কালেভদ্রে ঘর ছেড়ে বেরোন তিনি আজকাল। যখন বেরোন, এ রাজ্যের ‘নরককূণ্ড’ হয়ে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ অনেক বার শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। এক বারের জন্য অন্তত সেই আক্ষেপে প্রলেপ পড়ল! প্রাক্তনের ঘরে আবর্জনা সাফ করে দিল বর্তমানের সরকার!
পাম অ্যাভিনিউয়ে সাধারণ সরকারি আবাসনে দু’কামরার ফ্ল্যাটে দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই আবাসনের দেওয়াল বেয়ে হঠাৎ এক রবার গাছ সটান মাথা গলিয়ে দিয়েছিল বুদ্ধবাবুর ঘরে! একে আগাছা, তায় আবার রবার গাছ। ঘরে হাঁপানি জাতীয় রোগের ভুক্তভোগী থাকলে তাতে আরও বিপদ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিওপিডি-র রোগী। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়েও তাই বাড়তি উদ্বেগ বয়ে এনেছিল অবাঞ্ছিত এক ফালি গাছ। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্য দ্বারস্থ হয়েছিলেন আবাসন দফতরের। ঘোর বর্ষার মধ্যেই আবাসন দফতর লোক পাঠিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ে দু’টি আবাসনের আগাছা সাফ করে দিয়েছে।
নিজের বাড়ি, নিজের পরিবার নিয়ে বুদ্ধবাবু বরাবরই অসম্ভব স্পর্শকাতর। থাকেন অতি সাধারণ জীবন যাপনে। ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পরে নিজের প্রাপ্য নিরাপত্তার বন্দোবস্তেও আপত্তি তুলেছিলেন। এখনও পুলিশ হোক বা অন্য কোনও সরকারি বিভাগ, কোনও প্রয়োজনে তাদের এত্তেলা করাও তাঁর স্বভাব-বিরোধী। এ বার রবার গাছের ঝক্কি সামলাতে খানিকটা বাধ্য হয়েই মীরাদেবী আবাসন দফতরকে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠি পেয়ে আবাসনমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর সঙ্গে। তার পরে বাকি কাজ করে দিয়েছে দফতর। শোভন অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা এই দফতরের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। এটা নিয়ে আলোচনার কী আছে!’’
একই কথা মীরাদেবীরও। সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে চর্চা হতে পারে, ভাবতেও কুণ্ঠিত তিনি। আনন্দবাজারকে রবিবার তিনি বলেছেন, ‘‘পুরনো আবাসন আমাদের। সেখানে এই রকম সমস্যা হতেই পারে। আবাসনের তরফে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টা জানানো হয়েছিল। ওঁরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে দিয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অজস্র ধন্যবাদ।’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে বেপরোয়া গাছ ঢুকে পড়েছে খবর পেয়ে তড়িঘড়িই তৎপর হয়েছিলেন আবাসনমন্ত্রী। তবে গাছটা রবার না অশ্বত্থ ছিল, ঠিক মনে নেই তাঁর। শোভনের কথায়, ‘‘খবর পেয়ে দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলাম পরিষ্কার করে দিতে। এটাই তো স্বাভাবিক!’’
রাজনৈতিক মেরু দূরত্বকে সর্বত্র বয়ে নিয়ে চলার পরম্পরাসম্পন্ন রাজ্যে ‘স্বাভাবিক’ কাজও অবশ্য কখনও কখনও ভিন্ন তাৎপর্য পায়। এখানে যেমন। সৌজন্যে দেওয়াল ফুঁড়ে আসা এক দুষ্টু গাছ!