Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কে পড়ে উনিশ লক্ষ, বন্ধ গ্রন্থাগারের সংস্কার

জীর্ণ হয়ে পড়েছিল গ্রামীণ গ্রন্থাগারের ঘরটি। পরিচালন সমিতি ও এলাকাবাসী চেয়েছিলেন নতুন করে তৈরি হোক সেই ঘর। দাবি মেনেও নিয়েছিল ‘স্টেট লাইব্রেরি কাউন্সিল’। তারা বড় অঙ্কের টাকাও বরাদ্দ করে দেন গ্রন্থাগারটির জন্য।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৮

জীর্ণ হয়ে পড়েছিল গ্রামীণ গ্রন্থাগারের ঘরটি। পরিচালন সমিতি ও এলাকাবাসী চেয়েছিলেন নতুন করে তৈরি হোক সেই ঘর। দাবি মেনেও নিয়েছিল ‘স্টেট লাইব্রেরি কাউন্সিল’। তারা বড় অঙ্কের টাকাও বরাদ্দ করে দেন গ্রন্থাগারটির জন্য। গত এপ্রিলেই সেই টাকা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারের অ্যাকাউন্টে পৌঁছেও গিয়েছে। কিন্তু, সাত মাস কেটে গেলেও একটি ইটও গাঁথা হয়নি দুবরাজপুরের সাহাপুর পঞ্চায়েতের যাত্রা গ্রামের ওই গ্রন্থাগারের। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ গ্রন্থাগারের সদস্য এবং এলাকাবাসী। অভিযোগ, প্রশাসনিক গাফিলতিতেই সরকারি টাকা ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের দাবিও তাঁরা তুলেছেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৮১ সালে যাত্রা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আনসার স্মৃতি গ্রামীণ গ্রন্থাগার’। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বই সমৃদ্ধ ওই গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ৩৩৮ জন। শুধু সদস্যেরাই নন, গ্রন্থাগারটি থেকে উপকৃত হয় যাত্রা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকশো পড়ুয়ারাও। সমস্যা হল, গ্রন্থাগারের ভবনটির এখন বেহাল দশা। বেশ কয়েক বছর ধরেই জীর্ণ হয়ে পড়েছে সেটি। নতুন ভবন না হলে সমস্যা তৈরি হবে, এটা আন্দাজ করেই নতুন ভবনের জন্য গত বছরই জেলা গ্রন্থাগারিক মারফত স্টেট লাইব্রেরি কাউন্সিলে আবেদন জানায় সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতি। নতুন ভবনের জন্য ১৯ লক্ষ ২৪ হাজার ২০০ টাকা অনুমোদন করা হয়। গত ১৮ এপ্রিল ওই অঙ্কের চেক গ্রন্থাগারের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। কিন্তু, সেই থেকে ভবন নির্মাণের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সম্পাদক শেখ সমীরউদ্দিনের দাবি, ‘‘আমাদের অ্যাকাউন্টে এলেও বেনিফিসিয়ারি কমিটি গড়ে খরচের বিষয়টি ঠিক করার দায়িত্ব বিডিও-র। কমিটি গঠিত হলেও এ ব্যাপারে সদর্থক বৈঠকই হয়নি।’’

সমীরউদ্দিনের অভিযোগ, কমিটির মধ্যে তিনি, গ্রন্থাগারিক, ডিএলও-র প্রতিনিধি এবং কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে বিডিও বা তাঁর প্রতিনিধি, এক জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং ব্লকের জনশিক্ষা আধিকারিকের থাকার কথা। কমিটি গঠনের পর একাধিকবার বৈঠক ডাকলেও ব্লকের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। তাই টাকায় হাত দেওয়া যায়নি। ওই গ্রামীণ গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক শক্তিপদ রায়ও সম্পাদকের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। অন্য দিকে, দুবরাজপুরের বিডিও বনমালি রায় জানান, তিনি সদ্য এই ব্লকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে, আসার পরেই কমিটি গঠন করেছেন। তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে যুগ্ম বিডিও-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মনে যত দ্রুত সম্ভব কাজ হবে বলেই বিডিও-র দাবি।

এ দিকে, জেলা গ্রন্থাগার দফতর ও দুবরাজপুরের ব্লক প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, টাকা খরচ কী পদ্ধতিতে হবে, মূলত তা নিয়েই টানাপড়েনেই কাজ এগোচ্ছে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত কয়েক মাসে দুবরাজপুর ব্লকের দু’জন বিডিও-র বদলি হওয়া, জেলায় স্থায়ী ডিএলও না থাকা। ঘটনা হল, যে অঙ্কের টাকা এসেছে, সেই টাকা খরচ করতে হলে অবশ্যই ই-টেন্ডার করার কথা। কিন্তু, গ্রামীণ গ্রন্থাগারটিতে স্থায়ী গ্রন্থাগারিক না থাকায় এবং ই-টেন্ডার করার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায়, তা সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ওই গ্রামীণ গ্রন্থাগারের সম্পাদক এবং গ্রন্থাগারিক— যাঁরা পদাধিকার বলে টাকা খরচের দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের ওই ফান্ড বিডিও-কে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু, কেন তাঁদের নামে আসা টাকা বিডিও-কে দিতে হবে, এ নিয়েই কোথাও সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। বীরভূমের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বর্ধমানের ডিএলও সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলছেন, ‘‘কোথাও একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ রয়েছে। দ্রুত বৈঠক করে সমস্যা মেটাব। কাজও শুরু হয়ে যাবে।’’

যদিও এত কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন ওই গ্রামীণ গ্রন্থাগারের সদস্য নীরদবরণ দে, আব্দুল হাসেম বা মতিউর রহমানেরা। তাঁরা বলছেন, কারণ যাই হোক না কেন, বরাদ্দ টাকা খরচে কেন এত বিলম্ব হবে। সকল সদস্য ও পড়ুয়াদের স্বার্থেই দ্রুত পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।

delay allocation money bank renovation library ansar smriti village library dubrajpur dayal sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy