Advertisement
E-Paper

শংসাপত্র পেয়ে গেলেই পুনর্মূষিক ভব

ঝাঁ চকচকে নার্সিংহোম দেখে মুখে হাসি ফুটেছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। ভেবেছিলেন, তিনটি নার্সিংহোমের বেআব্রু দশা দেখার পরে এই নার্সিংহোমটিতে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে তাঁদের মুখ রক্ষা হবে। কিন্তু ভাবনাই সার।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
সিল করে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান শহরের এই দুটি নার্সিংহোম।

সিল করে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান শহরের এই দুটি নার্সিংহোম।

ঝাঁ চকচকে নার্সিংহোম দেখে মুখে হাসি ফুটেছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। ভেবেছিলেন, তিনটি নার্সিংহোমের বেআব্রু দশা দেখার পরে এই নার্সিংহোমটিতে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে তাঁদের মুখ রক্ষা হবে। কিন্তু ভাবনাই সার।

মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের নবাবহাট, পারবীরহাটার তিন নার্সিংহোমে অভিযানের পরে ফাগুপুরের ওই নার্সিংহোমেও ঢুকেও তাজ্জব বনে যান স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের কর্তারা। সার দিয়ে শয্যা থাকলেও দেখা মেলে এক জন রোগীর। বাকিরা কেউ লুকিয়েছেন অপারেশন থিয়েটারের ঘরে তো কেউ শৌচাগারে। তবে রোগী লুকিয়ে রাখলেও নার্সিংহোমের বেআব্রু পরিকাঠামো লুকিয়ে রাখতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের কর্তারা ধরে ফেলেন, নার্সিংহোমের অত্যন্ত জরুরি শর্ত সর্বক্ষণের চিকিৎসক বা নার্সই নেই এখানে। প্রশাসনের এক কর্তা তো বলেই ফেললেন, “দেশলাই বাক্সে একটাই কাঠি! তাও ভিজে।” বর্ধমানের আইএমএ-র কর্তাদেরও দাবি, শহরে একটা-দু’টো নয়, অন্তত পঞ্চাশের বেশি নার্সিংহোমেরই এই হাল।

পারবীরহাটা মোড় থেকে কিছুটা দূরে গলির ভিতর একটি নার্সিংহোম চলে। ঢুকে বোঝা যায় বাড়ির একটা তলায় কোনও রকমে কয়েকটা শয্যা রেখে নার্সিংহোম চলছে। অপারেশন থিয়েটার বলতে যা বোঝায়, তার ন্যূনতম পরিকাঠামোও নেই। রবিবার জেবি মিত্র লেনের যে নার্সিংহোম থেকে শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, সেই এলাকার বাসিন্দারাও নার্সিংহোমের অনুমোদন পাওয়া, নিয়মিত পরিদর্শন না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মঙ্গলবার অভিযানে নেমে তিনটি নার্সিংহোম ঘুরে একই প্রশ্ন জেগেছে স্বাস্থ্যকর্তাদেরও। তাহলে কী অনুমোদন দেওয়ার আগে স্বাস্থ্য দফতর পরিদর্শন করে না? কর্তারাই জানান, আচমকা পরিদর্শনে নিয়মভাঙা ধরা পড়লেও সাধারণ ভাবে পরিদর্শনে তা ধরা পড়ে না। সেক্ষেত্রে পদ্ধতিকেই দায়ী করছেন তাঁরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “অনলাইনে আবেদন করার পর পরিদর্শনের সম্ভাব্য তারিখ জানাতে হয়। ওই তারিখ দেওয়া মাত্রই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দেওয়া মোবাইলে মেসেজ চলে যায়।” ব্যবস্থা নিয়ে নেওয়ার সুযোগ হয়ে যায়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “পরিদর্শনের তারিখ জেনে যাওয়ার পর কনে সাজানোর মতো সমস্ত নিয়ম মেনেই নার্সিংহোমকে ঠিক রাখে কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শকরা সেই মতো রিপোর্ট দিলে সিই শংসাপত্র দিতেই হয়।” তারপরে আর পরিদর্শন হয় না কেন? প্রণববাবুর দাবি, “আচমকা পরিদর্শন করেই তো চলতি বছরে মেমারি, বর্ধমান ও কালনায় সাতটি নার্সিংহোম বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে।

নার্সিংহোমে থাকার কথা

• ১০ শয্যা পিছু এক জন সর্বক্ষণের চিকিৎসক।

• ৫ জন রোগী পিছু এক জন করে নার্স।

• দুটি শয্যার মাঝে চার ফুট ফাঁকা জায়গা।

• বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো ফেলার জায়গা।

• নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবনদায়ী ওষুধ।

• প্রতিটি শয্যার জন্য ১০০ বর্গফুট জায়গা।

• অপারেশন থিয়েটারের জন্য অ্যানাস্থেটিস্ট।

• অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় বয়েলস্

• অপারেটর, ডায়াথ্রাম, সাকার।

৪০টি নার্সিংহোমকে শো-কজ করা হয়েছে।”জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট আইন মেনে নার্সিংহোমগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের এক মাস আগে শংসাপত্র চেয়ে আবেদন করতে হয়। ওই আবেদনের সঙ্গে দমকলের ছাড়পত্র, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের শংসাপত্র, ট্রেড লাইসেন্স-সহ ছ’ রকম ছাড়পত্র জমা দিতে হয়। অনলাইনে আবেদনপত্র পাওয়ার পর নির্দিষ্ট দিনে পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তা। তিনি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট বা সিই শংসাপত্র দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে কী দেখেন? মেডিক্যাল কাউন্সিলের (এমসিআই) নিয়ম মেনে, ১০ শয্যা পিছু এক জন করে সর্বক্ষণের চিকিৎসক (আরএমও), পাঁচ রোগীর জন্য এক জন করে নার্স, দুটি শয্যার মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা, বর্জ্য পদার্থ ঠিকমত ফেলার জায়গা অপারেশন থিয়েটার চালানোর জন্য অ্যানাস্থেটিস্ট এবং অবশ্যই সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়। অনুমোজিত শয্যার চেয়ে বেশি শয্যা আছে কি না খতিয়ে দেখা হয় তাও। এরপরেই ওই শংসাপত্র দেওয়া হয়। যদিও শংসাপত্র পেয়ে যাওয়ার পরে নার্সিংহোমগুলি নিয়মের তোয়াক্কা করে না বলেও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।

Certification nursing homes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy