Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চন্দ্রিমা, সোনালিরাও কি গণ্ডি ছাড়ালেন, প্রশ্ন ধর্নায়

সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের মূল ফটক বন্ধ। সামনের রাস্তার উপরে বসে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ এবং রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য! তাঁদের নেতৃত্বে ধর্না-অবস্থান চালাচ্ছেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের শ’খানেক কর্মী-সমর্থক। পুলিশে ঘেরা জমায়েত থেকেই মাইকে বারবার সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে।

সিবিআই বিরোধী বিক্ষোভে কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সোনালি গুহ এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে শৌভিক দে-র ছবি।

সিবিআই বিরোধী বিক্ষোভে কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সোনালি গুহ এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে শৌভিক দে-র ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের মূল ফটক বন্ধ। সামনের রাস্তার উপরে বসে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ এবং রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য! তাঁদের নেতৃত্বে ধর্না-অবস্থান চালাচ্ছেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের শ’খানেক কর্মী-সমর্থক। পুলিশে ঘেরা জমায়েত থেকেই মাইকে বারবার সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে।

সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরের সামনে বৃহস্পতিবারের এই দৃশ্য চাঞ্চল্য তৈরি করেছে রাজ্য রাজনীতি এবং পরিষদীয় জগতে! ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে থেকে কেউ দলীয় বিক্ষোভে এ ভাবে অংশ নিতে পারেন? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা যে তদন্ত করছে, তার বিরুদ্ধে আইনমন্ত্রীই বা কী করে রাস্তায় নামেন? বিরোধী নেতারা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলছেন। রাজ্যের প্রাক্তন এক স্পিকার বলছেন, নৈতিকতা তো বটেই, সাংবিধানিক দায়িত্বের বিচারেও এমন কাজ করা যায় না!

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এখানে রাজনৈতিক সত্তাকে টেনে আনছেন। চন্দ্রিমাদেবীর ব্যাখ্যা, তিনি যেমন আইনমন্ত্রী, তেমনই দলের মহিলা সংগঠনের নেত্রীও। মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী হিসাবেই তিনি বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছেন। সিবিআইয়ের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের দিকে আঙুল তুলে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য, “সিবিআই যন্ত্র, নরেন্দ্র মোদী যন্ত্রী।” তাঁর অভিযোগ, শুধু বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদেরই গ্রেফতার-জেরা করা হচ্ছে। কিন্তু তা বলে আইনমন্ত্রী হয়েও এ ভাবে প্রতিবাদ? চন্দ্রিমাদেবী বলছেন, “এই আন্দোলনই বাংলা চেনে। আমরা এ ভাবেই আন্দোলন করে যাব!”

ডেপুটি স্পিকার সোনালিদেবীর ব্যাখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইলে এক সহযোগী (তিনিও মহিলা) বলেছেন, “ওঁর শরীরটা খারাপ। বাড়ি এসে শুয়ে পড়েছেন।” ডেপুটি স্পিকারের আচরণ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “এই নিয়ে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ফোরামে অনেক বিতর্ক হয়েছে। স্পিকার দলের টিকিটে নির্বাচিত হন ঠিকই। কিন্তু স্পিকার পদে যাওয়ার পরে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র ছাড়া অন্যত্র সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত নয়।” তিনি নিজেও বারুইপুরে তাঁর বিধানসভা এলাকা ছাড়া অন্যত্র রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন না বলেই স্পিকার জানাচ্ছেন। ডেপুটি স্পিকার যে নিজের কেন্দ্রের বাইরে সল্টলেকে রাজনৈতিক অবস্থানে সামিল হলেন, তার প্রেক্ষিতে স্পিকারের মন্তব্য, “ব্যক্তিগত ভাবে কে কী ভাবে দেখবেন, তাঁর ব্যাপার। আমাদের আগের স্পিকারও অনেক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যেতেন।”

প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম ছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। স্পিকার হওয়ার পরে কেন দলীয় ওই পদ তিনি ছেড়ে দেননি, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন ছিল। তবে তিনিও বলছেন, “আমি রাজ্য কমিটির বৈঠকে যেতাম। ব্রিগেড সমাবেশ শুনতে যেতাম। সেখানে বক্তৃতা করিনি। কোনও ধর্না-অবস্থানেও কখনও স্পিকার হিসাবে অংশ নিইনি।” হালিমের আরও বক্তব্য, “সংবিধানে কিছু ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। ডেপুটি স্পিকার এই ধরনের কর্মসূচিতে যেতে পারেন না। এমনকী, মন্ত্রীও সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছেন। তিনি কী করে একটা সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান-বিক্ষোভে যান?”

বিরোধীদের বক্তব্য সাংবিধানিক রীতি-নীতি-রেওয়াজ কিছুই এই জমানায় মানা হচ্ছে না। তাঁরা উদাহরণ দিচ্ছেন, গত ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সমাবেশ-মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন কলকাতার শেরিফ রঞ্জিত মল্লিক। সাংবিধানিক পদে শপথ নেওয়ায় তাঁর ওই কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা নয়। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা যে সতর্ক হননি, এই ঘটনাতেই তা স্পষ্ট!

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতায় নেমেছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। কিছু বলার হলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের আইনমন্ত্রী কথা বলতে পারতেন। তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা গোলমাল করে তদন্তটা ভেস্তে দিতে চাইছেন!” আর বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়েই তৃণমূলের নেতারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রীকে ওখানে হাজির থাকতে হচ্ছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE