Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Jaynagar

‘তেলের মেশিনের পিছনে শুয়েছিলাম আমি, চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর গুলির আওয়াজ’

গাড়িটা আসলে তো সারফুদ্দিনের। ওরা আসে। গাড়িতেই বসে থাকে।

বোমার টুকরো লেগেছে পাম্পকর্মী গোলাম রসুল শেখের গায়ে।—নিজস্ব চিত্র।

বোমার টুকরো লেগেছে পাম্পকর্মী গোলাম রসুল শেখের গায়ে।—নিজস্ব চিত্র।

গোলাম রসুল শেখ, খুনের প্রত্যক্ষদর্শী
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৫৯
Share: Save:

সাড়ে ছ’টা নাগাদ রোজকার মতো বিধায়কের কালো গাড়িটা পাম্পে এল। আমি তখন বাইকে তেল ভরছিলাম। ওরা রোজই আসে। ওরা মানে সারফুদ্দিন আর গাড়িচালক বাবু।

গাড়িটা আসলে তো সারফুদ্দিনের। ওরা আসে। গাড়িতেই বসে থাকে। পাম্পের উল্টোদিকে গনিভাইয়ের দোকান থেকে চা আনায়।ওরা এলেই সারফুদ্দিনের শাগরেদরা চলে আসে। আড্ডা মারে।কালকেও(বৃহস্পতিবার) সারফুদ্দিন আর বাবু গাড়িতেই বসে চা খাচ্ছিল। বাইরেআরও কয়েকজন ছিল। গাড়ির জানলা দিয়ে কথা বলছিল।

প্রায় পঁচিশ মিনিট পর, তখন সাতটা বাজে। দেখি কয়েকটা ছেলে পাম্পের দিকে এগিয়ে আসছে। ওদের আসার ধরনটা দেখেই আমার কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছিল। তাই আমি লক্ষ্য রাখছিলাম।দেখি ছেলেগুলো সোজা সারফুদ্দিনের গাড়ির কাছে এসে পর পর বোমা চার্জ করা শুরু করল। এক দিকে বোমার আওয়াজ, অন্যদিকে গোটা পাম্প ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে।

পাম্প চত্বরে এখনও রয়ে গিয়েছে বোমাবাজির ছাপ।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: নেতা-সাট্টা-তোলাবাজি-দুষ্কৃতী চক্র! জয়নগর এখন ‘ক্রিমিনাল’দের মুক্তাঞ্চল​

আমার পাশে ছিল আলমগির। আমার মতোই এই পাম্পে কাজ করে। শুরুতে মনে হল ডাকাত পড়েছে। কারণ এর আগেও কয়েকবার পাম্পে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। ততক্ষণে ধোঁয়া একটু কমেছে। তার মধ্যেই দেখলাম ওই ছেলেগুলো পাম্পের অফিসের দিকে না এগিয়ে সারফুদ্দিনের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পিস্তল বের করল। তার মধ্যেআবার বোমার আওয়াজ। টের পেলাম আমার বাঁ-কাঁধে কিছু একটা এসে লাগল। তাকিয়ে দেখি জামায় রক্ত। আলমগির বাথরুমের দিকে পালিয়ে গেল। আমি কোনও উপায় না দেখে তেলের মেশিনের পেছনে শুয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ওই ভাবে শুয়েছিলাম জানিনা।

যতক্ষণ শুয়ে ছিলাম, ততক্ষণ খালি পর পর গুলি আর বোমার আওয়াজ। সাত থেকে দশ মিনিট পর আওয়াজ থামল। কোনও মতে মাথা বাড়িয়ে উঁকি মেরে দেখি কেউ কোথাও নেই। সাহস করে উঠে দাঁড়াই। আশপাশের লোকজনও ছুটে এসেছেন।সারফুদ্দিনের গাড়িটা দেখি রাস্তার দিকে এগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাচ ভাঙা।জায়গায় জায়গায় বোমের দাগ। কাছে যেতেই দেখি বীভৎস দৃশ্য। গাড়ির পাশে পড়েআছে একটা ছেলে। চারদিকে চাপ চাপ রক্ত। ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারলাম।সন্ধ্যা থেকে দাঁড়িয়ে ছিল পাম্পের বাইরে। সারফুদ্দিন আসার পর ওর সঙ্গেকথা বলছিল। সম্ভবত কোনও প্রয়োজনে এসেছিল।

ওই দেখে আর আমার গাড়ির ভিতরের দিকে দেখার সাহস হয়নি। পরে শুনলাম সারফুদ্দিন আর বাবু— দু’জনকেই গাড়ির মধ্যে মেরে দিয়েছে। আমাদের সঙ্গেই কাজ করে শাহনওয়াজ শাহ। ও ওই সময়ে পাম্পে আসছিল। শাহনওয়াজ বলল, ও আসার সময়েই গুলি বোমার আওয়াজ পায়। তখনই লুকিয়ে পড়ে রাস্তার পাশে।ও দেখেছে প্রায় সাত আটজন হেঁটে আর বাইকে একটা গলি দিয়ে চলে গিয়েছে। সবারমুখ খোলা ছিল। শাহনওয়াজ অবশ্য কাউকে চিনতে পারেনি। পরে সকালে দেখলাম ওদের এলোপাথাড়ি গুলি ঢুকে গিয়েছে আশে পাশে রাখা আরও অনেক ক’টা গাড়িতে।পাশে মালিকের বাড়ির দেওয়ালেও গুলির দাগ।

আরও পড়ুন: শাসকের অন্দরের রেষারেষিই কারণ, তদন্তে ইঙ্গিত তেমনই, জয়নগর কাণ্ডে ধৃত ১১​

জয়নগরেই বড় হয়েছি। টাউনের মধ্যে ভর সন্ধেবেলা এ রকম হবে ভাবতে পারিনি। আমাদের সত্যি খুব ভয় লাগছে। পরে শুনলাম বিধায়ক বলেছেন, ওঁকে মারতেই এসেছিল। কিন্ত উনি তো খুব কম আসেন। মাসে দু’তিন বার। রোজ আসত সারফুদ্দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jaynagar Shoot Out TMC MLA Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE