Advertisement
E-Paper

‘রাজ্য-প্রাণী’র তকমা পেয়েও উদ্বাস্তু বাঘরোল

বাঘরোল মানে মেছো বেড়াল। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য-প্রাণীর তকমা জুটলেও তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে সরকারি স্তরে চিন্তাভাবনা কতটা করা হচ্ছে, আদৌ করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে বারে বারেই।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩০

জলার জ্যান্ত মাছ খেতে ভালবাসে তারা। তা বলে সব থেকে বুদ্ধিমান প্রাণীর দাবিদারেরা তাদের চোর বদনাম দেবে! সেটাও না-হয় মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু দিনের পর দিন যে-ভাবে খড়িবন, জলাজমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজবে কোথায়— ভেবেই আকুল বাঘরোলের দল!

বাঘরোল মানে মেছো বেড়াল। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য-প্রাণীর তকমা জুটলেও তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে সরকারি স্তরে চিন্তাভাবনা কতটা করা হচ্ছে, আদৌ করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে বারে বারেই। এই প্রাণীদের সঙ্কট নিয়ে গবেষণা করছেন রাজ্যেরই কিছু গবেষক।
আর সেই গবেষণাতেই উঠে এসেছে মেছো বেড়ালের আস্তানা খোয়ানো এবং অপবাদের ব্যথাযন্ত্রণার বারোমাস্যা।

‘দ্য ফিশিং ক্যাট’ নামে ওই প্রকল্পের সঙ্গে প্রধান গবেষক তিয়াষা আঢ্য জানাচ্ছেন, ক্যামেরা দেখাচ্ছে, গভীর রাতে জলা থেকে জাল দিয়ে মাছ চুরি করছে গ্রামেরই লোক। কিন্তু মাছের ঘাটতি হলে মেছো বেড়ালদের উপরে সেই রাগ ফলাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। ক্যামেরা-ফাঁদ পাতা হয়েছে বুঝতে পেরে তার মেমরি কার্ড খুলে নিয়েছে মাছচোরেরা। ক্যামেরা রাখার কাজে যুক্ত সুব্রত মাইতি নামে হাওড়া জয়পুরের এক যুবক জানান, মাছচোরেদের ছবি যে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, তা জানাতেই এলাকার কয়েক জন রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল তাঁদের উপরে।

তিয়াষার কথায়, ‘‘কোনও প্রাণী নিজের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ খাবার খেতে পারে। সেই হিসেবে একটা বাঘরোল এক দিনে খুব বেশি মাছ খেতে পারে না। তার উপরে বাঘরোলের বিষ্ঠা পরীক্ষা করে প্রচুর মেঠো ইদুরের দাঁত মিলেছে। ফলে ওরা যে মাছের সঙ্গে সঙ্গে মেঠো ইদুরও খাচ্ছে, সেটা প্রমাণিত।’’ অনেক গবেষক বলছেন, বাঘরোল নিয়ে গ্রামবাসীদের ভুল ধারণা রয়েছে। তাই সহজেই ওদের উপরে মাছ চুরির দোষ চাপিয়ে দেওয়া যায়।

ওই প্রকল্পের অন্যতম গবেষক প্রিয়াঙ্কা দাস জানান, হাওড়া এবং লাগোয়া হুগলিতে মূলত জলাজমির খড়িবনেই বাঘরোলের বাড়ি। পানের বরজে ব্যবহারের জন্যই খড়িগাছের চাষ এই এলাকায় জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু পান চাষ মার খাওয়ায় চাহিদা কমেছে খড়ির। ফলে কোপ পড়ছে মেছোদের আস্তানায়। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে প্রিয়াঙ্কারা জেনেছেন, পানের দাম তাঁরা সে-ভাবে পান না। তার উপরে প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশে পান রফতানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে ব্যবসা ধুঁকছে। বাঘরোল বাঁচাতে তাই পান ও খড়ি চাষের পুনরুজ্জীবনও দাবি করছেন তিয়াষারা। হাওড়ার পাঁচলা এলাকার জীববৈচিত্র কমিটির সদস্য ইন্দ্রজি‌ৎ আদক জানান, খড়িবনের পাশাপাশি হোগলা বন এবং নিচু জলাজমিতেও বাসা বাঁধে মেছো বেড়াল। কিন্তু জলাজমিতে যে-ভাবে প্রোমোটিং চলছে এবং বিভিন্ন কারখানা গজিয়ে উঠছে, তাতে ওদের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে। তাঁর দাবি, পাঁচলা, দেউলপুরে বাঘরোল বা মেছো বেড়ালের সংখ্যা বেশ ভালই। কিন্তু বাসস্থান নষ্ট হতে থাকলে এই সংখ্যাটা ধরে রাখা যাবে না।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য-প্রাণীর তকমা পাওয়া এই বাঘের মাসিদের সংরক্ষণের দাবি তুলছেন গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা। রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদ কী বলছে? পর্ষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্য-প্রাণীর সংখ্যা আদতে কত, সেই তথ্য তাদের হাতে নেই। এত দিন পরেও এই তথ্য না-থাকা যে বিষম লজ্জার, সেটাও ঠারেঠোরে মেনে নেওয়া হয়েছে ওই সূত্রে। এই নিয়ে নাড়াচা়ড়া শুরু হওয়ায় নড়ে বসেছে পর্ষদ। বাঘরোল সমীক্ষা শুরু করবে তারা। সেই কাজ কিছুটা এগিয়েছে বলেও পর্ষদ সূত্রের খবর।

Fishing Cat বাঘরোল মেছো বেড়াল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy