Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্র যেত বাংলাদেশে, আসত জাল নোট

সোমবার ময়দান এলাকা থেকে জাল নোটের কারবারি পাকড়েই কলকাতার উপকণ্ঠের ওই কারখানার হদিস মেলে। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার, বিহারের মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিরা বিভিন্ন রাজ্যে ডেরা গড়ে নতুন করে কারবার ফাঁদছে।

বেআইনি: কাঁকিনাড়ার কারখানা থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: কাঁকিনাড়ার কারখানা থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

কারখানায় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র পাচার হচ্ছিল বাংলাদেশে। সেই অস্ত্র পাচারকারিদের হাত ঘুরেই সে দেশ থেকে এ দেশে ছড়িয়ে পড়ছিল জাল নোট। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থানার কাঁকিনাড়ার কারখানায় সোমবার সন্ধ্যায় হানা দিয়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে এমন তথ্যই এসেছে। বেআইনি কারবারের এমন যুগলবন্দিতে তাজ্জব এসটিএফ।

কারণ এর আগে এমন সংগঠিত কারবারের তথ্য তাদের ভাঁড়ারে নেই। সোমবার ময়দান এলাকা থেকে জাল নোটের কারবারি পাকড়েই কলকাতার উপকণ্ঠের ওই কারখানার হদিস মেলে। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার, বিহারের মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিরা বিভিন্ন রাজ্যে ডেরা গড়ে নতুন করে কারবার ফাঁদছে।

এ দিকে কাঁকিনাড়ার যে বাড়িতে লেদ মেশিন বসিয়ে অস্ত্র বানানো হচ্ছিল, তা বাড়িওয়ালা জানতেন না বলে দাবি করেছেন। স্থানীয় কাটাডাঙার বড় রাস্তা লাগোয়া গলিতে একটি তিন কামরার টালির চালের বাড়ি। আপাতত সে বাড়ি সিল করা হয়েছে। বাড়ির মালিক জহর সাউ বলেন, ‘‘আমার ছেলেরা বাড়ি দেখাশোনা করে। জানি না কাকে ওরা ভাড়া দিয়েছিল। আমি জানলে, ওদের জুতোপেটা করে বার করে দিতাম।’’ অথচ ওই চৌহদ্দিতে তাঁদের বসতবা়ড়ি। সেখান থেকে অস্ত্র কারখানা মেরেকেটে ১০ মিটার। কারখানায় কী তৈরি হচ্ছে, তা কেন দেখেননি? জহরের স্ত্রী গিরিজাদেবী বলেন, ‘‘ওদের কাজের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? মনীশ সিংহ নামের এক জন বাড়িটা ভাড়া নিয়েছিল। যা দেখার ছেলেরাই দেখত।’’ সেই ছেলেদের অবশ্য দেখা মেলেনি। পাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আমাদের সন্দেহ হলেও কিছু বলতে পারতাম না। কারখানায় কী চলছে, তা দেখাও সম্ভব ছিল না। কারণ সব সময় দু’-তিন জন দরজায় পাহারা দিতেন। সব বাইরের লোক। ছ’মাস ধরে কারখানাটি চলছিল।’’

এসটিএফের দাবি, কারখানায় তৈরি দেশি পিস্তল পাচারকারীরা বাংলাদেশে পৌঁছে দিত। আর তাদের হাত ধরেই এ পারে ঢুকত জাল নোট। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, এই দুইয়ের যোগসূত্রের পিছনে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার সকালেই ময়দান এলাকা থেকে শুকু শেখ, মহম্মদ আমজাদ রায়েন এবং মহম্মদ আব্দুল্লা নামে তিন জালনোট কারবারীকে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় এক লক্ষ টাকার জাল নোট। বাজেয়াপ্ত করা হয় ৪০টি অর্ধেক তৈরি দেশি পিস্তল। আমজাদ এবং আব্দুল্লা বিহারের এবং শুকু মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা। সে-ই জাল নোট নিয়ে আসত কলকাতায়। ধৃতদের জেরা করেই উঠে আসে এই কারখানার হদিস।

গোয়েন্দাদের দাবি, কারখানায় তল্লাশি চালানোর সময়ে ভিতরে তৈরি হচ্ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। সেখান থেকে ধরা পড়ে পাঁচ অস্ত্র কারবারী ও এক কারিগর। ধৃতদের নাম মহম্মদ সাবির, মহম্মদ সইদ আলম, মহম্মদ শাহনওয়াজ, মহম্মদ ফয়জ়ল ও মহম্মদ রাজ়ি। এ ছাড়াও মহম্মদ চাঁদ নামে এক কারিগরকেও ধরা হয়। সকলেই মুঙ্গেরের বাসিন্দা। ঘটনাস্থল থেকে কুড়িটি অর্ধেক তৈরি পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ-সহ লেদ মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

ওই কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, গত ছ’মাসে ওই কারখানায় কয়েকশো অসমাপ্ত অস্ত্র তৈরি হয়েছে। সেগুলি জালনোটের কারবারিদের হাত ধরে কালিয়াচক দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়েছে। পাচারের আগে কালিয়াচকের একটি গ্রামে যন্ত্রাংশ জোড়া দিয়ে অস্ত্রগুলি সম্পূর্ণ করা হত। সে জন্য সেখানেও তৈরি হয়েছিল অস্ত্র তৈরির একটি ইউনিট। গোয়েন্দারা জেনেছেন, প্রায় তিন হাজার টাকায় ওই পিস্তলগুলি পাইকারি দরে বিক্রি হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arms Factory Kankinara Bangladesh Fake Note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE