Advertisement
E-Paper

৫০ লক্ষ টাকা ঋণ, সুতন্দ্রা ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে, পানাগড়কাণ্ডের পর অকূলপাথারে মা তনুশ্রী

দুরারোগ্য ক্যানসারে স্বামীকে হারিয়েছেন আগেই। তার পর পরিবারের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেয়ে। তাঁর মৃত্যুর পর শোকার্ত পরিবারের আত্মীয়দের চিন্তা, এত ঋণ শোধ হবে কী ভাবে?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৫
Panagarh Death Case

(বাঁ দিকে) মেয়ে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

মেয়ের মৃত্যুর পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও ঘটনার অভিঘাত সামলাতে পারেননি হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। মেয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার ও নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (২৭) অকালমৃত্যুতে অকূলপাথারে পড়েছেন প্রৌঢ়া। দুরারোগ্য ক্যানসারে স্বামীকে হারিয়েছেন আগেই। তার পর পরিবারের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেয়ে। তাঁর মৃত্যুর পরে শোকার্ত পরিবারের আত্মীয়দের চিন্তা, এত ঋণ শোধ হবে কী ভাবে?

রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পুরনো জিটি রোডের সংযোগস্থলে গাড়ি উল্টে মারা যান সুতন্দ্রা। গাড়িতে থাকা সুতন্দ্রার সঙ্গীদের অভিযোগ ছিল, একটি গাড়ি তাঁদের পিছু ধাওয়া করছিল। সুতন্দ্রা ছিলেন ওই গাড়ির আরোহীদের ‘টার্গেট’। অভিযোগ, যুবতীকে অশালীন ইঙ্গিত এবং উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছিলেন কয়েক জন যুবক। যদিও ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ জানায় অন্য কথা। তাদের দাবি, দু’টি গাড়ির রেষারেষিতে দুর্ঘটনা হয়েছে। ‘ইভটিজ়িং’-এর কোনও ঘটনা ঘটেনি। এমনকি, অভিযোগপত্রে যৌন হেনস্থার কথা উল্লেখ করেননি মৃতার আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব। পানাগড়কাণ্ডে এই ধোঁয়াশার মধ্যে আর একটি চিন্তায় মৃতার পরিবার। সেটা বৈষয়িক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঋণে জড়িয়ে রয়েছে সুতন্দ্রার পরিবার। বাড়ি ও দোকানঘর দুটোই বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি রেলের ঠিকাদার ছিলেন। চন্দননগরের নাড়ুয়ায় তাঁদের বাড়ি এবং চন্দননগরের পালপাড়া এলাকায় একটি দোকান রয়েছে। ব্যবসায় ক্ষতি চলছিল। তার মধ্যেই সুকান্তের শরীরে কর্কটরোগ ধরা পড়ে। তাঁর চিকিৎসার জন্য জলের মতো টাকা খরচ হয়েছে। তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি। বস্তুত, ‘নিঃস্ব’ হওয়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবার। সেখান থেকে একটু একটু করে পরিবারকে ঘুরে দাঁড় করাচ্ছিলেন সুতন্দ্রা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল!

সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে আমাদের। সেই দেনা কী করে মিটবে, তা নিয়ে মা-মেয়ে চিন্তায় ছিলাম। ইভেন্টের কাজ করে ও (সুতন্দ্রা) চেষ্টা করছিল দেনা শোধের। কিন্তু সেটা আর হবে না। আমার মেয়েটাই তো চলে গেল!’’ অন্য দিকে, স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবারই নাকি ব্যাঙ্ক থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দোকানে একটি নোটিস সাঁটিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুতন্দ্রার মায়ের আশঙ্কা, কয়েক দিন পরে হয়তো মাথার ছাদটাও চলে যাবে। প্রথমে স্বামী, তার পরে মেয়েকে হারিয়ে এখন চোখের জলই সম্বল প্রৌঢ়ার।

সুতন্দ্রাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং প্রতিবেশী রুমেলা লাহা বলেন, ‘‘ছোট থেকে মেয়েটাকে দেখেছি। আমরা একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া থেকে কেনাকাটা, সবই করতাম। সুতন্দ্রার ডাকনাম মামন। ছোট থেকে ওর নাচের শখ ছিল। দারুণ নাচত। কত জায়গায় অনুষ্ঠান করত! হঠাৎ ওর বাবার যখন ক্যানসার ধরা পড়ে, তখনও পরিবারের কেউ জানতেন না যে দোকান, বাড়ি সব ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখেছেন উনি। উনি মারা যাওয়ার পর ঘন ঘন ব্যাঙ্ক থেকে ফোন আসত। তখনই সকলে ঋণের বিষয়টি জানলাম। সুতন্দ্রার চেষ্টা ছিল কী ভাবে লোন শোধ করে বাড়িটাকে বাঁচানো যায়। সে কথা আমার কাছেও বলেছিল। দোকানটা বিক্রির জন্য লোক খুঁজছিল।’’ একটু থেমে ওই মহিলা বলেন, ‘‘সব সময় ও চিন্তা করত। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, তুই ছোট মেয়ে, এত চিন্তা করে কী করবি? কিন্তু লোন শোধ করার জন্য আরও বেশি বেশি করে কাজ করছিল ও। তার মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। আমরা সকলে সত্যিটা জানতে চাই। কী ভাবে এই ঘটনা হল, সেটা এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।’’

মঙ্গলবার সকালে চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী গিয়েছিলেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর কাছে সুতন্দ্রার ঠাকুরমা কল্পনা চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন, তনুশ্রীর যেন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন। না-হলে পরিবারটাই শেষ হয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে দু’জন বৃদ্ধা। দেখাশোনা, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা আর কে করবে?’’

Panagarh Accident Case panagarh Accidental Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy