পাকিস্তানে আটক স্বামীর মুক্তির জন্য হুগলি থেকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ছুটে গিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় বিএসএফের দফতরে। গিয়েছেন স্বামীর কর্মস্থলেও। কিন্তু তার পরেও দীর্ঘ অপেক্ষা। বিনিদ্র রজনী কেটেছে বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউয়ের স্ত্রী রজনীর। অবশেষে উৎকণ্ঠার সমাপ্তি। বুধবার পাক রেঞ্জার্সের হাতে আটক রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকে ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। সকালে অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পঠানকোটে ফিরেছেন ফিরোজ়পুরে ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ওই কনস্টেবল। কর্মস্থলে ফিরেই তিনি ভিডিয়ো কল করে কথা বললেন স্ত্রীর সঙ্গে।
প্রায় ২১ দিন পরে স্বামীর সঙ্গে কথা বলে আশঙ্কা-উৎকণ্ঠার কালো মেঘ সরে গিয়েছে রজনীর চেহারা থেকে। কেঁদে ফেলেন তিনি। তবে এই কান্না স্বস্তির। এই কান্না আনন্দের। দুই হাতে মুখ চাপা দিয়ে রজনী বলেন, ‘‘ভিডিয়ো কলে কথা হল ওর সঙ্গে। একমুখ দাড়ি হয়ে গিয়েছে। আমাকে বলল টেনশন কোরো না। আমি ঠিক আছি। দাড়ি কাটতে হবে। পরে কথা বলছি।’’ রজনী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে ফোন করেছিলেন। কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সকলেরই খোঁজখবর নিয়েছেন। চিন্তা করতে বারণ করেছেন।
গত ২৩ এপ্রিল (পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পরদিন) পঞ্জাবের পঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পূর্ণম। তখনই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে ধরে। সীমান্তে এমন ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। ভারত-পাকিস্তান, দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরেও পূর্ণমের মুক্তি হয়নি। তবে সংঘর্ষবিরতির পরে আশায় ছিলেন সকলে। বুধবার এল সেই সময়। সকাল সাড়ে ১০টায় অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরেছেন হুগলির বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার ওরফে পিকে। সেই খবর তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছোতেই লোকারণ্য গোটা বাড়ি। পূর্ণমের স্ত্রী রজনী বলেন, ‘‘মেডিক্যাল (পরীক্ষা) হয়ে গিয়েছে। ঠিকঠাক আছেন উনি। যেখানে উনি পোস্টিং ছিলেন, সেখানে চলে এসেছেন। ওখান থেকেই ভিডিয়ো কল করেছিলেন।’’ তার পর হাসি খেলে যায় রজনীর মুখে। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘‘বললেন, ‘টেনশন মত করো, হম একদম ঠিক হ্যায়।’ ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি বললাম, ‘ও বাইরে। আমার ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি শ্রীরামপুর থেকে হয়ে আসছি।’ তখন উনিও বললেন, ‘দাড়ি বড় হয়ে গিয়েছে। শেভ করে খাবার খেয়ে আসি। ৩টের সময় (দুপুর) ফোন করব।’’’
রজনী জানান, স্বামীর মুক্তির খবর আগেই দিয়েছিলেন বিএসএফের কর্তারা। তাঁর কথায়, ‘‘কতটা খুশি হচ্ছে, বোঝাতে পারব না। আমার সিঁদুর ফিরে এসেছে। পুরো দেশ ওর পাশে ছিল। সকলকে আমার অন্তর থেকে সকলকে ধন্যবাদ। জয় হিন্দ! জয় ভারত।’’

বিএসএফ জওয়ানের মুক্তির প্রেক্ষিতে সমাজমাধ্যমে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বাংলার বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ানের মুক্তির খবরে আনন্দিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউকে মুক্তি দেওয়ার খবর পেয়ে আমি আনন্দিত। আমি তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। হগলির রিষড়ায় রয়েছেন ওঁর স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে তিন বার কথা হয়েছে আমার। আজও (বুধবার) আমি তাঁকে ফোন করেছি।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘আমাদের জওয়ান ভাই, তাঁর স্ত্রী রজনী-সহ পুরো পরিবারের জন্য অনেক শুভকামনা জানালাম।’’