবাসীরা মিলে বছর কুড়ির ওই যুবককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই রাগেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ওই কিশোরীর পরিবারের অনুমান।

আরও পড়ুন: মুখোমুখি দুই প্রেমিক, ঘুষিতে মৃত্যু এক জনের

কালনা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই জানান, কেমিক্যাল বার্ন ইনজুরিতে দেহের অন্য অংশের থেকে মুখের অংশের ক্ষত বেশি হয়। ৪৮ ঘণ্টা না যাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হয় না। কালনা হাসপাতালে বার্ন ইনফেকশন ওয়ার্ড না থাকায় বিকেলে ওই কিশোরীকে বর্ধমানে পাঠানো হয়।

Acid Attack Purbasthali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy