Advertisement
E-Paper

ওটিতে বিদ্যুৎ নেই, প্রাণ গেল শিশুর

রাজ্যের অন্যতম নামী সরকারি হাসপাতাল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস’-এর তরফে একটি সার্জারি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে নীলরতনের পেডিয়াট্রিক সার্জেনদের সঙ্গে ভিন্‌ রাজ্যের কয়েক জন সার্জন মিলে মোট ৫টি শিশুর অস্ত্রোপচার করেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৩
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ছ’ মাসের ছোট্ট মেয়ে আর বছর দু’য়েকের একরত্তি ছেলে বাঁচতে চেয়েছিল। লড়াই চালাচ্ছিল। কিন্তু প্রায় ২৫ মিনিটের বিদ্যুৎবিভ্রাট সেই চেষ্টাকে গাঢ় অন্ধকারে ঠেলে দেবে সেটা ভাবতে পারেননি প্রিয়জনেরা। ভাবেননি চিকিৎসকেরাও।

রাজ্যের অন্যতম নামী সরকারি হাসপাতাল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস’-এর তরফে একটি সার্জারি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে নীলরতনের পেডিয়াট্রিক সার্জেনদের সঙ্গে ভিন্‌ রাজ্যের কয়েক জন সার্জন মিলে মোট ৫টি শিশুর অস্ত্রোপচার করেন। গুরুতর অসুস্থ ছ’মাসের মেয়ে আর দু’বছরের ছেলের খাদ্যনালী পুনর্গঠনের অস্ত্রোপচার চলার সময় প্রায় ২৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়। অস্ত্রোপচার মাঝপথে আটকে যায়। ‘অ্যানেস্থেটিক ব্রিদিং ব্যাগ’ হাতে টিপে যেতে হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচারের পরেই মৃত্যু হয় ৬ মাসের শিশুটির। ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে ২ বছরের অন্য শিশুটি। চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, তার সারা শরীরে সেপসিস ছড়িয়ে পড়েছে। বাঁচার আশা ক্ষীণ। নীলরতনের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সৌমিত্র বিশ্বাসের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা দু’টোকে ভাল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হিতে বিপরীত হল। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে অপারেশন টেবিলের সামনে ২০-২৫ মিনিট চুপ করে অন্ধকারে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা। ওই সময়টুকুর ভিতরেই বাচ্চা দু’টির যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছিল।’’

এই ঘটনা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচারের সময় প্রয়োজনীয় ‘পাওয়ার ব্যাক আপ’ কেন থাকবে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ২০ তারিখ ওই সময় আরও কিছু অস্ত্রোপচার আটকে গিয়ে আরও রোগীদের জীবনসঙ্কট হতে পারত। সরকার যখন স্বাস্থ্যে এত টাকা খরচ করছে, তখন অস্ত্রোপচার চলাকালীন জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখতে সমস্যা কোথায়? নীলরতন কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘প্রতিটি আইসিইউ-তে জেনারেটর রয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি ঠিক নয়।’’

তা হলে ২০ তারিখ পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের ওটিতে সেই জেনারেটর চালানো হয়নি কেন? কর্তৃপক্ষের উত্তর, ‘‘জেনারেটর চলেছে কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।’’ কিন্তু সৌমিত্র বিশ্বাস, কৌশিক সাহার মতো একাধিক পেডিয়াট্রিক সার্জন দাবি করেছেন, ‘‘আইসিইউ-তে জেনারেটর থাকা আর ওটি-র জন্য জেনারেটর মজুত রাখা তো এক নয়। পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে ওটির জন্য মাস কয়েক আগে একটি জেনারেটর এসেছে। এখনও সেটি চালু করা হয়নি।’’ সৌমিত্রবাবুর কথায়, ‘‘জেনারেটর আছে বলেই আমার জানা নেই।’’ প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল পরিচালনায় সমন্বয়ের অভাব নিয়েও। হাসপাতালের কোথায় জেনারেটর রয়েছে, তার মধ্যে কোনটা চালু, বিদ্যুৎবিভ্রাট হলে তৎক্ষণাৎ জেনারেটর চালানোর দায়িত্ব কার—সে সম্পর্কে কারও কাছে কোনও তথ্য নেই। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, বিদ্যুৎবিভ্রাট হয়ে একটি শিশুর মৃত্যু এবং অপর শিশুর সঙ্কটজনক অবস্থার খবর হাসপাতাল থেকে কেউ তাঁকে জানাননি। গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছেন তিনি।

Health Medical Negligence Nil Ratan Sircar Medical College and Hospital NRS নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy