Advertisement
E-Paper

বাঁচতে গিয়ে ঘটিবাটি বিক্রি

বাঁচার জন্য দিতে হবে লাইন। তা না দিলে কী হবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজারসরকারি হাসপাতালে ঠাঁই নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে গেলে ঘটিবাটি বিক্রি হওয়ার ভয়।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০৪:০৫
পঙ্কজ রাউত। অস্ত্রোপচার-রেডিয়োথেরাপির আগে (ইনসেটে) এবং পরে। নিজস্ব চিত্র

পঙ্কজ রাউত। অস্ত্রোপচার-রেডিয়োথেরাপির আগে (ইনসেটে) এবং পরে। নিজস্ব চিত্র

এ যেন শাঁখের করাত!

সরকারি হাসপাতালে ঠাঁই নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে গেলে ঘটিবাটি বিক্রি হওয়ার ভয়।

বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে খোঁজ নিলেই জানা যায়, সেখানে আইসিইউ, আইটিইউ এবং ভেন্টিলেশনে ঠাঁই পাওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ লাইন। আর সেই লাইনের বড় অংশই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফেরত আসা রোগী। যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে করাতে কার্যত নিঃস্ব হয়ে যান। তার পরে কোনও মতে সরকারিতে একটা শয্যা জোটানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন।

মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত বছর ছত্রিশের পঙ্কজ রাউতকে অস্ত্রোপচারের জন্য মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের দিন মেলে তিন মাস পরে। কলকাতায় ফিরে আসেন পঙ্কজের পরিবার। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে রেডিয়োথেরাপির জন্য পঙ্কজ চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে যান। তবে রেডিয়োথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পঙ্কজের গাল এবং গলার কিছুটা অংশ বিকৃত হয়ে যায়। পঙ্কজের স্ত্রী নীলমের আক্ষেপ, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। কিন্তু রেডিয়োথেরাপির পরে ওঁর মুখটাই অনেকটা বদলে গেল।’’

পঙ্কজের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর পরিবার। ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। নীলমের দাবি, ‘‘চিকিৎসক আশ্বাস দিয়েছিলেন, প্লাস্টিক সার্জারিতে সমস্যা মিটে যাবে।’’ চিকিৎসার খরচ পড়ে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে পঙ্কজের ঠোঁট ঝুলে যায়, গলার মাংসের একাংশ পচতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা জানান, প্লাস্টিক সার্জারিতে সংক্রমণের জেরেই এই সমস্যা।

নিলমের অভিযোগ, ‘‘ওই বেসরকারি হাসপাতাল ভুল প্লাস্টিক সার্জারি করেছে। আইনি পদক্ষেপ করব।’’ এরপরে এসএসকেএমে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। তত দিনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ হয় ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হননি পঙ্কজ। স্বামীর অসুস্থতার পরে সংসার চালাতে এখন একটি স্কুলে কাজ নিয়েছেন নীলম। সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে এখন স্বামীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় তিনি।

সরকারি হাসপাতালে শয্যার খোঁজ করতে থাকা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে চলতি মাসেই। পরিবারের আক্ষেপ, সামান্য হজমের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েও সুস্থ করানো যায়নি। খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। ওই পরিবার জানিয়েছে, গত ১০ মে রানাঘাটের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ কর্মকার ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ছেলে ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘সর্বস্বান্ত হয়েও তাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার মধ্যেই সব শেষ!’’

বেসরকারি হাসপাতালের বিলে টাকার অঙ্ক এবং তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন বহুদিনের। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সহ-সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে বিলের স্বচ্ছতা আনতে প্রত্যেকটি খাতে খরচের বিবরণ বিলে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। তার পরেও প্রতিটি বিল অডিট করা হয়। এর পরেও বিল নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে, উত্তর দিতে প্রতিটি হাসপাতালে একটি ‘সেল’ রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, অনেক সময়ই রোগীর চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ। দীর্ঘদিন সিসিউ বা আইসিইউ-তে রাখতে খরচ বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেন এই খরচ বাড়ছে, রোগীর পরিজনদের সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার দিকে গুরুত্ব
দেওয়া হচ্ছে।’’

এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কী? বেসরকারি হাসপাতালগুলির খরচে নিয়ন্ত্রণ আনতে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার। তার পরেও পরিস্থিতি কতটা বদলেছে? কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম রায়কে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।

(শেষ)

Government Hospital Medical Negligence সরকারি হাসপাতাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy