ছবি: সংগৃহীত
বাড়ির লোকের লিখিত সম্মতি নিয়েই রোগীকে ভেন্টিলেটরে ঢুকিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ চব্বিশ ঘণ্টা না-কাটতেই তাঁকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের হুমকি দিতে শুরু করলেন তাঁরা!
এক জন নয়, পাশাপাশি দু’টি ভেন্টিলেটরে থাকা দু’জন রোগীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা। আত্মীয়দের হুমকি আর বিক্ষোভের সামনে পড়ে কার্যত হতবাক হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীকে চাইলেই বের করে দেওয়ার নিয়ম নেই বলে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে বেশিদিন থাকলে অনেক খরচ হয় বলে সেখানে অনেক সময় পরিজনেরা রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করার কথা বলেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এই রকম পরিস্থিতি আগে হয়েছে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের মনে পড়ছে না।
শনিবার উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি হন বছর ৬৫-র ধর্ম দাস। খাজুরবেড়িয়ার মার্শাল গ্রামের এই বাসিন্দার ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়েছিল। বাড়ির লোকের লিখিত অনুমতি নিয়েই তাঁকে সিসিইউ-৮-এ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সিসিইউ-৪-এ কয়েক দিন আগে থেকে ভর্তি ছিলেন বছর ৬৪-র প্রতিমা আদক। বাড়ি উলুবেড়িয়ার সোমদা গ্রামে। তাঁর মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার রাতে ধর্ম দাসের এন্ডো-ট্র্যাকিয়াল টিউব বদল করার দরকার পড়ে। সেই খবর বাড়ির লোককে জানতেই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকেন, যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁরা রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে চান না। রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করা হোক! তাঁদের দেখাদেখি প্রতিমাদেবীর বাড়ির লোকও একই দাবি জানাতে থাকেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সারারাত গোলমাল চলার পর রবিবার সকালে দুই বাড়ির লোক প্রায় দু’শো ছেলে নিয়ে হাজির হন এবং আইসিইউ ভেঙে রোগীদের বের করে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। ভীত চিকিৎসকেরা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্যভবনে খবর দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।
সোমবারও দফায়-দফায় রোগীপক্ষের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের সুপার সুদীপ কোনারের কথায়, ‘‘ভেন্টিলেটর বন্ধ করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর মৃত্যু হবে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী চিকিৎসকেরা তা করতে পারেন না, এই সহজ কথাটা ওঁরা বুঝছেন না!’’
ভারতীয় আইন কী বলছে? চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বের না করাই নিয়ম। সরকারি হাসপাতালে তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতালেও তা-ই। কিন্তু যেহেতু বেসরকারি হাসপাতালে খরচের বিষয়টি জড়িত, অনেক পরিবারই তা বহন করতে পারেন না। তখন তাঁদের অনুরোধে অনেক সময় আইনের ঝুঁকি নিয়েই ভেন্টিলেটর খুলে একটা স্বল্পমেয়াদি শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রেখে রোগীকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে খরচের ব্যাপার নেই। তাই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৈকত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘সরকারি হাসপাতালে একবার ভেন্টিলেটরে ঢোকালে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ভেন্টিলেটর বন্ধ করার উপায় নেই।’’ রোগীর পরিবার চাইলে তবে কী হবে? এসএসকেএম হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ আশুতোষ ঘোষের কথায়, ‘‘ভেন্টিলেটর বন্ধ করা নিয়ে চিকিৎসকেরা প্রায়শই ধর্মসংকটে পড়েন। ইন্ডিয়ান ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটি এবং অন্য বিভিন্ন সংগঠন সুসংহত একটি নির্দেশিকার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy