শনিবার বিকেলে সিটের ছয় সদস্য হাওড়ার আমতার সারদা গ্রামে আনিসের বাড়িতে যান। সালেম কথা না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। সিটের সদস্যেরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে সে দিনের ঘটনা (১৮ ফেব্রুয়ারি) সম্পর্কে খোঁজখবর করেন।
আনিসের বাবা সালেম খান। ফাইল চিত্র।
ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে দু’সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। আমতা থানার এক হোমগার্ড এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কাউকে ধরতে পারেনি সিট। রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ বার তাদের সঙ্গে আর সহযোগিতা করবেন না বলে শনিবার জানিয়ে দিলেন আনিসের বাবা সালেম খান। তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন জানিয়েছেন, আদালতের পর্যবেক্ষণে সিবিআই তদন্তের দাবি তাঁরা দিল্লিতে তুলবেন।
শনিবার বিকেলে সিটের ছয় সদস্য হাওড়ার আমতার সারদা গ্রামে আনিসের বাড়িতে যান। সালেম কথা না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। সিটের সদস্যেরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে সে দিনের ঘটনা (১৮ ফেব্রুয়ারি) সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। আনিসের সম্পর্কে জানতে চান। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করে ফিরে যান।
সালেম বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে আমি সিটকে সব ধরনের সহায়তা করেছি। কিন্তু সিট আমাকে কোনও তথ্য দিচ্ছে না। এখনও দোষীদের ধরতে পারল না। বার বার চাওয়া সত্ত্বেও দু’টি ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলাম না। থানায় জানানো সত্ত্বেও হুমকি-ফোনের কোনও সুরাহা হল না। উল্টে, আমার বাড়িতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে অনেককে পুলিশ ফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। আমি আর সিটের সঙ্গে বসবই না। কোনও সহযোগিতা করব না।’’
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা ভয় দেখানোর অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই বাড়িতে প্রতিদিন বহু মানুষই আসছেন।
পুলিশ কেন তাঁদের ফোন করে ভয় দেখাবে?’’ আনিসের অপমৃত্যুর পরে সিবিআই তদন্ত চাওয়ায় তাঁর দাদাকে যে হুমকি-ফোন করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলেও দাবি করেছেন ওই পুলিশকর্তা।
সাংসদ তথা এআইসিসি-র তরফে প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক এ চেল্লাকুমার এবং আমতার প্রাক্তন দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন দুপুরে আনিসের বাড়িতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু। সিটের তদন্ত নিয়ে তিনিও প্রশ্ন তোলেন। অধীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘রাষ্ট্রীয় মদতে এবং পরিকল্পিত ভাবে আনিস খুন হয়েছেন। এতে জড়িত পুলিশ, তৃণমূল নেতারা এবং সরকার। সিট গঠন করে তদন্তকে ধামাচাপা দিতে চাইছে পুলিশ। সিট একটা প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।’’
সিবিআই তদন্ত নিয়ে আনিসের বাবার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে অধীর বলেন, ‘‘এই দাবি ন্যায্য। আমরা চাই আদালতের পর্যবেক্ষণে সিবিআই তদন্ত। দাবি আদায়ে বিষয়টি আমরা দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাব। সংসদে তুলব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনে জানাব। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাব। আনিসের বাবা চাইলে তাঁকে সঙ্গে করে রাষ্ট্রপতির কাছেও যাব।’’
অধীরবাবুর অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চাননি পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়। তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছেন। হাই কোর্ট তদন্তের গতিপ্রকৃতি বেঁধে দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই ধরনের মন্তব্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং তদন্ত প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
এ দিন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ ওই সংগঠনের ধৃত নেতাদের মুক্তি এবং আনিস ‘খুনের’ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে পানিয়াড়ায় হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ দেখায় ফরওয়ার্ড ব্লকের পাঁচলা লোকাল কমিটি। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে পুলিশ সুপারের অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy