Advertisement
E-Paper

‘স্মার্ট’ হওয়ার অপেক্ষায় অনাহারের আমলাশোল

শীতের পড়ন্ত দুপুর। মাটির বাড়ির দালানে ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন সত্তর বছরের খাঁদি শবর। কেমন আছেন? প্রশ্ন শুনে নির্বিকার বৃদ্ধা। নিরুত্তাপ গলাতেই জবাব দিলেন, “আমাদের আর ভাল-মন্দের কী আছে!”

বরুণ দে ও দেবরাজ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শীতের পড়ন্ত দুপুর। মাটির বাড়ির দালানে ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন সত্তর বছরের খাঁদি শবর। কেমন আছেন? প্রশ্ন শুনে নির্বিকার বৃদ্ধা। নিরুত্তাপ গলাতেই জবাব দিলেন, “আমাদের আর ভাল-মন্দের কী আছে!”

খাঁদি শবরের নিবাস বেলপাহাড়ির আমলাশোল। ২০০৪ সালে ৫ গ্রামবাসীর অনাহারে মৃত্যুর ঘটনার জঙ্গলমহলের যে গ্রাম শিরোনামে উঠে এসেছিল। তারপর বারো বছরে আমলাশোল অনেক পাল্টেছে। অনাহারের সেই ছবি আর নেই। ঢালাই রাস্তা, বহু বাড়িতে পাকা শৌচাগার, গ্রামে প্রাথমিক স্কুল— অনেক কিছুই পেয়েছে আমলাশোল। কিন্তু খাঁদিদেবীদের জীবনযাত্রা বিশেষ বদলায়নি। বাড়িতে পাকা শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষেরই ভরসা সেই মাঠঘাট। রাস্তা হলেও তাতে বাস চলে সাকুল্যে দিনে তিনটে। আর গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা মোটে ২৬। আমলাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মলয় মণ্ডল এবং প্রসূন বিশ্বাস মানছেন, “বেশিরভাগ পড়ুয়াই আসে মিড ডে মিলের টানে। মিড ডে মিল না থাকলে পড়ুয়ার সংখ্যা আরও কমে যেত।”

এই আমলাশোলের হাল বদলাতে এ বার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হাত ধরছে প্রশাসন। বেলপাহাড়ির এই গ্রামকে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ করতে ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। অর্থ বরাদ্দ হলেই শুরু হবে উন্নয়নের কাজ।

পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রামের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। তাদের মধ্যে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ প্রকল্পের জন্য আমলাশোলকে বাছা হল কেন? জেলা প্রশাসনের এক কর্তার জবাব, “এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম গড়ে তোলা। আমলাশোল একটু পিছিয়ে পড়া গ্রাম। তাই সব দিক খতিয়ে দেখেই জেলা থেকে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদারেরও বক্তব্য, “আগের থেকে অনেক বদলেছে আমলাশোল। আরও বদলাবে। ওই এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সব রকম চেষ্টা চলছে।”

‘স্মার্ট সিটি’র পরে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে ভৌগোলিক ভাবে একই ধরনের কিছু গ্রামকে নিয়ে এক-একটি তালুক বানিয়ে হবে উন্নয়ন। আগামী তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে এমন তিনশোটি তালুক তৈরির পরিকল্পনা করেছে। সেই তালিকায় আমলাশোল যাতে ঠাঁই পায়, সেই চেষ্টাই করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ‘স্মার্ট ভিলেজ’ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। প্রকল্পের জন্য একটি গ্রামের নাম চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছিল। সেই মতো আমলাশোলের নাম চূড়ান্ত করে পাঠানো হয়েছে।”

স্মার্ট ভিলেজের ধারণা থেকে আমলাশোল অবশ্য এই মুহূর্তে অনেক দূরে। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের নামও শোনেননি গ্রামের মানুষ। গ্রাম ‘স্মার্ট’ হবে শুনেই হোঁচট খেলেন বছর পঁয়ষট্টির গুরুবারি শবর থেকে মোবাইলের হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত যুবক সুকুমার শবর। ছুড়ে দিলেন পাল্টা প্রশ্ন, “ইস্‌সমাট। সেটা আবার কী!”

প্রশাসনের আশ্বাস, প্রকল্প রূপায়িত হলেই সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন আমলাশোলবাসী।

Amlasole smart village
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy