Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Amartya Sen

বৈদিক অঙ্ক? মানতে রাজি নন অমর্ত্য

সল্টলেকে অমর্ত্য সেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাঘরে মঙ্গলবারের ভিড়টায় চোখে পড়েছে এ দেশের বৈচিত্রময় সামাজিক সমন্বয়েরই ছবি।

অমর্ত্য সেন।

অমর্ত্য সেন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪১
Share: Save:

যুক্ত সাধনা বা হিন্দু, মুসলিমের সমন্বয়ী সংস্কৃতির গুরুত্বের কথা ক’দিন আগেই বলছিলেন অমর্ত্য সেন। মঙ্গলবার তাঁর প্রতীচী ট্রাস্টের অনুষ্ঠান যেন সেই যুক্ত সাধনারই ফলিত রূপ মেলে ধরল।

সল্টলেকে অমর্ত্য সেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাঘরে মঙ্গলবারের ভিড়টায় চোখে পড়েছে এ দেশের বৈচিত্রময় সামাজিক সমন্বয়েরই ছবি। রক্ষণশীল মুসলিম ঘরের মেয়েরা পারে না, এমন অপপ্রচার ভাঙার চেষ্টা! সাঁতরাগাছির দ্বীনিয়ত মুয়াল্লিমা কলেজের সহায়তায় ডোমজুড়ে একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রযুক্তি প্রকল্পে শামিল হয়েছিল প্রতীচী। এলাকার ছেলে, মেয়েদের শিখিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সৌর বিদ্যুৎ চালিত আলো, পাখা, রান্নাঘর, জলের ফিল্টার বসানো হয়েছে। এই ধরনের চেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নিয়েই অমর্ত্য আলোচনা করছিলেন।

প্রতীচীর মতো ছোট প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান চর্চার পথে পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক প্রগতির ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিতে বলছিলেন নোবেলজয়ী চিন্তাবিদ। অমর্ত্যের মতে, জ্ঞান, বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে কারও মৌরসিপাট্টা নেই। ইতিহাসের নানা ধারা বেয়ে অঙ্ক বা পদার্থবিদ্যা— সব উত্তরাধিকারই এক জনের হাত ঘুরে আর এক জনের হাতে এসে পড়েছে। এই প্রসঙ্গেই ‘বৈদিক অঙ্ক’-এর তত্ত্বটি কার্যত অস্বীকার করেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, “যদিও ভারতবর্ষে খুব বড় বড় বক্তৃতা দেওয়া হয়, বৈদিক অঙ্ক বলে কিছু আছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। বেদে অঙ্ক খুবই সামান্য। কিছু অথর্ব বেদে আছে। বড় রকমের কিছু নেই।” অমর্ত্যের মতে, গ্রিকেরা আসার পরেই এ দেশে অঙ্ক চর্চার গভীরতা বাড়ল। ব্যাবিলনের মাধ্যমে গ্রিস এবং সেখান থেকে ভারতে অঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে বৈদিক অঙ্কের মহিমা-কীর্তন শোনা গিয়েছিল। ‘মন কি বাত’-এ মোদী বলেন, ‘‘বৈদিক অঙ্ক জানলে চোখের পলকে জটিল গণনা সম্ভব।’’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিভিন্ন সংগঠনও জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বৈদিক অঙ্ক ঢোকানোর দাবি তুলেছে। অমর্ত্য অবশ্য ভারতে অঙ্কের চর্চাকে খাটো করেননি। তিনি বলেন, “গ্রিস, ব্যাবিলনের প্রভাবে অঙ্ক শিক্ষার পরে আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, বরাহমিহিররা অনেকে অঙ্কের পণ্ডিত হলেন। আর্যভট্ট ত্রিকোণমিতি বোঝাতে গিয়ে শেখালেন তা ভুবনের সঙ্গে যুক্ত। তা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ধারণা দিল। পরে আরবেরা তাঁর কথা মেনে নেন। আরবেরা আবার অঙ্ক ইউরোপে প্রচার করলেন। এই ভাবেই জ্ঞান বাড়ে।”

বিদ্যুৎ পরিবহণ বা প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে চিনের থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে বলে মন্তব্য করেন অমর্ত্য। দর্শকাসনে উপস্থিত চিনা কনসাল জেনারেল চা লিয়ু সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে প্রতীচীর প্রকল্পকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amartya Sen Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE