E-Paper

কলকাতার শিক্ষানুরাগীদের হাত ধরে গ্রামে মাটির বিজ্ঞান-বাড়ি

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোদ-বৃষ্টির খেলার মাঝেই পলাশপাইয়ের প্রায় ছ’টি বিদ্যালয়ের জনা আশি পড়ুয়া হাজির হয়েছিল বিজ্ঞান বাড়িতে। তাদের কেউ কেউ টেলিস্কোপে চোখ রেখে অজানা মহাবিশ্বের অনুসন্ধান করার চেষ্টায় মেতে উঠল।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৩
উৎসাহী: পলাশপাই গ্রামে মাটির বিজ্ঞান-বাড়িতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে চলছে পড়ুয়াদের আকাশপাঠের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ।

উৎসাহী: পলাশপাই গ্রামে মাটির বিজ্ঞান-বাড়িতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে চলছে পড়ুয়াদের আকাশপাঠের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

‘শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে, গোড়া থেকেই বিজ্ঞানের ভান্ডারে না হোক, বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশ্যক’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথাই যেন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল কলকাতার বাসিন্দা কয়েক জন শিক্ষানুরাগীকে। যাঁরা পরিকল্পনা করেছিলেন, খেলার ছলেই গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যেও গড়ে তুলবেন বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ। সেই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামের অশীতিপর প্রাক্তন এক প্রধান শিক্ষকও। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পলাশপাই গ্রামে গড়ে উঠল ‘বিজ্ঞান বাড়ি’।

রবিবার থেকে পলাশপাই গ্রামের স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য খুলে গেল বিজ্ঞান চর্চার ওই কেন্দ্রের দরজা। বাঁশ, মাটি ও টালির তৈরি বাড়িতে রয়েছে টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, আলোকবিজ্ঞানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, রসায়নের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই। পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বানানোর কম করে ৫০ রকমের সরঞ্জামও রাখা রয়েছে ওই বাড়িতে। মাসে অন্তত এক বার কলকাতা থেকেই কোনও প্রশিক্ষক গিয়ে হাতে-কলমে গ্রামের পড়ুয়াদের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরির পাঠ দেবেন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোদ-বৃষ্টির খেলার মাঝেই পলাশপাইয়ের প্রায় ছ’টি বিদ্যালয়ের জনা আশি পড়ুয়া হাজির হয়েছিল বিজ্ঞান বাড়িতে। তাদের কেউ কেউ টেলিস্কোপে চোখ রেখে অজানা মহাবিশ্বের অনুসন্ধান করার চেষ্টায় মেতে উঠল। কেউ আবার শিখল, কী ভাবে মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। আলোক বিজ্ঞানের হাত ধরে লেজ়ার রশ্মির খেলাতেও আবার মাতল অনেকে। জানা যাচ্ছে, প্রতি শনিবার বিকেলে এবং রবিবার সকাল-বিকেলে তিন ঘণ্টা করে খোলা থাকবে এই বিজ্ঞান বাড়ি। যা তৈরির সলতে পাকানোর কাজটা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।

‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’র গবেষক দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়, বোস ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত গবেষক গৌতম বসু, আইআইএম-ইন্দোরের অর্থনীতির গবেষক জয়শঙ্কর ভট্টাচার্য, আমেরিকার একটি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক দীপঙ্কর মৈত্র, ‘সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’-এর প্রাক্তন অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের এমিরেটাস শিক্ষক পার্থপ্রতিম রায় ও আইবিএমের সিনিয়র পরামর্শদাতা সৌম্য চট্টোপাধ্যায় মিলে পরিকল্পনা করেন বিদ্যালয়ের চার দেওয়াল এবং পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বেরিয়ে হাতেকলমে বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে প্রান্তিক অঞ্চলে। বিষয়টি জানতে পেরে নিজের বাড়ির সামনের জমি বিজ্ঞান বাড়ি তৈরির জন্য স্বেচ্ছায় দিতে রাজি হয়েছিলেন স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ জানা ও তাঁর ভাই ভবতোষ জানা। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে সরকারকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র করতে দিয়েছি, একটি প্রাথমিক স্কুলও করেছি। আর যেটুকু জমি ছিল, তা আগামী প্রজন্মের কাজে লাগবে, এমন ভাবনা থেকেই দিয়েছি।’’

২০২০ সালে কোভিড শুরুর পরে ধাক্কা খায় বিজ্ঞান বাড়ি তৈরির কাজ। থমকে যাওয়া কাজ শুরু হয় মাস ছয়েক আগে থেকে। পুরো প্রকল্পের খরচ তিন লক্ষ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। দীপ্যমান বলেন, ‘‘আমাদের অনেক পরিচিতও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিটি গ্রামে বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ বাড়াতে সরকারও যাতে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা খরচে এমন প্রকল্প তৈরি করতে পারে, তার উদাহরণ হিসাবে এমন এক-দু’টি কেন্দ্র তৈরির পদক্ষেপ করেছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Science School students midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy