মনুয়া মজুমদার
জামাইয়ের চরিত্রে কোনও দোষ ছিল না বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন তিনি। অনুপম সিংহ হত্যা-কাণ্ডের বিচার চলাকালীন আইজীবীদের সওয়ালের জবাবে শুক্রবার মনুয়ার বাবা নির্মল মজুমদার জানালেন, পড়শি বা অন্য কাউকে তিনি সন্দেহ করেন না। কারণ, তাঁর জামাই অনুপমের সঙ্গে কারও সম্পর্ক খারাপ ছিল না। অনুপম হত্যা-কাণ্ডে নির্মলবাবুর মেয়ে মনুয়াকেই মূল অভিযুক্ত করে চলছে বিচারপ্রক্রিয়া। সেখানে নির্মলবাবুর এমন সাক্ষ্য বিচার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলে অভিমত বারাসত আদালতে ওই মামলার সরকারি আইনজীবীদেরই।
তবে এ দিন বিচার প্রক্রিয়ার শেষে বারাসত আদালতে চলে এক দফা নাটক। এমনিতেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা চলাকালীন আদালত চত্বরে হাজির ছিলেন অনুপমের আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি অনেক কৌতূহলি মানুষও। মনুয়ার শাস্তি চেয়ে মাঝেমধ্যেই উঠছিল স্লোগান।
বারাসত আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের চতুর্থ জেলা ও দায়রা বিচারক বৈষ্ণব সরকারের এজলাসে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া মাত্র মনুয়া ও তার প্রেমিক অজিত রায়কে আদালতের লক-আপে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। সেই সময়ে অনুপমের ভাগ্নে সঞ্জয় রায়ের বুকে অজিত সজোরে ঘুষি মারে বলে অভিযোগ। সঞ্জয়কে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীও অজিতের হাতে হেনস্থা হন বলেও অভিযোগ।
ঘটনার সঙ্গেসঙ্গেই বুকে হাত দিয়ে চিৎকার করে বিচারকের কাছে ছুটে গিয়ে ঘটনাটি বলে তাঁদের নিরাপত্তার দাবি জানান সঞ্জয়বাবু। বিচারক ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলেন। সঙ্গেসঙ্গেই আদালত চত্বরে আরও পুলিশ মোতায়েন হয়। তবে পুলিশের বক্তব্য, সঞ্জয়বাবু তাঁর মোবাইলে অজিতের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। তাঁকে সরিয়ে দিতে যায় অজিত। তাতেই ঘটে বিপত্তি।
বারাসতের হৃদয়পুরে গত বছরের ২ মে অনুপম সিংহ খুনের ঘটনায় মনুয়া এবং অজিতকে মূল অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় বারাসত থানার পুলিশ। মামলার শুনানি চলছে বারাসত আদালতে। এ দিনও আদালতে মনুয়া ও অজিত তেমন কোনও কথা বলেননি।
মনুয়ার আইনজীবী সুব্রত বসু নির্মলবাবুর কাছে জানতে চান, অনুপম খুনের পরে বারাসত থানায় দায়ের করা অভিযোগে লিখেছেন, তাঁর জামাই মুদ্রা বিনিময়ের কাজ করতেন। তবে তাঁর কাছে নিশ্চয়ই মাঝেমধ্যে অনেক টাকা থাকত। নির্মলবাবু জবাব দেন, ‘‘হ্যাঁ, মালিক না থাকলে অনুপম মাঝেমধ্যে নিজের কাছে টাকা রাখত।’’ এর পরেই সুব্রতবাবু জানতে চান, কারও সঙ্গে অনুপমের খারাপ সম্পর্ক ছিল কি না।
আইনজীবী আরও জিজ্ঞেস করেন, ‘‘অনুপম খুনের পরে পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে তো আপনি লেখেননি কার দিকে সন্দেহ।’’ নির্মলবাবু উত্তর দেন, তিনি কাউকে সন্দেহ করে অভিযোগ জানাননি। অনুপমের বন্ধুদের ঠিকানা বা ফোন নম্বর জানেন কি না, সে প্রশ্ন করলেও না বলেন নির্মলবাবু।
এর পরে তদন্তকারী অফিসার, সরকারি কৌঁসুলিকে সঙ্গে নিয়ে অনুপমের বাড়ি ঘুরে দেখার আর্জি জানান সুব্রতবাবু। তার বিরোধীতা করে সরকারি কৌঁসুলি বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন ঘটনাস্থলে যাওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?’’ আগামী ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি। সে দিনই এই আর্জির ফয়সালা হবে বলে জানিয়ে দেন বিচারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy