Advertisement
E-Paper

দল সামলাতে আজ কী বার্তা মমতার

বিধানসভা ভোটের আগে আর পুরো এক বছরও সময় নেই। দলকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বার্তা দেওয়ার বৃহত্তম মঞ্চ আজ, মঙ্গলবারই পাচ্ছেন তিনি। ধর্মতলায় ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ এমনিতে প্রতি বছরই তৃণমূলের রাজনৈতিক পথ নির্ণয়ের বাৎসরিক মঞ্চ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি দেখতে ধর্মতলায় তৃণমূল নেত্রী। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি দেখতে ধর্মতলায় তৃণমূল নেত্রী। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বিধানসভা ভোটের আগে আর পুরো এক বছরও সময় নেই। দলকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বার্তা দেওয়ার বৃহত্তম মঞ্চ আজ, মঙ্গলবারই পাচ্ছেন তিনি। ধর্মতলায় ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ এমনিতে প্রতি বছরই তৃণমূলের রাজনৈতিক পথ নির্ণয়ের বাৎসরিক মঞ্চ। কিন্তু বিধানসভা ভোটের অনুষঙ্গের জন্যই এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১শে-র বাড়তি গুরুত্ব শাসক দলের কাছে। সম্ভবত বিরোধীদের কাছেও।

সাম্প্রতিক নানা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দেখলে বিরোধীদের চেয়ে তৃণমূল এখন বেশ কয়েক যোজন এগিয়ে! বিধানসভা তো ছিলই। পঞ্চায়েত, লোকসভা এবং সব শেষে পুরসভাতেও শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিরঙ্কুশ। তবু রাজনীতিতে অঙ্কই শেষ কথা বলে না। ভোটে জিততে জিততে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী শাসক দল রাজ্য জুড়ে নানা অন্যায়ের সঙ্গে ক্রমাগত জড়িয়ে পড়ছে, পুলিশ-প্রশাসনকে ঠুঁটো করে রেখে শাসকের প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট-রাজ থেকে দুষ্কৃতী বাহিনীর তাণ্ডব চলছে— জনমানসে এই ধারণা জাঁকিয়ে বসছে প্রতিদিন। এমতাবস্থায় বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নিজের দলকে কী ভাবে ঠিক রাস্তায় রাখার বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী, এ বারের ২১শে-র কৌতূহল তা নিয়েই।

অঙ্কের বিচারে পিছিয়ে বলেই বিরোধী শিবিরও চুপচাপ বসে নেই। তারাও চেষ্টা চালাচ্ছে অঙ্কের দূরত্ব মুছে ফেলে তৃণমূলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামনে দাঁড় করাতে। সেই লক্ষ্যেই এখন নানা স্তরে চর্চা চলছে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে বাদ দিয়ে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ে তোলার। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুযোগ নিয়েই অতীতে দীর্ঘদিন একের পর এক নির্বাচন পার করেছে ক্ষমতাসীন বামেরা। সাম্প্রতিক কিছু ভোটে সেই সুবিধা মমতাও পেয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট বিভাজন আটকাতে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভোটকে এক জায়গায় আনতে বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তোলার প্রস্তাব এসেছে দু’দলেরই একাংশের তরফে। আন্দোলনের মঞ্চে একজোট হয়ে ইতিমধ্যে সেই প্রয়াস শুরুও করেছে বিরোধীরা। এমন উদ্যোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার মোকাবিলার জন্য মমতা কী কৌশলের কথা বলেন, তৃণমূল শিবিরের নজর সে দিকেও।

মমতার সৈনিকেরা অবশ্য বলতে শুরু করেছেন, কংগ্রেস, বাম এবং বিজেপি একজোট হলেও তাঁদের হারানো সম্ভব নয়! কিন্তু প্রকাশ্যে যা-ই বলুন, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একজোট হলে (বিশেষত, সংখ্যালঘু ভোটের নিরিখে) যে বেশ কিছু জায়গায় তাঁদের আশঙ্কার কারণ আছে, তৃণমূল নেতৃত্বও জানেন। তাই ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বার্তা নিয়েই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে চাইছেন তাঁরা।

এর পাশাপাশিই অন্যান্য বারের চেয়ে এ বছরের ২১শে-র ধর্মতলার ফারাক গড়ে দিতে চলেছে দু’টি অনুপস্থিতি এবং একটি অভিষেকের কাহিনি। লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের পরে গত বছর ধর্মতলার সভাই বদলে গিয়েছিল বিজয় সমাবেশে। সে দিনও সেখানে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল তৃণমূলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের। পরের ১২ মাসে অবশ্য হুগলি নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। তৃণমূলে ব্রাত্য মুকুলের নতুন ইনিংস শুরু নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। এ বারের ২১শে-র ধর্মতলা তাই এড়িয়েই যাচ্ছেন মুকুল। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ঢাউস মঞ্চ থেকে আজ তৃণমূল নেত্রী যখন বক্তৃতা করবেন, তাঁর এক সময়ের দক্ষিণ হস্তের তখন থাকার কথা সুদূর দিল্লিতে!

মুকুল যেমন সচেতন ভাবেই দূরে থাকছেন, ঘরের কাছে থেকেও আর এক ‘ম’ অবশ্য বাধ্য হচ্ছেন দূরত্ব রাখতে! সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত মন্ত্রী মদন মিত্রকে আজ জেলবন্দি (আসলে হাসপাতাল) হয়েই কান রাখতে হবে দলনেত্রীর বার্তার দিকে! পরিস্থিতি বুঝে বিরোধী বামেরা সোমবারই পথে নেমে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যে, তিনি যদি ‘সাদা’ হন, তা হলে মন্ত্রিসভা থেকে মদনকে অপসারণ করে দেখান। কামারহাটির বিধায়কের অনুগামীরা প্রথমে তাঁদের দাদার জেলবন্দি থাকার ‘জবাবদিহি’ চেয়ে হোর্ডিং-ফেস্টুন লাগিয়ে নজর কাড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে দলনেত্রীর কুনজরে পড়তে হচ্ছে দেখে সে সব হোর্ডিং শহরের আকাশ থেকে নেমে গিয়েছে। বদলে এখন চৌরঙ্গি এবং ধর্মতলার আশপাশে শোভা পাচ্ছে ২১শে-র সভায় যোগদানের জন্য মদনের আহ্বান!


নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে অভিনেতা দেব, মুনমুন সেন, শতাব্দী রায় ও তাপস পাল।
রবিবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

ঘটনা হল, দু’রকম কারণে মুকুল-মদন দু’জনেই ছিলেন মমতার সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুকুলের হাতে ছিল একেবারে তৃণমূল স্তরে সংগঠনের রাশ। আর মদন ২১শে-র লোক জোগাতেন। দু’জনের অনুপস্থিতিতেই এ বার বাড়তি নজর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। বিধানসভা ভোটের আগে জনস্রোতে ধর্মতলা ভাসিয়ে দিতে এ বার বাড়তি পরিশ্রম করেছেন অভিষেকই। সংসদের অধিবেশন উপলক্ষে মমতা এ দিন যখন নবান্নে দলীয় সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করছেন, ‘যুবরাজ’কে তখন দেখা গিয়েছে সল্টলেক স্টেডিয়ামে ২১শে-র জন্য হাজির হওয়া তৃণমূল জনতার জন্য ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধান করতে। যা থেকে ইঙ্গিত মিলছে, দলীয় সংগঠনই এখন যুব সভাপতির কাছে অগ্রাধিকার।

কী হতে পারে আজ মমতার বার্তা? বিধানসভা ভোটে সব বিরোধীকে পর্যুদস্ত করার ডাক এবং বিজেপি-র সঙ্গে হালফিল সমঝোতার ধারণাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা যে তিনি চালাবেন, তা প্রত্যাশিতই। কখনও সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ, কখনও বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় প্রতারিতদের সঙ্গে নিয়ে শাসকের উপরে চাপ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধীরা। তৃণমূল শিবিরের আশা, বিরোধীদের এই যাবতীয় উদ্যোগেরই জবাব দেওয়া হবে আজ। সেই সঙ্গেই দলের এক প্রথম সারির নেতা বলছেন, ‘‘তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন তৃণমূলই! প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় দলেরই একাংশের কাজকর্মের জন্য দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। দলের পতাকা ব্যবহার করে কেউ কেউ বিশৃঙ্খলায় জড়াচ্ছে। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বও সমস্যা তৈরি করছে। ভাবমূর্তি ঠিক রাখা এবং ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তাই ২১শে-র মঞ্চ থেকে দেবেন দলনেত্রী।’’ প্রতি বারই ২১শে-র মঞ্চে বিরোধী শিবির থেকে কাউকে না কাউকে যোগদান করানোর ‘পরম্পরা’ চলছে আজকাল। আজও বিরোধী শিবির থেকে কারা মঞ্চে ওঠেন, নজর থাকছে সে দিকেও।

বিরোধীরাও প্রস্তুত হচ্ছে শাসক দলের বার্তা বুঝে নিয়ে তার মোকাবিলার জন্য। যে কারণে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘ময়দানে নেমে কাল উনি (মমতা) কী বলেন, দেখব আমরা।’’ আর মমতার উপরে চাপ বাড়াতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘রাজ্যে নারী, শিশু, শিক্ষক, পুলিশ— কেউ নিরাপদ নন। আর মুখ্যমন্ত্রী শহিদের মৃত্যুকে সামনে রেখে ফের মানুষের আবেগ জেতার চেষ্টা করছেন!’’

মমতাও জানেন, যত বেশি মানুষ, ততই তাঁর স্বস্তি! ২১শে-র আগের দিন টুইটে তাই তাঁর আহ্বান, ‘মা-মাটি-মানুষ দিবসে সবাই আসুন’। ধর্মতলায় এ দিন সন্ধ্যায় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখতে এসেও তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘২১শে জুলাই একটা ফেনোমেনা! যে জনস্রোত আসে, তাতে ১০টা ব্রিগেড ভরে যাওয়ার কথা! কিন্তু ঘটনাটা এখানেই ঘটেছিল (মহাকরণ অভিযানে পুলিশের গুলিচালনা) বলে আমরা ঘটনাস্থল বদলাতে পারছি না।’’ চেনা মঞ্চ থেকেই কি আজ ঘর গোছানোর কড়া বার্তা আসবে? অপেক্ষায় তৃণমূল শিবির!

mamata messages control tmc control party eyes mamata delivered 21se july 21st july 21st july rally victoria house 21st july gathering 21st july stage mamata speech abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy