পনেরো মাসের লড়াইয়ে মৃত্যুর মোড় ঘুরল জীবনের রাস্তায়। বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি সারতে সারতেই বললেন, ‘‘ভাগ্যিস সে দিন স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি মেলেনি!’’
বছরখানেক আগে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর দিন গোনার সেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। সঞ্জীব বর্ধনের চোখ এখন ল্যাপটপের স্ক্রিনে। বিভিন্ন সাইটে নিজের যোগ্যতা আপলোড করে কাজ খুঁজছেন। শরীরের অসম্পূর্ণতা পূর্ণ করছে ইচ্ছাশক্তি।
২০০৬ সালে তেজপুরের কাছে হাইওয়েতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ইছাপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব। মেরুদণ্ড ও ঘাড়ে গুরুতর চোট পাওয়ায় দেহের অধিকাংশ অঙ্গ কাজ করছিল না। বিছানায় শুয়ে দিন কাটছিল হতাশ আইটি ইঞ্জিনিয়ারের। ২০১৬-এর ২৮ নভেম্বর স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
সেই খবর জেনে, তাঁর চিকিৎসার জন্য উদ্যোগী হন ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক মৌলীমাধব ঘটক। পার্ক সার্কাসের কাছে একটি বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে মেরুদণ্ড, হাত ও ঘাড়ের থেরাপি শুরু হয়। পাশাপাশি চলে ‘সাইকো থেরাপি’-ও। এ ভাবেই পনেরো মাস চলার পরে শনিবার বা়ড়ি ফিরলেন সঞ্জীব। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সঞ্জীবের স্নায়ুগুলো আবার জেগে উঠেছে। হাত পুরোপুরি কাজ করছে। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সঞ্জীব এখন আর পাঁচ জনের মতোই জীবন কাটাতে পারবেন। যেটুকু সমস্যা রয়েছে, তা-ও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’’
হাসপাতালে বসেই সংবাদপত্রে পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের খবর পড়েছেন সঞ্জীব। তবে, এখন আর মৃত্যু নয়, ভাবতে চান জীবন নিয়েই। এখন যেটা তাঁকে ভাবাচ্ছে তা হল, অনেকেই এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি জানেন না। হাসপাতালে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে না পারলে আর কোথায় যাওয়া যায়, সে সম্পর্কে অধিকাংশেরই ধারণা নেই। তাই বেঁচে থাকার লড়াই ছেড়ে দ্রুত মৃত্যুর পথকে বেছে নেন অনেকে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে হয়তো অনেকেই আর এ ভাবে ভাববেন না। বদলে ফেলবেন সিদ্ধান্ত। সঞ্জীবের কথায়, ‘‘পথ দুর্ঘটনার পরে যে পুনর্বাসন দরকার, সেটাই জানতাম না। একাধিক হাসপাতালে ও চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই জানতে পারিনি। বিকল্পের সন্ধান জানলে সব শেষ হয়ে গেল মনে হয় না।’’
চিকিৎসা চলাকালীন সঞ্জীবের বাবা তপনবাবু মারা গিয়েছেন। বাবাকে হারানোর আক্ষেপ থাকলেও বছর বত্রিশের যুবক এখন মায়ের পাশে থেকে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করতে চান। পায়ের স্নায়ু এখনও সম্পূর্ণ কাজ করছে না তাঁর। হুইলচেয়ারে ভরসা রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এ সবে আর ভয় পাচ্ছেন না সঞ্জীব। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ থেকেও যে শুরু করা যায়, সেটা জীবন দিয়ে বুঝেছি। কোনও সমস্যা থাকলে লড়াই চালাতে হবে। মৃত্যুর স্বাধীনতা নয়, বেঁচে থাকার স্বপ্নটাই জরুরি।’’