বাঁ দিকে, সিকিমের চুংথাং এলাকার এই ড্যাম প্রোজেক্ট ভেঙেই ঘটেছে বিপত্তি। ডান দিকে, রাস্তার ওপর দিয়ে নদীর জল বয়ে চলেছে তিস্তা বাজার এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
একাই সেনা ক্যাম্পের কোয়ার্টারে থাকি। সোমবার থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। মঙ্গলবার রাতে ১১টার মধ্যেখেয়েদেয়ে, ফোনে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে শুয়ে পড়েছিলাম। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। প্রচণ্ড হইহল্লা। প্রবল চিৎকার চারদিকে। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না, কী হচ্ছে। তার পরে কিছুটা ধাতস্থ হতে হুড়মুড় করে বাইরে বেরিয়ে আসি। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক জন বলল, নীচে তিস্তার জলে সব ভেসে গিয়েছে। আমাদের আবাসন, মূল শিবির সব পাহাড়ের একটু উপরের দিকে। নীচের রাস্তা ধরে নেমেই বড় মাঠ। সেখান থেকে তিস্তা নদী মোটামুটি ১৫ ফুট নীচে। বৃষ্টি হলে জল বাড়লেও এমন কোনওদিন হয়নি।
চেঁচামেচির আওয়াজ আসছিল পাশের বস্তি থেকেও। যার কাছে যা আলো ছিল, টর্চ, মোবাইলের আলো, সব জ্বেলে নীচের দিকে দেখেই আঁতকে উঠলাম! কোথায় আমাদের সেনা ছাউনি? কিছু নেই চারদিকে। বড় ট্রাক, জিপসি ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে ৪১টি গাড়ি পার্ক করা ছিল মাঠে। সেগুলির কোনও চিহ্ন নেই! নদীর ধারের একটা তাঁবুও নেই। সামনের দিকে এগোতেই সবারই একই প্রশ্ন, আমাদের লোকজন সব কোথায়? বেশির ভাগ গাড়ি, তাঁবুতেই তো ওরা ছিল। ভোরে প্রাতরাশ করে সকলের প্রশিক্ষণে বেরনোর কথা ছিল। কেউ নেই। সব ফাঁকা।
জলের সঙ্গে কাদামাটি, পাথর-নুড়ি, গাছের ডাল, শিকড় থেকে ভাঙা কংক্রিট— উপর থেকে কী না নেমে এসেছে! ইতিমধ্যে সদর দফতরে ফোন করা হল। রাতভর খোঁজাখুঁজির পরে নদীর ধারে আটকে পড়া জনা পাঁচেককে উদ্ধার করা গেল। এঁদের তিন জন পাশের বস্তির বাসিন্দা। সব খোঁজাখুঁজি করে শেষে সদর দফতর থেকে আমাদের জানানো হল, ২৩ জন জওয়ান নিখোঁজ। প্রশিক্ষণ সেল থেকে নামের তালিকা মেলানো শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তের ছাউনি থেকে ওঁরা এসেছিলেন, সেনা প্রশিক্ষণে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তিস্তা ওঁদের বাড়ি ফিরতে দিল না।
(লেখক সেনাকর্মী, নাম পরিবর্তিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy