Advertisement
E-Paper

বর্ধমানে ফের নিখোঁজ ভাড়াটে, বাড়ছে সন্দেহ

খাগড়াগড় কাণ্ডের দু’দিনের মাথায় বাড়ি ছেড়েছিল ভাড়াটেরা। যে দিন ফিরে আসবে বলেছিল, ফেরেনি। তার পর থেকে তাদের দেওয়া তিনটে মোবাইল নম্বরের দু’টোই বন্ধ। আর একটিতে ফোন করলেই জবাব মিলছে, “রং নাম্বার, বিরক্ত করবেন না”। বিস্ফোরণ-উত্তর বর্ধমানে এতেই সন্দেহ হয় বাড়িওয়ালার। বৃহস্পতিবার তিনি দ্বারস্থ হন পুলিশের।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৩

খাগড়াগড় কাণ্ডের দু’দিনের মাথায় বাড়ি ছেড়েছিল ভাড়াটেরা। যে দিন ফিরে আসবে বলেছিল, ফেরেনি। তার পর থেকে তাদের দেওয়া তিনটে মোবাইল নম্বরের দু’টোই বন্ধ। আর একটিতে ফোন করলেই জবাব মিলছে, “রং নাম্বার, বিরক্ত করবেন না”। বিস্ফোরণ-উত্তর বর্ধমানে এতেই সন্দেহ হয় বাড়িওয়ালার। বৃহস্পতিবার তিনি দ্বারস্থ হন পুলিশের। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুমান, খাগড়াগড়, বাবুরবাগ, বাদশাহি রোডের মতো জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িতদের আস্তানা হতে পারে বর্ধমান সদরের হাঁটুদেওয়ান পীরতলা এলাকার এই বাড়িটিও। আর শুধু এই বাড়িটিই নয়, বর্ধমান শহরের গোদা, লাখুরদি এলাকাতেও জঙ্গি-ডেরা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের আশ্রয়ে মৌলবাদীদের আড্ডার যে তালিকা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতকে দিয়েছিলেন, তার গোড়ার দিকেই ছিল বর্ধমানের নাম। এ বার হাঁটুদেওয়ানের বাড়িটি নজরে আসায় গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, মালদহ বা মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী জেলা না হওয়ায় বর্ধমানের উপরে নজরদারির কড়াকড়ি অতটা ছিল না। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে জাল ছড়িয়ে ফেলেছে জঙ্গিরা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, চলতি বছরের ২১ অগস্ট বছর ছাব্বিশের এক যুবক কীর্ণাহারের বাসিন্দা কাপড়ের ব্যবসায়ী শেখ তালেব পরিচয়ে বর্ধমানের হাঁটুদেওয়ান এলাকার ওই দোতলা বাড়িটির নীচের তলায় তিনটি ঘর ভাড়া নেয়। ভাড়া ঠিক হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাড়ির মালিক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ঘর ভাড়া দেবেন বলে মনস্থ করেছেন, এ কথাটা অনেককে জানিয়েছিলেন। সেই সূত্রে খবর পেয়ে তাঁর কাছে এসেছিল তালেব। শেখ মনোয়ার মানছেন, কথাবার্তা শুনে ‘আপত্তিকর’ কিছু মনে না হওয়ায় তিনি পরিচয়পত্র দেখতে চাননি। বাড়িভাড়া নেওয়ার দিন দশেক পরে তালেব প্রায় সমবয়সী আর এক যুবক, বোরখায় মুখ ঢাকা দুই মহিলা এবং মাস আটেকের এক শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই বাড়িতে আসে।

মনোয়ারের কাছে তালেব দাবি করে, যুবকটি তার ভগ্নিপতি। মহিলাদের এক জন তার বোন, অন্য জন তার স্ত্রী। বাচ্চাটি তার মেয়ে, নাম জুবেইদা। মনোয়ার জানান, অন্য তিন জনের নাম জানতে পারেননি তিনি। ওই তিন জন পরস্পরকে ‘জুবেইদার মা’, ‘জুবেইদার পিসি’ বা ‘জুবেইদার কাকা’ বলে ডাকত।

বাড়িওয়ালার পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কারও সঙ্গে তেমন কথা বলত না তালেবরা। বাড়ির বাইরে বেরোলে মহিলারা হাতে দস্তানা ও বোরখা পরেই বেরোত। জানলায় পর্দা এবং বারান্দার গ্রিলে পলিথিনের চাদর টাঙানো থাকতো। বাড়িতেও ওড়নায় মুখ ঢাকা থাকত মহিলাদের। তালেবরা নিজেদের মধ্যে হিন্দি ও বাংলায় কথা বলত। তবে বেশির ভাগ হিন্দিতেই কথাবার্তা চলত। সাদা ও নীল-কালো রঙের দু’টি মোটকবাইকে চেপে সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরোত তালেব ও তার ‘ভগ্নিপতি’। ফিরত রাত ৮টা নাগাদ। বেরোনোর সময়ে তারা মহিলাদের বাইরে থেকে তালা দিয়ে যেত। বাড়ি ঢোকার সময় তালেবদের হাতে মুখ বাঁধা কাপড়ের থলি এবং বড় পলিথিনের ব্যাগ থাকত।

মনোয়ার জানান, গত ৪ অক্টোবর তালেব তাঁর কাছে এসে বলে, তারা ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছে। ঈদের পরে ফিরে আসবে। কিন্তু তার পরে দিন চারেক কাটলেও না ফেরায় মনোয়ারের পরিবারের সন্দেহ হয়, খাগড়াগড়-কাণ্ডের সঙ্গে তাঁদের ভাড়াটেদের যোগ নেই তো! তখনই তালেবের দেওয়া তিনটি মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু যোগাযোগ করতে না পারায় সন্দেহের বশে মনোয়ার বর্ধমান সদর থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশ তালেবদের সম্পর্কে খোঁজ নেয়। তবে কীর্ণাহার থেকে ওই ধরনের কারও খবর এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে মোটরবাইক দু’টির রেজিস্ট্রেশন নদিয়ার বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, “ভেবেছিলাম, বন্ধ ঘরগুলোর দরজা ভাঙব। কিন্তু তার মধ্যেই মামলার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে চলে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এই বাড়িতে যারা থাকত, তাদের সঙ্গে খাগড়াগড়-কাণ্ডের জঙ্গিদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল।”

ভাড়াটে উধাও চুঁচুড়াতেও

পুলিশে খবর দেওয়ার পরেই চম্পট দিল ভাড়াটেরা। চুঁচুড়ার কিশোরীবাগানের পীরতলায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকার এক জন স্থানীয় বাসিন্দা মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আট মাস আগে একটি পরিবার ঘরভাড়া নেয়। তারা এলাকার কারও সঙ্গে কথা বলত না। রাতে বাড়িতে লোকজন আসত। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে সন্দেহ হওয়ায় এলাকার লোকেরাই পুলিশে খবর দেন। তার পর থেকেই ভাড়াটেরা বেপাত্তা। শনিবার রাতে পুলিশ তালা ভেঙে ওই বাড়িটিতে ঢুকে একটি প্রিন্টার ও রবার স্ট্যাম্প খুঁজে পেয়েছে। যে দালালের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেই রাজু কুণ্ডুকেও আটক করা হয়েছে। রাজুকে ওই ভাড়াটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শেখ হাসেম। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

khagragarh blast bardwan soumen dutta bomb blast tenants missing suspect state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy