প্যাঁচে পড়েছেন বিমল গুরুঙ্গ। সে প্যাঁচ যে কতটা, তা বোঝা গেল বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের চা বাগান মালিকদের সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভায়।
এই মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠে কাতর স্বরে এক সময় রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে গুরুঙ্গ বলেই ফেললেন, পাহাড়ে যদি একের পর এক বোর্ড হতে থাকে, তা হলে জিটিএ-র প্রয়োজন কী!
এ দিন গোটা অনুষ্ঠানে গুরুঙ্গ গোঁজ হয়ে বসেছিলেন। মুখে বিন্দুমাত্র হাসি নেই। রাষ্ট্রপতি যখন প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন, তখন হাততালি দিয়েছেন ঠিকই। তবে বিরস বদনে। কেন হাসি নেই, এর জবাব খুঁজতে পাহাড়ের মানুষ বেশি ভাবছেন না। তাঁদের বক্তব্য, গুরুঙ্গের মুখের গ্রাস কেড়ে মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য তিনটি বোর্ড গঠন করেছেন। ঘোষণা করেছেন, এর পর থেকে রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনও কোনও বৈঠক করবেন দার্জিলিং পাহাড়ে। খোদ পাহাড়ের লোকজনই এ সব দেখে বলছেন, এত কিছুর পরে গুরুঙ্গ যদি কিছু না বলেন, তা হলে পাহাড়ে তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে! তাই মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের বিরোধিতা করে মুখ খোলাটা তাঁর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।
আজ না হোক কাল, সেটা তাঁকে করতেই হতো।
সে জন্য এ দিন চা মালিকদের সভাটি বেছে নিলেন মোর্চা প্রধান। সেখানে রাষ্ট্রপতি আছেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নেই। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে উঠে হিন্দিতে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘কবি ভানুভক্ত সাহিত্য সংস্কৃতি দিয়ে নেপালি ভাষীদের এক করেছিলেন।
তাঁর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানেই আমাদের ধ্বংস করে দিতে তিনটি বোর্ড ঘোষণা করা হল। কয়েক জন খুশি হলেও এই ঘোষণায় পাহাড়ের লাখ লাখ বাসিন্দা অসন্তুষ্ট।’’ এর পরে রাষ্ট্রপতির প্রতি তাঁর আর্তি, ‘‘আপনার সিলমোহরেই জিটিএ গঠন হয়েছিল। এখন জিটিএ থাকবে, নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে— সে সিদ্ধান্তও আপনার হাতেই।’’
বুধবার রাজ্য সরকার পরিচালিত ভানুভক্তের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মঞ্চে থাকা সত্ত্বেও গুরুঙ্গকে বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়নি। সেই ক্ষোভও এ দিন উগরে দেন মোর্চা প্রধান। ওই অনুষ্ঠানের পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে থেকে হঠাৎই ‘অদৃশ্য’ হয়ে যান তিনি। যাননি রাজ্য সরকারের নৈশভোজেও। এ দিন পরে সাংবাদিকদের সামনে সে সব প্রসঙ্গও তোলেন গুরুঙ্গ। বলেন, রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করেন বলেই বুধবার মঞ্চ থেকে নেমে আসেননি।
রাষ্ট্রপতি অবশ্য গত দু’দিনের মতো বৃহস্পতিবারও মমতার উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের তফসিলি জাতিভুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উন্নয়নে, তাঁদের সমস্যা সমাধানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। এই সব গোষ্ঠীকে স্বীকৃতিও দিয়েছেন।’’ এর পরেই জিটিএ-র প্রসঙ্গ উল্লেখ্য করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই উন্নয়নের কথা ভেবেই জিটিএ আইনটিও তৈরি হয়েছে।’’
তবে যতই ক্ষোভ থাকুক, রাজ্যের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বয়কট করবেন না গুরুঙ্গরা। তাঁর যুক্তি, জিটিএ-কে সুষ্ঠু ভাবে চালাতে এটা জরুরি। কিন্তু পাহাড়ের একটা বড় অংশই বলছে, রাষ্ট্রপতি মুক্তকণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের প্রশংসা করার পরে আর বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিলেন না গুরুঙ্গ।
রাষ্ট্রপতির সামনে গুরুঙ্গের এ ভাবে ক্ষোভ উগরে দেওয়াকে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে যাঁর প্যাঁচে এ দিন মোর্চা প্রধানের এত ক্ষোভ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ঘুরে এলেন টাইগার হিলে। সেখানে বনমহোৎসব উপলক্ষে চারাও পুঁতলেন।