Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Adhir Ranjan Chowdhury Kanhaiya Kumar

অধীর-কণ্ঠে তৃণমূলের কড়া বিরোধিতা, কানহাইয়ার বাঁশিতে অন্য সুর, কোন্দল ঘিরে মহাজাতির মহানাটক

অধীর চৌধুরী স্পষ্ট করে দেন, বাংলায় তাঁদের লড়াই তৃণমূল, বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই। কিন্তু কানহাইয়া কুমারের বক্তৃতা শুনে সভায় উপস্থিত অনেকেরই মনে হয়েছে অভিষেকের বক্তৃতার হিন্দি তর্জমা।

Adhir Ranjan Chowdhury, Kanhaiya Kumar

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী। কানহাইয়া কুমার (ডান দিকে)। —পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৮:৩৭
Share: Save:

সোমবার মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভা ঘিরে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে চলে এল। সভার শুরুতে কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচিকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড। মঞ্চ ছেড়ে কৌস্তভের প্রস্থান। তার পরে সভার মূল দুই বক্তা অধীর চৌধুরী ও কানহাইয়া কুমারের কার্যত আলাদা আলাদা লাইনে বক্তব্য। যা নিয়ে ‘বিভ্রান্ত’ সভায় আগত অনেকে।

তৃণমূল যেমন সোমবার তাদের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছে মেয়ো রোডে, তেমনই সোমবার মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে কংগ্রেসের সভা ছিল মহাজাতি সদনে। স্বভাবতই তৃণমূলের কর্মসূচিটি ছিল ধারে এবং ভারে বৃহত্তর। সেখানে বক্তৃতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় লোকও হয়েছিল প্রচুর। অন্য দিকে, কংগ্রেসের সভা বরাবরের মতোই ছিল মহাজাতি সদনে। সেই মহাজাতিতেই ‘মহানাটক’ হল সোমবার।

সভার শুরুতেই মঞ্চে উপবিষ্ট কৌস্তভকে ধাক্কা মারার অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তার পর কার্যত ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় মঞ্চে এবং আশপাশে। কৌস্তভের ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁকে ‘টার্গেট’ করে হেনস্থা করা হয়েছে। কৌস্তভ নিজেও গলা উঁচিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের কর্মীদের কাছে এর ‘বিচার’ চাইবেন। তবে শেষমেশ তিনি সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান।

তার পর থেকে সভা যত এগিয়েছে, ততটাই তাল কাটে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচির। মঞ্চ থেকে বক্তা হিসেবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও তীব্র আক্রমণ করেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বলেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেসের পুনরুত্থান হচ্ছে। তাই তৃণমূল এখন কংগ্রেসের পা ধরে বাঁচতে চাইছে। সাগরদিঘি দেখিয়ে দিয়েছে, এই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ কথা বলবেন না। শেষ কথা বলতে পারে কংগ্রেসও।’’ সভায় আসা ছাত্রনেতা এবং কর্মীদের উদ্দেশে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ‘‘আপনাদের বলে যাই, বাংলায় এক দিকে তৃণমূল, অন্য দিকে বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’’

কয়েক দিন আগে অধীর একটি সাক্ষাৎকারে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ এবং রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সমীকরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন। সাক্ষাৎকারে বহরমপুরের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘পুকুর এবং নদীর মধ্যে ফারাক আছে। আমার কাছে বাংলা হল পুকুর। আর ভারত হল নদী। আমি যেটা বলতে চাই, সেটাই বলি। পিছন থেকে কথা বলি না।” তিনি বৃহত্তর স্বার্থের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাঁদের এখন পুকুরের কথা ছেড়ে নদীর কথা ভাবতে হবে। অর্থাৎ, বাংলার চেয়ে বেশি করে দেশের কথা ভাবতে হবে। যেখানে কংগ্রেস এবং তৃণমূল একই জোটের সদস্য।

অধীরের ওই বক্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলা হতে থাকে। অনেকে মনে করছেন, সেই সূত্রেই অধীর ছাত্র পরিষদের সভায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির মতোই বাংলায় তৃণমূলও কংগ্রেসের শত্রু। বাংলায় তৃণমূল বিজেপি— উভয়ের বিরুদ্ধেই কংগ্রেসের লড়াই রয়েছে এবং থাকবে।

অধীর তাঁর বক্তব্য পেশ করে বিস্ফোরণ-বিধ্বস্ত দত্তপুকুরে রওনা হয়ে যান। পরে ভাষণ দিতে উঠে একদা বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়া যা বলেন, তাতে অনেকেই ‘তৃণমূলের সুর’ শুনতে পেয়েছেন। বিজেপিকে আক্রমণ করার পাশাপাশি কানহাইয়া বলেছেন, ‘‘রোজ সন্ধ্যায় জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমগুলি বাংলার বদনাম করছে। এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে। কারণ বাংলায় ওরা (বিজেপি) বিভাজনের রাজনীতি করতে পারছে না।’’ প্রসঙ্গত, মেয়ো রোডের সমাবেশ থেকে সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও তুলেছেন মমতা।

তৃণমূলের সুরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন কানহাইয়া। তিনি বলেছেন, ‘‘জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যত দিন কংগ্রেসে ছিলেন, তত দিন বিজেপি তাঁকে বলত দুর্নীতিগ্রস্ত। যে-ই তিনি বিজেপিতে গেলেন, অমনি সাধু হয়ে গেলেন। বাংলাতেও তাই! যে নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত করছিল, তাঁরা বিজেপিতে যাওয়ার পর ইডি রাস্তা ভুলে গিয়েছে।’’ বস্তুত, সভার মাঝে এক বার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও শোনা যায় জেএনইউ-এর প্রাক্তনীর গলায়। যে স্লোগান নিয়ম করে দিয়ে থাকেন মমতা-অভিষেক। যা শুনে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ আবার বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তবে তাঁরা রসিকতাবোধ হারাননি। বলেছেন, ‘‘কানহাইয়ার বক্তৃতা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল অভিষেকের বক্তৃতার হিন্দি তর্জমা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE