দলের হালই কি মাথাব্যথার কারণ? মঙ্গলবার হাওড়ার শরৎ সদনে বিজেপির সম্পর্ক সভায় অমিত শাহ। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ‘‘ম্যায় হুঁ অমিত শাহ!’’ আর মঙ্গলবার বাংলায় এসে প্রকাশ্যে কোনও শব্দই শোনা গেল না তাঁর কণ্ঠ থেকে। প্রায় নীরবেই রাজ্য সফর সারলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি।
গত বছর ৩০ নভেম্বর ধর্মতলার জনসভা থেকে তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন অমিত। এ বার অবশ্য তাঁর কোনও জনসভা ছিল না। কিন্তু হাওড়ার শরৎ সদনে মঙ্গলবার দলীয় বৈঠকের আগে বা পরে সংবাদমাধ্যমেরও মুখোমুখি হননি অমিত। বরং, বৈঠকের অভ্যন্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনই তাঁদের মাথাব্যথার বিষয়। অমিতের যুক্তি, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি থেকে সব আসন পাওয়ার আশা বিজেপি রাখতে পারে না। তাই ওই নির্বাচনে পূর্বাঞ্চলকেই বেশি সাংসদ দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে আসন বাড়াতে হবে। ২০১৪-এ যেমন ছিল লখনউ, তেমনই ২০১৯-এ কলকাতাকে নিশানা করে এগোতে হবে। সামগ্রিক ভাবে ‘মিশন পশ্চিমবঙ্গ’ থেকে সরেননি বিজেপি সেনাপতি।
অমিতের এই বক্তব্য থেকে বিজেপির একাংশের ধারণা, সাম্প্রতিক পুরভোটে এ রাজ্যে দলের ফল দেখেই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব আর ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট নিয়ে বিশেষ আশাবাদী হচ্ছেন না। তাই এখন থেকেই সংগঠনকে তৈরি রাখতে চাইছেন ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের জন্য। তৃণমূল-বিজেপি’র সাম্প্রতিক নৈকট্যের জল্পনার সঙ্গেও এই ঘটনাপ্রবাহকে মেলাতে চাইছেন অনেকে। আবার রাজ্য বিজেপি-রই অন্য অংশের দাবি, অমিত মোটেও ২০১৬ সালের ভোটকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কথা বলেননি। বরং প্রত্যাশিত ভাবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করার কথাই বলেছেন।
বস্তুত, প্রকাশ্যে অমিতের মুখ না খোলা এবং শরৎ সদনে পাঁচ রাজ্যের বৈঠকে তাঁর সাংগঠনিক বক্তৃতা থেকে ভুল বার্তা যেতে পারে বুঝেই পরে আবার সক্রিয় হন বিজেপি নেতৃত্ব। ওই বৈঠকের পরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কোর কমিটিকে নিয়ে আলোচনায় অমিত কিন্তু বলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখেই সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে হবে দলকে। তার জন্য এখন থেকেই তৃণমূল স্তরে স্থানীয় বিষয় নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামগ্রিক আন্দোলনের জন্য সারদা এবং অনুপ্রবেশ— এই দু’টি বিষয়কে ফের চিহ্নিত করেও দিয়েছেন অমিত। এরই পাশাপাশি দলের একাংশের ব্যাখ্যা, যে রাজ্য বিজেপি-র নেতারা নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে অভ্যস্ত, সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়ে সচেতন ভাবেই তাঁদের বার্তা দিতে চেয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি।
গোটা দেশে মিস্ড কল দিয়ে যাঁরা দলের সদস্য হয়েছেন, তাঁদের বা়ড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। সেই কর্মসূচির নাম ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, সিকিম এবং আন্দামান— বিজেপির এই পাঁচ রাজ্যের নেতাদের নিয়ে ওই অভিযান সংক্রান্ত বৈঠক করতেই রাজ্যে এসেছেন অমিত। তাঁর সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলাল, জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ, রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ প্রমুখ ওই বৈঠকে ছিলেন। পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে একযোগে এবং আলাদা করে বসেন অমিত। পাঁচ রাজ্যের সাংসদ এবং বিধায়কদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। আজ, বুধবার সকালে তাঁর কলকাতা ছাড়ার কথা।
সাংগঠনিক বৈঠকেই অমিত অবশ্য বলে গিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে সব নতুন সদস্যকে কর্মীতে পরিণত করতে পারলে দলের মাটি শক্ত হবে। আর বৈঠকের অবসরে অরুণ জানান, অমিত পাঁচ রাজ্যের মহাসম্পর্কের অগ্রগতির সমীক্ষা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি প্রচার করে বিজেপির স্বাতন্ত্র্য মানুষকে বোঝানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অরুণের দাবি, দলের এ রাজ্যে ৪৩ লক্ষ, ওড়িশায় ৩২ লক্ষ এবং ঝাড়খণ্ডে ৪৫ লক্ষ সদস্য হয়েছে। যা দলের শক্তিবৃদ্ধিরই ইঙ্গিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy