প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলে মিলল এক প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত দেহ। পরিজনেরা অভিযোগ করলেন খুনের। আর সেই ঘটনাতেই জড়িয়ে গেল তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের নাম। সঞ্জয় অবশ্য এই অভিযোগ দৃঢ় ভাবে অস্বীকার করেছেন।
কেশপুরের আনন্দপুরের কাঁচগেড়্যা। স্থানীয় বাসিন্দা তাপস দে (৫১) শনিবার ভোররাতে শৌচকর্মের জন্য বাইরে বেরিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। এ দিন সকালে খানিক দূরের জঙ্গলে গাছের ডালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে। মুখে গামছা জড়ানো ছিল, গলায় ছিল ধারাল অস্ত্রের দাগ।
মৃতের ভাইপো ইন্দ্রজিৎ দে-র অভিযোগ, “তিন দিন আগে সঞ্জয় পানের নেতৃত্বে কয়েক জন কাকাকে খুনের হুমকি দিয়েছিল। পরিকল্পনা করেই ওঁকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয়। তাঁর দাবি, “আমি কাউকে খুনের হুমকি দিইনি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “মৃতের গলায় একটা দাগ রয়েছে। রক্তও ছিল।” এটা খুন না আত্মহত্যা? পুলিশ সুপারের জবাব, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না দেখে তা বলা সম্ভব নয়।”
গোলমালের শুরু বছর খানেক আগে। তখন ইন্দ্রজিৎ অভিযোগ করেছিলেন, এক অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গ্রামের ওই কিশোরীর পরিজনেদের দাবি ছিল, ইন্দ্রজিতের সঙ্গে সহবাসের ফলেই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। ইন্দ্রজিৎ তা মানেননি। তিনি ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন মেদিনীপুর আদালতে। সেই মামলা চলছে। ইন্দ্রজিতের অভিযোগ, ‘‘তখনও স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিল।’’ কাজের সূত্রে এখন মেদিনীপুর শহরে থাকেন ইন্দ্রজিৎ। ওই কিশোরীও কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। তবে সমস্যা মেটেনি।
তাপসবাবুর পরিজনেদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই কিশোরীর নামে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ইন্দ্রজিৎ বলেন, “গত বুধবার কাকা জমিতে গিয়েছিলেন। তখন সঞ্জয় পানের নেতৃত্বে কয়েক জন চাষে বাধা দেয়। কাকাকে মারধর করে।” শুক্রবার সন্ধ্যাতেও তপন পণ্ডিত, মঙ্গল সাঁত, মনোরঞ্জন নন্দী-সহ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মী ইন্দ্রজিৎদের বাড়িতে এসে ওই কিশোরীর নামে জমি লিখে দিতে বলেন বলে অভিযোগ। তাপসবাবু জানিয়েছিলেন, আগে ডিএনএ টেস্ট হোক। তার পর জমি লেখালেখি হবে। অভিযোগ, এরপরই তাপসবাবুকে হুমকি দেওয়া হয়, ‘জমি লিখে না দিলে মরতে হবে।’ কিশোরীর কাকিমার দাবি, ‘‘এই মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক নেই। তাপসবাবুদের পরিবারেই অশান্তি ছিল।’’ এই ঘটনায় সঞ্জয় পান-সহ ১৪ জনের নামে খুনের অভিযোগ জানানো হয়েছে। বেশির ভাগই তৃণমূলের নেতা-কর্মী। সঞ্জয় বলেন, “গ্রামের মানুষ চেয়েছিল, ওই কিশোরীর নামে কিছু জমি লিখে দেওয়া হোক। এর বেশি কিছু হয়নি। খুনের অভিযোগ মিথ্যা।” তবে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি মানছেন, ‘‘স্থানীয় সমস্যায় দলের কারও সরাসরি জড়ানো ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy