দিল্লিতে শুক্রবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দফতরে গিয়ে মুকুল রায় ওই দলে যোগ দেওয়ার পরেই কলকাতায় দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, ‘‘মুকুল রায় বিরাট মাপের নেতা বলে আমরা মনে করি না। আমাদের দল লোকসভা নির্বাচনে ১১ কোটি ভোট পেয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল পেয়েছিল ২ কোটি। মুকুল তো সেই ২ কোটির দলের আঞ্চলিক নেতা ছিলেন।’’
মুকুলের বিজেপিতে যোগদান যে দলের একাংশকে ‘খুশি’ করতে পারেনি, দিলীপবাবুর ওই মন্তব্যেই তা কিছুটা স্পষ্ট। ন’দিন আগে কলকাতা বন্দরের অতিথিশালায় রাহুল সিংহের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ঘরোয়া আলাপচারিতায় বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহও বলেছিলেন, ‘‘২০১৫ সালেও তো প্রচার হয়েছিল, মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন! কিন্তু সেটা হয়নি। সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হবে।’’ সিদ্ধার্থনাথ ২০১৪ সালে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’।
এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘ভাগ মুকুল ভাগ’-এর ব্যাখ্যা দিয়ে দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘মুকুল রায়কে ভাগতে বলা হয়েছিল। তিনি তো তৃণমূল থেকে চলেই এলেন!’’
কিন্তু সিদ্ধার্থনাথ তো একই সঙ্গে ‘ভাগ মমতা ভাগ’ স্লোগানও দিয়েছিলেন। কী বলবেন? জবাব এড়িয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাচ্যুত হবেন।’’
বিজেপির অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, সারদা-নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মুকুলকে দলে নেওয়ায় বিজেপি-র দুর্নীতি বিরোধী লড়াই এবং ভাবমূর্তি দুর্বল হল।
দিলীপবাবু এ দিন সাফাই দিয়েছেন, ‘‘মুকুলবাবু অভিযুক্ত। কিন্তু দোষী নন। আইনের চোখে দোষী প্রমাণিত না হলে তাঁকে দোষী বলব কেন?’’ অন্য যাঁরা এখনও দোষী প্রমাণিত হননি, বিজেপি কি আর তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হবে না? দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের কথা আলাদা। তবে আইন আইনের পথে চলবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে বা অনৈতিক কাজ করলে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না।’’ মুকুল দলে আসায় বিজেপির কি লাভ হবে? জবাবে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।’’ ফ্রন্টও মুকুলের বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে দুর্নীতির খোঁচা দিয়েছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুকুল রায়কে দলে নিয়ে বিজেপি প্রমাণ করে দিল, আর্থিক এবং আরও নানা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল, বিজেপি এবং মুকুলের মধ্যে আঁতাঁত আছে।’’