Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফের তাতল নানুর, হেনস্থা সাংবাদিককেও

নানুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ এ বার সংবাদমাধ্যমের গায়েও।এবিপি আনন্দ-সহ দু’টি সংবাদমাধ্যমের চিত্র সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠল নানুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। সোমবার স্থানীয় বিধায়ক গদাধর হাজরার কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে আসা গ্রামবাসীর ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।

ব্লক কার্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

ব্লক কার্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

নানুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ এ বার সংবাদমাধ্যমের গায়েও।

এবিপি আনন্দ-সহ দু’টি সংবাদমাধ্যমের চিত্র সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠল নানুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। সোমবার স্থানীয় বিধায়ক গদাধর হাজরার কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে আসা গ্রামবাসীর ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। বিধায়ক বা তাঁর অনুগামীরা অবশ্য মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি।

এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সে প্রশ্নে গদাধর হাজরার অনুগামীদের সঙ্গে যুব নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের সংঘাতে বারবার তেতে উঠেছে নানুর এবং বোলপুরের কিছু গ্রাম। এ দিন দলীয় কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের আক্রান্ত হওয়া সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন। পুলিশ সূত্রে খবর, চিত্র সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় নানুরের ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।

স্থানীয় নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের সাকোড্ডা এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সেরপুর মোড় থেকে গোপডিহি রাস্তাটি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ দিন বেহাল। প্রশাসনের সব স্তরে জানিয়েও প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে এ দিন ওই এলাকার বাসিন্দারা হাজির হন ব্লক অফিসে। কাছেই উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র থাকায় পুলিশের বাধায় বিক্ষোভ দেখাতে না পেরে তাঁরা হাজির হন তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়ে। সে সময় বিধায়ক না থাকলেও ছিলেন ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, সূচপুর গণহত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী তথা নানুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক-সহ জনা তিরিশেক কর্মী। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। খবর যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে।

সেই ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে বিধায়ক অনুগামীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন দুই চিত্র সাংবাদিক আবু বক্কর সিদ্দিকী ওরফে আবীর ইসলাম এবং অমরনাথ দত্ত। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক অনুগামীরা প্রথমে অভব্য আচরণ করেন। প্রতিবাদ করতেই শুরু হয় মার। চড়-থাপ্পড়ের পরে ক্যামেরার ব্যাগও ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। টহলরত পুলিশ পরে হট্টগোল থেকে তাঁদের উদ্ধার করে।

বিক্ষোভের ছবি হামেশাই তো সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়। তা হলে হঠাৎ মারধর কেন?

এর জবাবে এলাকার চেনা গোষ্ঠী-কোন্দলের ছায়া দেখছে রাজনৈতিক মহল। স্থানীয় সূত্রে খবর, নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েত কাজলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিন কয়েক আগেই কাজল অনুগামী পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের বাড়িতে হামলায় নাম জড়ায় বিধায়ক অনুগামীদের। অভিযুক্তদের না ধরলে বিডিও এবং পুলিশের কাছে গণ-ইস্তফার হুমকি দেয় কাজল অনুগামীরা। ওই কর্মসূচিতে অনেকের সঙ্গে দেখা যায় নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মনিজা বেগমকেও। বিক্ষোভকারীরা যে কাজলেরই লোক সে খবর পৌঁছে যায় ব্লক কার্যালয়ে। বিরোধীদের দাবি, রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দলেরই এক গোষ্ঠীর বিধায়কের কাছে বিক্ষোভ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মুখ পুড়বে। সেই আশঙ্কা থেকে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের উপস্থিতি বিধায়ক অনুগামীরা মেনে নিতে না পেরে ছবি তোলায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

ব্লক সভাপতি সুব্রতবাবু বা আব্দুল খালেক অবশ্য মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। রাস্তা সংস্কারের দাবির সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের যোগও উড়িয়েছেন তাঁরা। এই শিবিরের অভিযোগ, ‘‘যাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন, তাঁরা আসলে সিপিএমের লোক।’’ সিপিএমের ‘তত্ত্ব’ শুনিয়েছেন বিধায়ক গদাধর হাজরা। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ‘‘যাই ঘটুক না কেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বচসা হলেও তা ঠিক হয়নি।’’

প্রতিক্রিয়া জানতে কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কাজলের এক অনুগামীর দাবি, ‘‘কোনও গোষ্ঠী নয়, গ্রামের লোকজনই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’ এ দিনের বিক্ষোভে সামিল আব্দুল জুয়েল, উৎপল ধীবরদের অভিযোগ, ‘‘কাজলের অনুগামী বলে রাস্তা সংস্কারের দাবি কানেই তুলছে না প্রশাসন।’’

নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মনিজা বেগম বা নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্তা মাঝি বিতর্কে ঢুকতে চাননি। তাঁরা শুধু বলেন, ‘‘ওই রাস্তার সংস্কার আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।’’ আর গদাধর হাজরা বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি আমরা পাকা করার প্রস্তাব নিয়েছি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Nanoor TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE