সংসারে চরম আর্থিক অনটনের কথা বলে দিল্লির সিবিআই বিশেষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর এবং পরিবার-পরিজনের বাজেয়াপ্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফের লেনদেন চালুর আর্জি জানান তিনি। গরু পাচারের সিবিআই মামলায় জামিনে মুক্ত বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতার সেই আবেদনখারিজ হয়ে গিয়েছে।
অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার ৩৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সিবিআই বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়ে, তা চালুর আবেদন করেন আইনজীবী। তবে মামলার তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্য আদালতে নথি পেশ করে জানান, গরু পাচার চলাকালীন (অর্থাৎ ২০১৫ থেকে ২০২১) অনুব্রত ও তাঁর মেয়ের নামে ওই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল। তাতে জমা পড়া বিপুল টাকা নিয়ে তদন্ত চলছে। দিল্লির বিশেষ আদালত সূত্রে খবর, ২৫ সেপ্টেম্বর অনুব্রতের আবেদন খারিজ করে দিল্লির বিশেষ আদালত। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, “এই মুহূর্তে ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব নয়। তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় চার্জ গঠনের সময়ে ওই আবেদনের শুনানি হতে পারে।"
সিবিআই সূত্রের খবর, ৩৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি অনুব্রত ও তাঁর পরিজনের নামে স্থায়ী আমানতে কয়েক কোটি টাকা জমা করা হয়। মোট ২৮ কোটি টাকার বেআইনি আমানত নগদে জমা হয়েছিল বলে দাবি। শুধু গরু পাচারের কালো টাকা নয়। বেআইনি পথে লটারি বিক্রির টাকাও ব্যাঙ্ক আমানতে জমা হয়েছে বলে তদন্তে দাবি উঠে এসেছে। পাশাপাশি ২০১৫-২০২১ এর মধ্যে কেনা প্রায় আট কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক আমানতের টাকা এবং সম্পত্তি অনুব্রত ও তাঁর পরিজনের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে আদালতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার দাবি করেছেন।
সূত্রের খবর, ওই একই আদালতে গরু পাচারের ইডির মামলায় তদন্তকারী অফিসার লিখিত ভাবে নথি পেশ করে জানিয়েছেন, অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে এবং পরিজনের নামে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭৭ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে, যা ধাপে ধাপে বাজেয়াপ্ত করা চলছে। ২০২২এর ১১ আগস্ট বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে গরু পাচারের মামলায় অনুব্রতকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওই বছরের নভেম্বরে গরু পাচারের মামলায় অনুব্রতকে হেফাজতে নেয় ইডি। তাঁর নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি নগদ টাকা জমা হওয়ার অভিযোগে ২০২৩এ অনুব্রতর কন্যা সুকন্যাকেও হেফাজতে নেয় ইডি। গত বছরের দুর্গাপুজোর আগে ইডি ও সিবিআইয়ের মামলায় শর্তাধীনে জামিন পান অনুব্রত। ইডির মামলায় সুকন্যারও শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর হয়। বাবা ও মেয়ে বোলপুরে ফিরে আসেন।
অনুব্রতের সংসারে অনটন শুরু হয়েছে বলে আদালতে যা দাবি করা হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করছেন ইডি ও সিবিআইয়ের কর্তারা। সিবিআইয়ের দিল্লির সদর দফতরের এক কর্তা বলেন, "অনুব্রত অত্যন্ত প্রভাবশালী। তা ওঁর জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর ফের প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া, তাঁদের আরও সম্পত্তি রয়েছে বলে সম্প্রতি আমরা খোঁজ পেয়েছি। ওই সব সম্পত্তির বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অনুব্রত রাজ্য সরকারের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে না-থাকলেও তাঁকে রাজ্য সরকারের তরফে 'ওয়াই ক্যাটেগরি' নিরাপত্তা দেওয়া নিয়েও ওই সিবিআই কর্তা প্রশ্ন তোলেন। সম্প্রতি বোলপুর থানার আধিকারিককে ফোনে অনুব্রতের অপভাষা প্রয়োগ ও হুমকির অভিযোগ নিয়েও সিবিআইয়ের কেন্দ্রীয় কর্তারা অবহিত। তাঁরা জানেন, রাজ্য পুলিশের বার বার তলবেও অনুব্রত গরহাজির দেখেছেন। যা অত্যন্ত গুরুতর বিষয় বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মত।
অনুব্রতের বিরুদ্ধে মামলার কয়েক জন সাক্ষীকে শাসানো হচ্ছে বলেও দিল্লির সিবিআই কর্তাদের দাবি। জনৈক কর্তা বলেন, “সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না, এটা জামিনের অন্যতম শর্ত ছিল। কিন্তু আমরা উল্টো খবর পাচ্ছি। ওই বিষয়ে তদন্তে দিল্লি ও কলকাতার অফিসারদের নিয়ে একটি দল গড়া হয়েছে। সবিস্তার খোঁজ নিয়ে সদর দফতরের বিভাগীয় আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কয়েক মাসের মধ্যে আদালতে ফের অনুব্রতের জামিন খারিজের আবেদন করা হতে পারে।"
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)