চেষ্টা হয়েছে অনেক। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো ও ভাবমূর্তির প্রশ্ন তুলে বিনিয়োগকারীরা তেমন সাড়া দেননি। এ বার তাই কৌশল বদলে দু’দিনের শিল্প সম্মেলনে আটকে থাকছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তারা ঠিক করেছে, বিনিয়োগ টানার দৌড় চলবে বছরভর। এবং সাবেক নিয়মে একা শিল্প দফতর নয়, লগ্নি-দৌড়ে সামিল হবে রাজ্য সরকারের সব দফতরই। এ জন্য দফতরের সচিবদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরাই সরকারের ‘লগ্নি-দূত’ হিসেবে বছরভর কাজ করবেন।
নতুন এই ভাবনার কথা জানাতে শনিবারই মধ্য কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে গুরুত্বপূর্ণ সচিবদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্যের নতুন শিল্পসচিব রাজীব সিংহ। সেখানেই তিনি অনুরোধ করেছেন, ‘‘যে কোনও ধরনের লগ্নি টানতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেশে হোক বা বিদেশে, নিজেদের উদ্যোগে ‘রোড-শো’ করুন। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট বা বিজিবিএস দু’দিনের সম্মেলনে আটতে থাকবে না। বরং শিল্পপতিদের সেই কেন্দ্রীয় সমাবেশ সারা বছরের লগ্নি টানার জানলা হিসেবে কাজ করুক।’’
আরও পড়ুন: মোদী কী করেন! কটাক্ষ রাহুলের
শিল্পে খরার রাজ্যে লগ্নি টানার এমন নতুন ভাবনায় অবশ্য দেখা যাচ্ছে না শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও তিনি হাজির ছিলেন না। সচিবদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, অতীতে শিল্প সম্মেলন সংক্রান্ত যে কোনও প্রস্তুতি বৈঠকে শিল্পমন্ত্রীর ভূমিকা ছিল কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো। এ বার তিনি অসুস্থ বলে বৈঠকে যেতে পারেননি। বস্তুত, আগে সপ্তাহ দুয়েক তিনি অফিস করতে পারেননি। তা ছাড়া রবিবার দিল্লিতে তাঁর নীতি আয়োগের বৈঠকে যাওয়ার কথা।
বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী থাকুন বা না থাকুন, রাজ্যের শিল্পে লগ্নির চেহারা যে বেশ খারাপ— তা ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পলিসি অ্যান্ড প্রমোশন (ডিআইপিপি)-র সাম্প্রতিক তথ্যেই স্পষ্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ থেকে ২০১৬, এই পাঁচ বছরে ৩৬৭টি সংস্থা ৩৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা লগ্নির লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। তার মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ১৬১টি প্রকল্পে ১১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। বছরে যার গড় ২৩২১ কোটি।
বেহাল বিনিয়োগ
সাল মউ স্বাক্ষর প্রকল্প প্রস্তাব পেশ বাস্তবায়িত
টাকা ক’টি টাকা ক’টি টাকা
২০১৫ ২,৪৩,০০০ ৬৭ ১৭,৬১৫ ২৬ ৯৮৩
২০১৬ ২,৫০,০০০ ৬২ ৫২০৪ ৩৪ ৩৪৩৩
২০১৭ ২,৩৭,০০০ ০৯ ৮২৪* ০৩ ৫৭**
* বিনিয়োগ অঙ্ক কোটিতে | ** ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান | সূত্র: ডিআইপিপি
এক শিল্প কর্তার কথায়, ‘‘গত ছ’বছরে সাত জন শিল্পসচিব বদলেছে, মন্ত্রীও পরিবর্তন হয়েছে এক বার। কিন্তু লগ্নির রুগ্ন দশা কাটেনি। সেই কারণেই এ বার বিনিয়োগ টানার ভার শিল্প দফতর আর একা নিজের কাঁধে রাখতে চাইছে না।’’
বৈঠক শেষে শিল্পসচিব বলেন, ‘‘শিল্প আনার কাজ শুধু শিল্প দফতরের, এই ধারণা থেকে বেরোতে হবে। সমস্ত দফতরকে লগ্নি আনতে হবে। পাশাপাশি, রাজ্যের সমস্ত বণিকসভাকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’’ এ দিন বণিকসভাগুলিকে কলকাতায় বছরে একটি জাতীয় ও একটি আন্তর্জাতিক স্তরের শিল্প সম্মেলন করার অনুরোধও করেন সচিব।
এক শিল্প কর্তার বক্তব্য, এ রাজ্যে বড় শিল্প যে সহজে হবে না, তা এখন বুঝতে পারছেন বর্তমান সরকারের কর্তারাও। সে কারণেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে এখন জোর দেওয়া হচ্ছে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপরে। বস্তুত রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই জমি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে নীতি নিয়েছে, তাতে শিল্পগোষ্ঠীর পক্ষে একলপ্তে বড় জমি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার সরকারি জমি ব্যাঙ্কের কথা বলা হলেও সেখানে এক লপ্তে বড় জমি মেলে না। পাশাপাশি সমস্যা আছে পরিকাঠামোরও। আর এই সব মিলিয়েই একাধিক বড় শিল্পসংস্থা কথা দিয়েও পিছিয়ে গিয়েছে বলে গত কয়েক বছরে বারবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা কম। এই ধরনের শিল্পের ক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ যেমন বেশি নয়, তেমনই জমি সমস্যাও তুলনায় অনেক কম। তা ছাড়া, ছোট ও মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থানও বেশি হয়। গত কয়েক বছরে রাজ্য ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়েছে বলেও দাবি সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy