Advertisement
১৭ মে ২০২৪

সরকারি অনুষ্ঠানে সব সচিবকে হাজিরার বার্তা

অনুরোধের আড়ালে নির্দেশ। এবং তা পালন করতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। একান্তই তা না পারলে শীর্ষ কর্তাদের জানিয়ে দিতে হবে, কেন পারলেন না।সরকারি অনুষ্ঠানে হাজিরা নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য সব দফতরের সচিবদের কাছে মৌখিক ভাবে বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

অনুরোধের আড়ালে নির্দেশ। এবং তা পালন করতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। একান্তই তা না পারলে শীর্ষ কর্তাদের জানিয়ে দিতে হবে, কেন পারলেন না।

সরকারি অনুষ্ঠানে হাজিরা নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য সব দফতরের সচিবদের কাছে মৌখিক ভাবে বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব। আর তার পরেই প্রশাসনের কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে, মুখে অনুরোধ বলা হলেও সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য এমন ফতোয়া দিতে পারে কি সরকার?

এই বিতর্কে না ঢুকেও প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের একাংশ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটাই চান। তাই সরকারি অনুষ্ঠানে সব দফতরের সচিবদের হাজির থাকতে হবে। একাধিক সচিব অবশ্য মনে করেন, সরকার কোনও নির্দেশ দিতেই পারে। কিন্তু তা গুরুত্ব বুঝে দেওয়া উচিত। অনুষ্ঠানে সচিবদের হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া কোনও প্রশাসনের অগ্রাধিকার হতে পারে না।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ মে। ক্যাথিড্রাল রোডে সরকারের রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলছে। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে হাজির থাকার জন্য নিয়ম মেনে সব সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন দেখা যায়, তথ্যসচিব ছাড়া জনা দুয়েক সচিব সেখানে গিয়েছেন। ছুটির দিনে বাকিরা সে পথ আর মাড়াননি। ছিলেন না মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবও। এতেই চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, সরকারি অনুষ্ঠানে সচিবরা না এলে সামনের সারির আসন ফাঁকা পড়ে থাকে এবং তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ বলেই মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘটনার পরেই মুখ্যসচিবের অনুরোধের আড়ালে হাজিরার নির্দেশ। এ-ও জানানো হয়েছে, একান্তই কোনও সচিব অনুপস্থিত থাকলে দর্শকাসনের একেবারে প্রথম সারিতে সচিবদের জন্য নির্দিষ্ট আসনে থাকতে হবে ওই দফতরে গুরুত্ব অনুযায়ী পরের স্থানে থাকা কোনও সচিবকে।

এবং এই ‘নির্দেশ’ মেনে সম্প্রতি রাজভবনে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং উজ্জ্বল বিশ্বাসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় সব সচিব। আজ, শনিবার রাজ্যের বঙ্গ সম্মান অনুষ্ঠানে সব দফতরের সচিবকে হাজির থাকতে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তা না হলে জবাবদিহি করতে হবে নবান্নের শীর্ষ মহলে।

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে সব সচিবের কাছে নিমন্ত্রণপত্র যায়। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ সচিবই অংশ নেন। কিন্তু রবীন্দ্রজয়ন্তী, খেলরত্ন, চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা কিংবা বঙ্গসম্মানের মতো অনেক সরকারি অনুষ্ঠান হয়, যেটা প্রশাসনিক দিক থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। কার্যত সংশ্লিষ্ট দফতর ছাড়া অন্য দফতরের সচিবদের সেখানে তেমন ভূমিকাও থাকে না। তাই অনেকেই এড়িয়ে যান।’’ একই সঙ্গে ওই কর্তার মন্তব্য, ‘‘কিন্তু এখন আর তা করা যাবে না। পরের বছর থেকে রবীন্দ্রজয়ন্তীতেও যেতে হবে।’’

এই আমলে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে একাধিক দফতরের সচিব তাঁর সঙ্গী হন। জেলায় জেলায় উন্নয়নের বৈঠকে তাঁরা হাজির থাকেন। এ বার সেই ছবিটাই মুখ্যমন্ত্রীর সব অনুষ্ঠানে দেখা যাবে বলে মনে করছে নবান্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Secretaries Government program Chief Secretary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE