E-Paper

খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে চুপ ছিলাম! শান্তনুকে নিয়ে ক্ষোভ তৃণমূলের অন্দরে

শান্তনুর বাড়ি বলাগড়ের শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শান্তনুর নেতৃত্বে তৃণমূল সন্ত্রাস করে জিতেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৬
Santanu banerjee.

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

গ্রেফতার হওয়ায় এ বার হুগলির বলাগড়ের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করলেন ওই ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। এত দিন তাঁরা কার্যত মুখ বুজেই ছিলেন। সামনে আসছে শান্তনুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও।

শান্তনুর বাড়ি বলাগড়ের শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শান্তনুর নেতৃত্বে তৃণমূল সন্ত্রাস করে জিতেছে। একই অভিযোগ এখন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও!

কী বলছেন নবীন?

বাম জমানাতেও শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েত দক্ষিণপন্থীদের হাতেই থেকেছে। সে কথা জানিয়ে ওই নেতার অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বুথ দখল করেছেন শান্তনু। নিজের পেটোয়া এমন কিছু লোককে তিনি টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলেন, এলাকায় যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তাঁদের জেতাতেই ওই পন্থা। শান্তনুর এক আত্মীয়া প্রধান হন।

এমন অভিযোগ আগে করেননি কেন? নবীনের জবাব, ‘‘খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় মানুষ তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। যার জেরে পরের বছর লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থী রত্না দে নাগ ওই পঞ্চায়েতে পিছিয়ে পড়েন।

নবীন জানাচ্ছেন, মোবাইলের ছোটখাটো দোকান, পরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের সাধারণ কর্মীর কাজ করা শান্তনুর বিপুল সম্পত্তি, বেলাগাম জীবনযাপনের কথা জেনেও এত দিন মুখ খুলতে পারেননি। তিনি জেলে যাওয়ায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলে ফল ভাল করবে বলেও ওই প্রবীণ নেতা মনে করছেন।

ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি তপন দাসও বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ওঁর (শান্তনু) বৈভব, সম্পত্তি যে হারে বেড়েছে, মানুষের চোখ টাটাতে বাধ্য।’’ দলের পুরনো নেতাদের অনেকেই বলছেন, যুব তৃণমূলের পদে বসার পরে শান্তনুর দাপটে ২০১৪ থেকে ’১৯ সাল পর্যন্ত বলাগড়ে দলের মূল সংগঠনের অস্তিত্বই কার্যত উবে গিয়েছিল।

বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূলের একাংশেরও অভিযোগ, বলাগড়ে গঙ্গার মাটি কারবারিদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন যুব তৃণমূলের একদা ‘নয়নের মণি’। বলাগড়ে অবৈধ ভাবে গঙ্গা থেকে মাটি-বালি কাটার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই যুব নেতা-নেত্রীর গোষ্ঠীর গোলমালে এক বছর আগে মারামারি হয়। তখন তৃণমূলের যুবনেত্রী সরাসরি শান্তনুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে মাটি-বালি পাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন। শান্তনুও পাল্টা ওই যুবনেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সূত্রের খবর, মাটি কারবারিদের একাংশ শান্তনুর বিরুদ্ধে থানায় দরখাস্ত দিয়েছিলেন।

পুরশুড়া ও খানাকুলে মুণ্ডেশ্বরী-দামোদরের অবৈধ অনেক বালিখাদে শান্তনুর অংশিদারিত্ব ছিল, এমন দাবিও শোনা যাচ্ছে তৃণমূল নেতাদের একাংশের মুখে। খানাকুলের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “পুরশুড়ার দু’টি নদনদীতে আমাদের নেতা-কর্মীদের যত অবৈধ বালিখাদ আছে, সেখান থেকে শান্তনুকে আয়ের ৫-৬ শতাংশ ভাগ দিতে হত।’’

দেড় বছর আগে বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের গোলমালে শান্তনুর নাম জড়িয়েছিল। সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় নামে এক যুবক বলেন, ‘‘সম্প্রতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করায় ওঁর ঘনিষ্ঠ নেতা ফোনে হুমকি দেন। পোস্ট মুছে ফেলতে হয়।’’

রবিবার শান্তনুর আরও একটি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে বলে বিরোধীদের দাবি। ব্যান্ডেল চার্চের কাছে নিবেদিতা পার্ক এলাকায় একটি বাগানবাড়ি শান্তনুর, এই দাবিতে এ দিন বিজেপির লোকজন বিক্ষোভ দেখান। হুগলি-চুঁচুড়া পুরভবনের কাছে শান্তনুর স্ত্রীর নামে একটি আবাসন রয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জিরাটে তাঁর বাপের বাড়িতে গেলে মা দীপালি গুপ্ত বলেন, ‘‘জামাই দুর্নীতিতে যুক্ত, বিশ্বাস করি না। ফাঁসানো হয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৭ বছর। শ্বশুরবাড়িতে আঁকা শিখিয়ে মাসে হাজার পনেরো টাকা আয় করত। একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও চাকরি করেছে। শাড়ির বুটিকও রয়েছে। মেয়ের নামেও যত সম্পত্তির কথা সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Santanu Banerjee TMC Recruitment Scam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy