Advertisement
E-Paper

মঞ্চে নিতে হবে কংগ্রেসকেও, লিখিত নির্দেশ আলিমুদ্দিনের

নিয়ম রক্ষার খাতিরে যতটা মানতে হয়, ততটুকুই মানা! রাজ্যে সিপিএম আপাতত এগোতে চায় নিজস্ব পথেই।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৬

নিয়ম রক্ষার খাতিরে যতটা মানতে হয়, ততটুকুই মানা! রাজ্যে সিপিএম আপাতত এগোতে চায় নিজস্ব পথেই।

কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা দলের রাজনৈতিক লাইনের পরিপন্থী বলে পথ শোধরানোর ফরমান দিতে আলিমুদ্দিনে এসেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক ঝাঁক সদস্য। রাজ্য সিপিএমের জন্য সংশোধনী দাওয়াই হিসাবে যে নোট প্রকাশ কারাটেরা তৈরি করেছিলেন, বঙ্গ ব্রিগেডের প্রবল আপত্তির মুখে সেই বিবৃতি রাজ্য কমিটিতে বিতরণই করা হয়নি! বরং, সেই একই বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী যে নিজস্ব রিপোর্ট পেশ করেছে, সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ মঞ্চ গড়ে এগোনোর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে! যা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে, রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতির কথা বিচার করে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে পা মিলিয়েই চলতে চায় বঙ্গ সিপিএম। কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁত এখন হবে না, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই নির্দেশ তারা মেনে নিচ্ছে স্রেফ গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি মানার স্বার্থেই।

ঘটনা হল, সামনে কোনও বড় ভোট নেই। এই সুযোগে বছরদুয়েক রাস্তার লড়াইয়ে নিজের মতোই চলতে চায় আলিমুদ্দিন। তার পরে রাজ্যে আসবে পঞ্চায়েত ভোট। যেখানে যে কোনও রকম সমঝোতা স্থানীয় স্তরেই হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আন্দোলনের পথে কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্য রাখার প্রস্তাবে পলিটব্যুরোর সম্মতি আদায় করে নিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রাজ্য কমিটিতে সেই কথা জানিয়েও দিয়েছেন। আর সেই আন্দোলনের ঐক্য কী ছাঁচে হবে, তা নিজেদের হাতেই গড়ে নিচ্ছেন সূর্যবাবুরা।

রাজ্য কমিটিতে পেশ করা দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর রিপোর্টে এ বার বলা হয়েছে: ‘বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ, সংগঠন ও শক্তিগুলিকে নিয়ে বিশেষত সাধারণ মানুষের উপরে ফ্যাসিস্তসুলভ আক্রমণের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য সংগ্রামে একটি ব্যাপকতম মঞ্চ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নিতে হবে। কংগ্রেস দলকেও এই মঞ্চে সামিল করতে হবে’। আরও বলা হয়েছে, ‘বিধানসভায় বিজেপি বাদ দিয়ে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে’। গত মাসে রাজ্য কমিটির আগের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাম দলগুলির নিজস্ব কর্মসূচির পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়া হবে। কিন্তু যে বৈঠকে কারাটেরা সংশোধনী দিতে আসছেন, সেখানেই কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ মঞ্চ গড়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া আলিমুদ্দিনের তরফে ইঙ্গিতপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।

বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ভোটের শতাংশ হিসেব কমে গেলেও রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের উত্থান যে মোটেও খাটো করে দেখার বিষয় নয়, তা-ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এ বারের রিপোর্টে। তার মধ্যেও বার্তা পড়়া যাচ্ছে, বিজেপি-কে ঠেকানোর জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এখন একজোট হয়েই লড়তে হবে। আর বিধানসভার মধ্যে তাঁদের কৌশলের যে হেরফের হবে না, তা বুঝিয়ে দিয়ে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী সোমবারই বলেন, ‘‘বিধানসভার ভিতরে মানুষের দাবিতে লড়াইয়ের জন্য জোট আছে, জোটবদ্ধ ভাবেই লড়াই চলবে।’’

এরই উল্টো দিকে পলিটব্যুরোর সংশোধনী নোট বিলি না হওয়াও সিপিএম রাজনীতিতে এক ধরনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। রাজ্য কমিটির বৈঠকে রবিবার কলকাতার নেতা মানব মুখোপাধ্যায় যে কারণে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে নোট হাতে দেওয়াই হল না, শুধু এক বার শুনে তার উপরে কত মতামত দেওয়া সম্ভব! কারাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেই কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান যে মানতে হচ্ছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে পরে আবার জবাবি ভাষণে ইয়েচুরি মন্তব্য করেন, লেনিন বলেছিলেন গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠের নিপীড়ন (টির‌্যানি অফ দ্য মেজরিটি)! তবে কেন্দ্রিকতা না থাকলে দলে শুধু ‘কলরব’ই (ক্যাকোফোনি) হতো, এক সুরে বাঁধা (সিম্ফোনি) যেত না।

এই পরিস্থিতিতে পলিটব্যুরো এ দিন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁত কিছু হবে না। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যই গড়তে হবে। যদিও সেখানে কংগ্রেস নামটা নেই! পলিটব্যুরো আরও বলেছে, রাজ্য কমিটি এই মত মেনে নিয়ে সংশোধনী পদক্ষেপ করবে। কারাট শিবিরের বক্তব্য, দলের নিচু তলাতেও পলিটব্যুরোর এই বক্তব্য পৌঁছে দেওয়া হবে। আলিমুদ্দিন অবশ্য যৌথ মঞ্চের বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে!

congress cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy