Advertisement
E-Paper

পড়ানোর আগে ভালবাসার ক্লাস করুন শিক্ষক

শনিবার ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহালি ভিডিওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পরে রবিবার দিনভর তা ঘুরেছে মোবাইল থেকে মোবাইলে। এক মহিলাকণ্ঠের ধমকের সামনে ‘ওয়ান-টু-থ্রি...’ আওড়াতে আওড়াতে নেতিয়ে পড়ছে বছর চারেকের একটা বাচ্চা।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৩৩
আনন্দ-পাঠ: ‘জয়জয়ন্তী’ ছবির দৃশ্য।

আনন্দ-পাঠ: ‘জয়জয়ন্তী’ ছবির দৃশ্য।

ছাত্র পড়াবেন, সে তো ভাল কথা। কিন্তু ভালবেসে পড়াতে পারেন তো?

মানসিক ও দৈহিক শাস্তি না দিয়ে কী ভাবে পড়াতে হয়, তার জন্য রাজ্যের স্কুলশিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিলই। তাতেই এ বার ‘ভালবাসার ছোঁয়া’ দিতে চায় রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। পড়ুয়াদের প্রতি ভালবাসাই যে শিক্ষাদানের প্রধান পথ— ওই প্রশিক্ষণের আওতাতেই রাজ্য সরাসরি তা শেখাতে চায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

শনিবার ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহালি ভিডিওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পরে রবিবার দিনভর তা ঘুরেছে মোবাইল থেকে মোবাইলে। এক মহিলাকণ্ঠের ধমকের সামনে ‘ওয়ান-টু-থ্রি...’ আওড়াতে আওড়াতে নেতিয়ে পড়ছে বছর চারেকের একটা বাচ্চা। কখনও সে চিৎকার করে কাঁদছে, কখনও হাতজোড় করে বলছে, ‘আপ পেয়ারসে পড়াইয়ে...।’ সেই ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। তাঁরা ঠিক করেছেন, ভালবেসে পড়াতে শেখার বিষয়টিতেও এ বার থেকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দফতরের এক কর্তা জানান, এই ধরনের আরও ভিডিও সংগ্রহ করে এ বার শিক্ষকদের দেখানো হবে। তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হবে। এক কথায়, ভালবেসে কী করে পড়াতে হয়, তা হাতে-কলমে শেখানো শুরু হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ওই কর্তা জানান, বিএড এবং ডিএলএড প্রশিক্ষণ থাকা শিক্ষকদের মধ্যেও অনেক সময়েই পড়ানোর ক্ষেত্রে ভালবাসার অভাব স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই এই উদ্যোগ।

আরও পড়ুন: ‘বোকো না আমায়, একটু ভালবেসে পড়াও!’

দফতর সূত্রের খবর, এখন প্রতিটি জেলার বাছাই করা দশ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কলকাতার বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঁচ দিন ধরে চলে এই প্রশিক্ষণ পর্ব। তাঁদের মাধ্যমেই শিক্ষাদানের পদ্ধতি পৌঁছে যায় প্রতিটি স্কুলে। প্রশিক্ষণ দেন স্কুলশিক্ষা দফতর, পাঠ্যক্রম কমিটি এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের প্রতিনিধিরা। এই প্রশিক্ষণের ট্যাগলাইন— ‘আনন্দময় শিক্ষা’। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘শিক্ষকদের স্পষ্ট জানানো হয়েছে, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী কোনও ভাবেই পড়ুয়াদের মানসিক ও দৈহিক শাস্তি দেওয়া যাবে না।’’ তিনি জানান, শিক্ষকদের এ বার শেখানো হবে, পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতে গেলে ভালবাসার প্রয়োজন। সেই কারণে শুধু প্রশিক্ষণ শিবিরে নয়, প্রয়োজনে জেলায় জেলায় স্কুলে গিয়ে শিক্ষার সঙ্গে ভালবাসার এই সম্পর্ক বোঝানো হবে।

ওই ভিডিওর বাচ্চাটিকে গৃহশিক্ষিকা নাকি অভিভাবক— কে পড়াচ্ছিলেন তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই শুধু শিক্ষকেরা নন, অভিভাবকদেরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তার। দফতরের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভালবেসে শিক্ষকতা করার আদর্শ আমাদের এমনিতেই রয়েছে। এর জন্য নতুন করে প্রশিক্ষণ বা সার্কুলারের প্রয়োজন হয় না। আদর্শটি সকলে মেনে চললেই সমস্যা মিটে যায়।’’ তবে মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই উদ্যোগ খুবই ভাল। ভালবাসার পাশাপাশি উৎসাহও দেওয়া প্রয়োজন। এবং পড়ুয়ারা যেন ইতিবাচক দিকে চালিত হয়, সেটাও দেখা দরকার শিক্ষকদের।’’

teachers Class Students Study Fear শিক্ষক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy