Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rajib Banerjee

সেনার জন্য আবৃত্তি, ভিডিয়ো প্রকাশ, ফের জল্পনার কেন্দ্রে রাজীব

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শিবির বদল করতে পারেন বলে যে জল্পনা চলছে, এই আবৃত্তি তার ইঙ্গিত নয় তো? গুঞ্জন রাজনৈতিক শিবিরে।

সেনার জন্য আবৄত্তি করে ফের জল্পনা উস্কে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি

সেনার জন্য আবৄত্তি করে ফের জল্পনা উস্কে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ১৯:৩৬
Share: Save:

ঠিক এক মাসের ব্যবধান। জাতীয়তাবাদ উস্কে আবার জল্পনার কেন্দ্রে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের সামরিক বাহিনীর বীরত্ব নিয়ে হিন্দিতে গান রেকর্ড করেছিলেন জুনের শেষে। জুলাইয়ের শেষে পৌঁছে প্রকাশ করলেন বাংলা আবৃত্তির ভিডিয়ো। এ বারও বিষয় বাহিনীর বীরত্ব, কার্গিল ও গলওয়ানের আত্মত্যাগ। রাজীবের রাজনৈতিক গতিবিধি নিয়ে যে সব গুঞ্জন গত কয়েক মাস ধরে চলছে, তার মাঝেই দ্বিতীয় বার যে ভাবে খাঁটি জাতীয়তাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাইলেন রাজীব, তাতে জল্পনা আরও বাড়ল রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে।

রবিবার অর্থাৎ ২৬ জুলাই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তির যে ভিডিয়োটি সামনে এসেছে, সেটি ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের। কবিতাটি লিখেছেন হেরোদ মল্লিক। ‘ভারতীয় সেনার মহাত্মাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের’— শুরুতেই ভেসে উঠছে এই লিখন। তার পরেই স্ক্রিন জুড়ে দেখা যাচ্ছে জাতীয় পতাকা এবং দেশের সামরিক বাহিনীর নানা কার্যকলাপ।

‘‘যারা সীমান্তে জাগে নিশিদিন, হাসিমুখে দেয় প্রাণ / তারা তো সকলে তোমার আমার ঘরেরই সন্তান। / শত্রুর সাথে ওরা নির্ভীক প্রাণে / পাঞ্জা করে কার্গিলে-গালওয়ানে...।’’ কবিতার শুরু এ ভাবে। ‘‘ওরা মরে তাই আমরা তো বাঁচি / ওরা নেই তাই আমরা তো আছি / হে ভারতবাসী ভুলো না ওদের, করে যেও সম্মান।’’ কবিতা শেষ হচ্ছে এই ভাবে।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

আরও পড়ুন: সোজা বাংলায় বলছি: দলের নাম-প্রতীক সরিয়ে অভিনব প্রচার তৃণমূলের

কার্গিল এবং গালওয়ান, দুই সঙ্ঘাতই কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের জমানায়। কার্গিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে। গালওয়ানে চিনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সামরিক সঙ্ঘাত আরও আছে। এর চেয়েও বড় বড় সঙ্ঘাত ঘটেছে ১৯৬২, ১৯৬৫ বা ১৯৭১ সালে। ১৯৬২-র যুদ্ধে চিনের বিরুদ্ধে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল ভারতকে। পরের দু’বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী নির্ণায়ক জয় পায়। কিন্তু রাজীবের এই আবৃত্তিতে শুধু বিজেপি জমানার দুই সঙ্ঘাতে বাহিনীর বীরত্বের প্রসঙ্গ এসেছে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল, দ্রাস, বাটালিক, তোলোলিং, টাইগার হিল-সব বিভিন্ন শিখর থেকে ভারতীয় বাহিনী হঠিয়ে দিয়েছিল হানাদার পাক বাহিনীকে। আর ২০২০ সালে গালওয়ানে ভারত-চিন উত্তেজনা এখনও বহাল। সামরিক সঙ্ঘাতে দু’পক্ষই ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে তাতেই সব থেমে না-ও যেতে পারে, সঙ্ঘাত আরও রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠার আশঙ্কা এখনও রয়েছে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা তেমনই বলছেন।

আরও পড়ুন: ‘সোজা বাংলায়’ পাল্টা ভিডিয়ো বাবুলের, নাম না করে খোঁচা ডেরেককে

শুধু কার্গিল আর গালওয়ানের প্রসঙ্গ কেন কবিতায়? রাজীব ঘনিষ্ঠদের কেউ বলছেন, কবিতা তো তাঁর লেখা নয়, তিনি তো শুধু আবৃত্তি করেছেন। আবার অন্য কেউ কেউ বলছেন, কার্গিল এবং গালওয়ানের সঙ্ঘাত সাম্প্রতিকতম, সেই কারণেই ওই দুটোর প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বর্তমান দলকে নিয়ে খুব খুশি নন এবং তিনি শিবির বদল করতে পারেন বলে যে জল্পনা চলছে, এই আবৃত্তি কোনও ভাবে তার ইঙ্গিত দিচ্ছে না তো? এই প্রশ্নও রাজনৈতিক শিবিরে ঘুরতে শুরু করেছে।

গালওয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বৈঠকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি সব রকম ভাবে সরকারের পাশে থাকবেন। কিন্তু তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ ভারত-চিন সঙ্ঘাত প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে চলেছেন নিরন্তর। চিনা বাহিনীকে পিছু হঠাতে ভারত কতটা সক্ষম হয়েছে, তা নিয়েও এঁরা নিরন্তর প্রশ্ন তুলছেন। বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একেবারেই মিলছে না। ২৫ জুন তাঁর গাওয়া হিন্দি দেশাত্মবোধক গান সামনে এসেছিল। ২৬ জুলাই এল দেশাত্মবোধক বাংলা কবিতা।

শুভেন্দু অধিকারী বা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের ‘অসন্তোষ’ সম্পর্কে রাজ্যের রাজনীতিতে জল্পনা এখন জোরদার। তার মধ্যেই তৃণমূলে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। সে রদবদলে যে সাতজনের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি হয়েছে, শুভেন্দুকে তার সদস্য করা হয়েছে ঠিকই। তবে শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে আবার শুভেন্দু বিরোধী হিসেবে পরিচিত একাধিক নেতার উত্থান ঘটানো হয়েছে। শুভেন্দু যতটা পেয়েছেন, রাজীব কিন্তু ততটাও পাননি। রাজ্য স্তরের কোনও গুরুদায়িত্ব রাজীবকে দেওয়া হয়নি এই রদবদলে। রাজীবের নিজের জেলা হাওড়ায় বদল হয়েছে দলের সভাপতি। রাজীবের ঘোর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত অরূপ রায়কে সরানো হয়েছে। তবু রাজীবকে সভাপতি পদ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। রাজীবকে শুধু কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের কোঅর্ডিনেটর করা হয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতিতেই রাজীবের নতুন আবৃত্তির ভিডিয়ো সামনে এল। তবে কোনও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এই সব গান বা আবৃত্তির কোনও সম্পর্ক নেই বলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাবি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো বার বারই বলেছি, আমি জাতীয়তাবাদী। কখনও জাতীয়তাবোধের সঙ্গে আমি আপস করতে পারি না।’’ তিনি বলছেন, ‘‘কার্গিল যুদ্ধের সময়েও আমি লামাহাটায় শহিদের বাড়িয়ে গিয়েছিলাম শ্রদ্ধা জানাতে। গলওয়ানে যাঁরা প্রাণ দিলেন তাঁদের প্রতিও আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনও যোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajib Banerjee TMC Kargil Galwan Valley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE