Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ফের তৃণমূলের মারপিটে গরম রাজনীতি

তৃণমূলের দাপটে ময়দানে এখন বিরোধীদের দেখা নেই। তাতে লড়াই অবশ্য থেমে নেই। ধু্ন্ধুমার চলছে শাসক দলের নিজেদের মধ্যেই!

জখম তৃণমূল নেতা বাদল মিত্র। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু

জখম তৃণমূল নেতা বাদল মিত্র। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

তৃণমূলের দাপটে ময়দানে এখন বিরোধীদের দেখা নেই। তাতে লড়াই অবশ্য থেমে নেই। ধু্ন্ধুমার চলছে শাসক দলের নিজেদের মধ্যেই!

তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের দু’টি ঘটনায় সোমবারও সরগরম রইল রাজ্য রাজনীতি। যার মধ্যে একটি বসিরহাটে। যেখানে দলেরই বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে মার খেয়েছেন কাউন্সিলররা। পাশাপাশি হাওড়ার লালবাবা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন তোলা নিয়ে মারপিট হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর দুই শিবিরের মধ্যে।

বসিরহাটে রবীন্দ্রভবন ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে এ দিন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট হয়। টিএমসিপি-র অভিযোগ, ওই হলে এ দিন তাদের সাংগঠনিক সভা করার অনুমতি দিয়েছিল স্থানীয় পুরসভা। পরে তা বাতিল করা হলেও তাদের জানানো হয়নি। এ দিন সকালে কর্মীরা ভবনের কাছে পৌঁছে দেখেন, সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মশালার আয়োজন চলছে। রয়েছেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, পুরপ্রধান তপন সরকার-সহ অনেকে। তখনই জানা যায়, তাদের সভার অনুমতি বাতিল হয়েছে। পুরপ্রধানের অবশ্য পাল্টা দাবি, এক জন কাউন্সিলর নিজের প্রয়োজনে সোমবারের জন্য হল বুক করেছিলেন। তাঁকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সরকারি অনুষ্ঠান থাকায় এ দিন হল দেওয়া সম্ভব নয়।

দু’পক্ষের বচসায় উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তা সত্ত্বেও মারামারি ঠেকানো যায়নি। টিএমসিপি-র মহকুমা সভাপতি শমীক রায় অধিকারী, কাউন্সিলর অসিত মজুমদার, অদিতি মিত্র-সহ অনেকে প্রহৃত হয়েছেন। অদিতিদেবীকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে অন্য কয়েক জন মহিলাকেও। তৃণমূলের যুব ও ছাত্রনেতা বাদল মিত্রকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। মার খেয়েছেন আর এক তৃণমূল নেতার স্ত্রীও।

টিএমসিপি-র জেলা সভানেত্রী পারমিতা সেন প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘রবীন্দ্রভবনে আমাদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। তা করতে না দিয়ে পুলিশের সামনে দলেরই কয়েক জন আমাদের ছেলেদের মারধর করল! আর পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দিল!’’ পরে এসডিপিও-র দফতরে দীপেন্দুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তিনি সুর বদলে বলেন, ‘‘দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়নি। গরু পাচারকারীদের হামলায় দলের চার জন গুরুতর জখম হয়েছেন।’’ দীপেন্দু অবশ্য বলেন, ‘‘এক দল জোর করে রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠান করতে চাওয়ায় গণ্ডগোল হয়েছে শুনেছি। তবে হলের ভিতর অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় বাইরে ঠিক কী ঘটেছে, বলতে পারব না।’’

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের অবশ্য দাবি, সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে এক নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বসিরহাটে কোন্দল বেড়েছে। তারই পরিণতি মারপিট।

অন্য দিকে, বেলুড়ের লালবাবা কলেজে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর গোলমালে এ দিন একদল পড়ুয়া জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় তাঁদের। সাত জনকে আটক করা হয়। রাতে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, তৃণমূলের স্থানীয়, জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব একসঙ্গে আলোচনা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪৫ জনের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাঁদের নাম আছে, এ দিন মনোনয়নপত্র তোলার জন্য শুধু তাঁদেরই ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু গত বার যাঁরা ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় যান, তাঁরা নিজেদের ‘আসল’ বলে দাবি করে সামনে রাস্তায় বসে পড়েন ও পরে জিটি রোড অবরোধ করেন। কিছু দিন আগে ওই কলেজে বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে আটকে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল ওই পড়ুয়াদেরই বিরুদ্ধে।

ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তৃণাশ্রী ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ রাস্তা অবরোধ করেননি। সাধারণ পড়ুয়ারা কলেজে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসে পড়েছিলেন।’’ টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘কলেজের বাইরে যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা টিএমসিপি-র কেউ নন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE