Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
arjun singh

অর্জুনের বিরুদ্ধে আরও এক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের, শুরু তদন্ত

ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন পুরসভার নামে বেআইনি অ্যাকাউন্ট খুলে ৯ কোটিরও বেশি টাকা অর্জুন ও সৌরভ গায়েব করেছেন—এই অভিযোগ তুললেন পুরসভার বর্তমান প্রশাসক।

অর্জুন সিংহ ও সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ তুললেন ভাটপাড়া পুরসভার বর্তমান প্রশাসক। (ফাইল চিত্র)

অর্জুন সিংহ ও সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ তুললেন ভাটপাড়া পুরসভার বর্তমান প্রশাসক। (ফাইল চিত্র)

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৪৭
Share: Save:

ফের বড়সড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে। সহ-অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআর-এ নাম অর্জুনের ভাইপো সৌরভ সিংহেরও| ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন পুরসভার নামে বেআইনি অ্যাকাউন্ট খুলে ৯ কোটিরও বেশি টাকা অর্জুন ও সৌরভ গায়েব করেছেন—এই অভিযোগ তুললেন পুরসভার বর্তমান প্রশাসক। আর প্রশাসকের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করল ভাটপাড়া থানা।

২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন অর্জুন সিংহ। তিনি ব্যারাকপুরের সাংসদ এবং তাঁর ছেলে পবন ভাটপাড়ার বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরে চেয়ারম্যান বদল হয়। ভাইপো সৌরভ সিংহকে চেয়ারম্যান পদে বসান অর্জুন। চলতি বছরের গোড়ায় অনাস্থা এনে সৌরভকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। অরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় হন নতুন চেয়ারম্যান। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যানও হয়েছেন সেই অরুণই| আর তিনিই ভাটপাড়া থানার ওসি-কে চিঠি লিখে অর্জুন সিংহ ও সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ জানিয়েছেন।

ভাটপাড়ার চেয়ারম্যান হওয়ার পরে অর্জুন সিংহ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্যারাকপুর শাখায় 'চেয়ারম্যান'স রিলিফ ফান্ড' নামে একটি একাউন্ট খোলেন বলে অভিযোগ পত্রে লেখা হয়েছে। পরে ওই ব্যাঙ্কেরই ভাটপাড়া শাখায় একাউন্টটি সরিয়ে আনা হয় বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই একাউন্ট খোলা বা তা এক শাখা থেকে আর এক শাখায় সরানো, কোনওটাই পুরসভায় আলোচনা করে বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে অরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। বছরের পর বছর ধরে অর্জুন সিংহ ব্যক্তিগত ভাবে ওই একাউন্টটিতে লেনদেন চালিয়ে গিয়েছেন এবং ওই একাউন্ট থেকে টাকা খরচ করা হয়েছে কোন কোন খাতে, তার কোনও বিশদ হিসেবই নেই— এমন অভিযোগই তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে’ পুলিশকে হেনস্থার হুমকি বিজেপির

ভাটপাড়ার পুর প্রশাসক ২৪ অগস্ট চিঠিটি লিখেছেন স্থানীয় ওসি-কে। তার ভিত্তিতে পরের দিন অর্থাৎ ২৫ অগস্ট পুলিশ এফআইআর রুজু করেছে। অর্জুন সিংহ ও সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ২১ লক্ষ ৫৮ হাজার ২৭ টাকা ৭২ পয়সা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে বলে সেখানে লেখা হয়েছে।

এই অ্যাকাউন্টকে কী ভাবে কাজে লাগানো হত বলে তিনি সন্দেহ করছেন, চিঠিতে তা-ও বিশদে লিখেছেন ভাটপাড়ার বর্তমান পুর প্রশাসক। পুলিশকে পাঠানো অভিযোগ পত্রে ২০১৪-র এপ্রিল থেকে ২০১৯-এর অক্টোবর পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটির নানা লেনদেনের হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদার ওই অ্যাকাউন্টটিতে মোটা টাকা জমা করতেন এবং তাঁরাই পুরসভার নানা কাজের বরাত পেতেন বলে দাবি করা হয়েছে। অর্জুন আসলে ওই একাউন্টটির মাধ্যমে ঘুষ নিতেন এবং পরে সে টাকা সরিয়ে ফেলতেন বলে পুর প্রশাসকের অভিযোগ। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পরে এই একাউন্টটির কথা তিনি জানতে পারেন বলে অরুণবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন। তখন একাউন্টটিতে মাত্র কয়েক হাজার টাকা পড়ে ছিল বলেও অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি।

আরও পড়ুন: বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর চাই, সরব বিরোধীরা

গত এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হল ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে। এর আগে একটি সমবায় ব্যাঙ্কের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়। এ বার জুড়ল চেয়ারম্যান'স রিলিফ ফান্ড নামের একটি একাউন্টে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে তা সরিয়ে ফেলার অভিযোগ।

বিজেপি অবশ্য এই সব অভিযোগের পিছনে চক্রান্ত দেখছে। অর্জুন সিংহ যদি এত বছর ধরে লুঠপাট চালিয়ে থাকেন, তা হলে এত দিন প্রশাসন কিছুই জানতে পারল না কেন? তিনি বিজেপিতে আসার পরেই সব জানা যাচ্ছে কেন? প্রশ্ন বিজেপি নেতাদের। উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলে অর্জুন সিংহের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না তৃণমূল, তাই একের পর এক মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত চলছে, দাবি বিজেপির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arjun Singh Bhatpara TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE