Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাটা কাটিয়ে রাতের বার্জে এল রক্ত

গাড়িতে ৮৮ ইউনিট রক্ত। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে যাবে কী ভাবে? নদীতে ভাটা। বন্ধ বার্জ-ভেসেল চলাচল। পরের দিন অবধি অপেক্ষা করতে হলে নষ্ট হয়ে যাবে রক্ত! 

এই বার্জেই পার করা হয় রক্তের গাড়িটি। নিজস্ব চিত্র

এই বার্জেই পার করা হয় রক্তের গাড়িটি। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল 
সাগর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

গাড়িতে ৮৮ ইউনিট রক্ত। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে যাবে কী ভাবে? নদীতে ভাটা। বন্ধ বার্জ-ভেসেল চলাচল। পরের দিন অবধি অপেক্ষা করতে হলে নষ্ট হয়ে যাবে রক্ত!

উপায়? জোয়ার আসতে রাত পেরিয়ে যাবে। তখন তো মিলবে না ভেসেল! হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের উদ্যোগে যোগাযোগ করা গেল জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকরের সঙ্গে। জেলা প্রশাসন শনিবার গভীর রাতে ব্যবস্থা করল বার্জের। শেষ পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা পরে সাগরমেলায় রক্তদান শিবিরে সংগ্রহ করা ওই রক্ত পৌঁছে দেওয়া গেল ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে।

সাগরমেলায় জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে শনিবার সেখানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর পর্যন্ত মোট ৮৮ জন রক্তদান করেন। রক্ত সংরক্ষণ করে ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি গাড়ি সেখানে সকাল থেকে মজুত ছিল। শিবির শেষ হওয়ার পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ গাড়িটি পৌঁছয় কচুবেড়িয়া। সমস্যার শুরু তার পরেই।

কচুবেড়িয়া থেকে মুড়িগঙ্গা পার হয়ে কাকদ্বীপ (৭৮ কিলোমিটার) থেকে সড়কপথে যেতে হয় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল। ওই নদীপথটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পলি জমে মুড়িগঙ্গায় ভেসেল বা বার্জ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। জোয়ার থাকলে ভেসেল-বার্জ চলে। কিন্তু ভাটায় দু’পাড়ের যোগাযোগ থাকে না। দিনচারেক আগে মাঝ নদীতে একটি যাত্রিবাহী ভেসেল আটকে পড়েছিল। উপকূলরক্ষী বাহিনী যাত্রীদের উদ্ধার করে। রক্তদান শিবিরের আয়োজক সংস্থার কর্মী মৃণালকান্তি বালা জানান, শনিবার রক্তের গাড়িটি যখন কচুবেড়িয়ায় পৌঁছয়, তখন বার্জ-ভেসেল চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এর পর?

মৃণাল বলেন, ‘‘ফের জোয়ার না-এলে বার্জ চলাচল শুরু হবে না বলে জানান প্রশাসনের আধিকারিকেরা। আমাদের বলা হয়, মাঝরাতে বার্জ চলাচল শুরু হতে পারে। সকাল থেকে অত ক্ষণ রক্তের পাউচগুলি গাড়িতে পড়ে থাকবে? আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। রাত ১২টাতেও কোনও বার্জ চলল না দেখে হ্যাম রেডিয়ো-র কাছে যাই। ওরাই বাঁচাল।’’

যাত্রীদের সাহায্য করা এবং সাগরদ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কচুবেড়িয়াতে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের ক্যাম্প করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। মৃণাল সেখানে গিয়ে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সদস্য অভ্রদীপ দাসকে বিষয়টি জানান। অভ্রদীপ জানান রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে। অম্বরীশ জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অম্বরীশ জানান, ‘এমভি সাগরী’ নামে একটি বার্জ আলো নিভিয়ে মাঝনদীতে নোঙর করে ছিল। প্রশাসনের উদ্যোগে রাত দু’টো নাগাদ সেটি কচুবেড়িয়ায় এসে রক্তের গাড়িটিকে কাকদ্বীপের লট-৮ জেটিতে পৌঁছে দেয়।

সাগরমেলায় জোগাড় করা রক্ত যখন ব্লাড ব্যাঙ্কে পৌঁছয়, ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ৩টে পার করে গিয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক শুভ্রা মান্ডি জানান, রক্তের গাড়িটিতে একটি ফ্রিজার ছিল। সেটি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চালু থাকে। রাতে পার হতে না-পারলে রক্ত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত সবই ভালয় ভালয় মিটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE