Advertisement
E-Paper

নেতাদের তোলাবাজি, ছাড় নয় ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারকে

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা চাওয়ার অভিযোগ শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নয়। তেমনই অভিযোগ নিয়ে এ বার তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত এক বধূর বাবা। মেয়ের চিকিৎসার স্বার্থে টাকা ফেরত চান তিনি।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৬

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা চাওয়ার অভিযোগ শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নয়। তেমনই অভিযোগ নিয়ে এ বার তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত এক বধূর বাবা। মেয়ের চিকিৎসার স্বার্থে টাকা ফেরত চান তিনি।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের রাজারবাগান এলাকার বাসিন্দা বছর বত্রিশের পিঙ্কি বিবির চিকিৎসা চলছে বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে। জরায়ুর ক্যানসারে দেড় বছর ধরে ভুগছেন তিনি। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে পিঙ্কিকে বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁর বাবা বদিরুদ্দিন সাহার কাছ থেকে এলাকার দুই তৃণমূল বুথ সভাপতি জোর করে ২৫ হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ।

পরিবারটির দাবি, এ ব্যাপারে তৃণমূলের পাঁচখুরি-২ অঞ্চল সভাপতি সেলিম মল্লিকের দ্বারস্থ হয়ে ফল পাননি তারা। তিনি অভিযোগই নেননি। তখন তাঁরা আবেদন করে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, শীঘ্রই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা না পেয়ে পিঙ্কির বাবা ২৩ জুন সরাসরি তৃণমূলের জেলা সভাপতি, জেলা কার্যকরী সভাপতিদের চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তাঁর আর্জি, ‘আমার মেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিত্‌সা করাতে পারছি না। ২৫ হাজার টাকা ফেরত পেলে মেয়ের চিকিত্‌সায় খরচ করব’।

তৃণমূলের অভিযুক্ত দুই বুথ সভাপতি—নবি খান এবং নজরুল গুড়া অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। নজরুলের বক্তব্য, “কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি।” নবিরও একই সুর। তবে তিনি বলেন, “এ রকম একটা সমস্যার কথা শুনেছিলাম। মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি গনি ইসমাইল মল্লিককে দলের কেউ টাকা নিয়েছে কি না, দেখতে বলা হয়েছিল।” সমস্যা যে একটা হয়েছে, তা মানছেন গনিও। তবে তাঁর দাবি, “সব সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি।” আর অঞ্চল সভাপতির বক্তব্য, তাঁর কাছে
কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ
জানায়নি।

কিন্তু ‘সমস্যা’টা কী? ব্লক থেকে জেলা—তৃণমূলের সব স্তরের নেতাদের মুখে কুলুপ। এমনকী, জেলা নেতাদের দাবি, বদিরুদ্দিনের অভিযোগপত্রও তাঁরা পাননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “ঘটনাটা শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।” দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষও বলেন, “বিশদ জানি না। তবে এমন ঘটে থাকলে দল ব্যবস্থা নেবে।” তৃণমূলের এক জেলা নেতা অবশ্য মানছেন, “গরিব মানুষের মাথার উপরে একটা ছাদের ব্যবস্থা করে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচেষ্ট। অথচ, কিছু লোকের এমন কাজে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।”

গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনা, আমার বাড়ি, গীতাঞ্জলি-সহ নানা প্রকল্প রয়েছে। গৃহহীন বিপিএল পরিবারের জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়িপিছু বরাদ্দ হয় ৭০ হাজার টাকা। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ ভাবে টাকা বরাদ্দ করে। এই সব প্রকল্পে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ সেই বাম আমল থেকেই উঠছে। এখন অভিযোগ, উপভোক্তা তালিকায় নাম তুলতে আগাম টাকা নিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কোথাও আবার প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরে একটা অংশ নেতাদের দিতে হচ্ছে। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক নাজমুল হকের কটাক্ষ, “টাকা ছাড়া তৃণমূলের আমলে কোনও কাজ
হচ্ছে না! তোলাবাজিটা
ওদের মজ্জাগত।”

রাজারবাগানের বাসিন্দা পেশায় বিড়ি শ্রমিক বদিরুদ্দিনের দাবি, “নবি-নজরুলরা আমাকে বলেছিল, ৩০ হাজার টাকা দিলেই মেয়ের নাম পঞ্চায়েতের কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। ও বাড়ি পেয়ে যাবে। ওরা চাপাচাপি করায় মাসখানেক আগে অনেক কষ্ট করে ২৫ হাজার টাকা দিই।’’ ওই বিড়ি শ্রমিকের দাবি, তিনি নিরক্ষর। তাই ভেবেছিলেন, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে মেয়ের নামে বাড়ি পেতে তৃণমূল নেতাদের আগাম টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পরে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারেন, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেতে শাসক দলের কাউকে টাকা দিতে হয় না। তারপরেই ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বদিরুদ্দিন।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগে ব্লক কমিটির বৈঠকে নবি এবং নজরুলকে ভর্ত্‌সনা করা হয়। বদিরুদ্দিনকে টাকা ফেরতের দায়িত্ব দেওয়া হয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি গনিকে। কিন্তু টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেননি গনি। এর পরেই তৃণমূলের জেলা নেতাদের চিঠি দেন বদিরুদ্দিন।

পিঙ্কির শ্বশুরবাড়িও রাজারবাগানে। স্বামী সাহারাফুল মণ্ডলও বিড়ি শ্রমিক। দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এখন বেঙ্গালুরুতেই আছেন সাহারাফুল। ফোনে বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে টাকাটা জোগাড় করা হয়েছিল। এখন ফেরত পেলে স্ত্রী-র চিকিৎসায় অনেকটা সুবিধা হয়।”

Trinamool BJP Congress Medinipur Rajarbagan Computer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy