ইটভাটার আড়ালে রমরমিয়ে বাজি তৈরির অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সকালে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রাম। যার অভিঘাতে এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অথচ, সেই বিস্ফোরণস্থলের এক কিলোমিটারের মধ্যে খোঁজ মিলল আরও একটি অবৈধ ‘বাজি’ কারখানার। অভিযোগ, মোচপোল গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে বেরুনান পাকুড়িয়া গ্রামের এই কারখানায় ইটভাটার আড়ালে রমরমিয়ে ‘বাজি’ তৈরি করা হত। দামি দামি যন্ত্র দিয়ে মেশানো হত বাজির মশলা।
স্থানীয়দের দাবি, এই কারখানায় যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের বেশির ভাগই মুর্শিদাবাদের শ্রমিক। বাইরে থেকে গাড়ি করে ‘বাজি’ তৈরির জন্য আনা হত তাঁদের। শ্রমিকেরা স্থানীয় মেসে ভাড়া থাকলেও তাঁরা কেউ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না বলেও দাবি স্থানীয়দের। কিন্তু এই কারখানার মালিক কে, সে সম্পর্কে অবহিত নন স্থানীয়েরা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মালিকের বাড়ি পাশেরই এক গ্রামে। আবার অন্য এক অংশের দাবি, শ্রমিকদের মতো মালিকের বাড়িও মুর্শিদাবাদে।
স্থানীয়দের দাবি, রবিবারের দত্তপুকুরের বিস্ফোরণকাণ্ডের পর থেকেই এই কারখানার শ্রমিকেরা ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন। রাতারাতি কারখানা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। ইটভাটার আড়ালে অবৈধ ‘বাজি’ তৈরির কারখানার খবর পেয়ে সোমবার স্থানীয় বাসিন্দারা এই কারখানার একাংশে ভাঙচুর চালান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কারখানায় ‘বাজি’ তৈরির পাশাপাশি ‘বাজি’ নিয়ে গবেষণাও চলত। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে ভেসে আসত বারুদ এবং রাসায়নিকের ঝাঁঝালো গন্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে ওই কারখানা ঘুরে এসেছে আনন্দবাজার অনলাইন। আনন্দবাজার অনলাইনের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বারুদ, রাসায়নিকের ড্রাম, ‘বাজি’র মশলা তৈরির যন্ত্র। নজরে এসেছে সেই গবেষণাগারও। স্থানীয়দের অভিযোগ, দত্তপুকুরে এত বড় ঘটনার পরও কোনও হোলদোল নেই প্রশাসনের। এলাকার আশপাশে এই ধরনের আরও অবৈধ কারখানা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে ‘বাজি’ কারখানার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুর এলাকার মোচপোল গ্রাম। বিস্ফোরণের অভিঘাতে এতটাই বেশি ছিল যে, যার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের বারাসত শহরেও। কারখানার আশপাশের বাড়িতেও ফাটল ধরে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত কমপক্ষে দশ জন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই বিস্ফোরণে কারখানার মালিক ছিলেন কেরামত আলি। সূত্রের খবর, ওই বিস্ফোরণে তাঁরও মৃত্যু হয়েছে।
রবিবারের বিস্ফোরণের রেশ দেখা গিয়েছে সোমবারও। সোমবার সকালেও দুর্ঘটনাস্থল থেকে দেহাংশ উদ্ধার হয়েছে। সেই দেহাংশ দেখতে ইতিউতি ভিড় জমান জনতা। দুর্গন্ধে শাড়ির আঁচল কিংবা হাত দিয়ে নাকচাপা দিয়েই দেহাংশ দেখতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার বীভৎসতায় এখনও আতঙ্ক কাটছে না তাঁদের। এই গ্রামের উপর দিয়ে আগামী কয়েক দিন যে ঝড় বয়ে যেতে চলেছে, তা-ও মানছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তার মধ্যেই এই নতুন কারখানার খোঁজ মেলায় এলাকায় আরও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy