Advertisement
E-Paper

অন্য রাগ থেকে হামলার হুজুগ,ধারণা পুলিশের

হাবরা স্টেশনে মহিলা নিত্যযাত্রী ও পুলিশের উপরে হামলা এবং ট্রেনে ভাঙচুরের ঘটনায় যে আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তারা কেউই নিত্যযাত্রী নয়। মাতৃভূমির কামরা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকল না কি পুরুষদের জন্য, আদতে তা নিয়েও তাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল না বলেই পুলিশের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৪

হাবরা স্টেশনে মহিলা নিত্যযাত্রী ও পুলিশের উপরে হামলা এবং ট্রেনে ভাঙচুরের ঘটনায় যে আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তারা কেউই নিত্যযাত্রী নয়। মাতৃভূমির কামরা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকল না কি পুরুষদের জন্য, আদতে তা নিয়েও তাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল না বলেই পুলিশের দাবি। এমনকী যে নিত্যযাত্রী পুরুষরা অবরোধ শুরু করেছিলেন, তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না, স্থানীয় কিছু যুবক কেন সঙ্গে জুটে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটাল। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, রেল ও পুলিশের উপরে নানা কারণে পুরনো রাগ থেকেই এমন মওকা হাতছাড়া করতে চায়নি ওই যুবকেরা। ট্রেন ভাঙচুরের পিছনেও সেই রাগই কাজ করেছে। কেউ কেউ আবার স্রেফ হুজুগে পড়ে হাতের কাছে লাঠিসোঁটা, পাথর পেয়ে হামলা শুরু করে দিয়েছিল।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

ধৃতদের এক জন যেমন নগেন ভকত। হাবরা স্টেশনের পাশে শ্রীনগর ২৯ নম্বর রেলগেট এলাকায় থাকে বছর বত্রিশের এই যুবক। এলাকাতেই সব্জির ব্যবসা আছে। লোকাল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াতের প্রশ্নই ওঠে না। তা হলে তার কীসের রাগ পুলিশের উপরে? মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে-পড়শিদের থেকে জানা গেল, গত কয়েক বছর ধরে রেলের কোয়ার্টার দখল করে থাকে ওই যুবক। এক সময়ে সাট্টার ঠেক বসাত। হুকিং করে আলো জ্বলত বাড়িতে। ক’দিন আগে হুকিংয়ের লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছিল রেল পুলিশ। রেলের কোয়ার্টার থেকেও তাকে উচ্ছেদ করা হতে পারে বলে কানাঘুষো। গত কয়েক বছর ধরেই রেললাইনের ধার বরাবর হাবরা স্টেশনের দু’পাশে সাট্টা-জুয়ার ঠেক কিংবা মদের আসরের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালায় পুলিশ। যে কারণে নগেনের মতো সাট্টার ঠেকের পুরনো কারবারিদের অনেককে পেশাও বদলে ফেলতে হয়েছে। পুলিশের ধারণা, এ সবেই পুলিশ, রেলের উপরে রাগ পুষে রেখেছিল নগেন। রেল অবরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাই ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি, মারধরে হাত লাগায় ওই যুবক।

নগেন নিজে কী বলছে?

রেল পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, গোলমালের ছবি মোবাইলে তুলে ফেসবুকে আপলোড করার ইচ্ছে ছিল তার। সে জন্যই গিয়েছিল স্টেশনে!

যুগল রানা নামে বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক থাকে স্টেশনের পাশে তেঁতুলতলা রেল কলোনিতে। গ্রেফতার হয়েছে সে-ও। জানা গিয়েছে, ইদানীং তেঁতুলতলা বাজারে মুরগির কারবার শুরু করলেও এক সময়ে সাট্টার আসর বসানোর জন্য এলাকায় ‘নামডাক’ ছিল যুগলের। পুলিশ এক বার গ্রেফতারও করেছিল। পরে সাট্টার ব্যবসা গোটাতে হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানালেন, এই যুবকের নেতৃত্বেই রেল কলোনি থেকে পিল পিল করে লোক বেরিয়ে স্টেশনে গিয়ে হুজ্জুত শুরু করে। এলাকায় পরিচিত মুখ ‘উগ্র স্বভাবের’ যুগল। সাত-আট জন ছেলের দল সব সময়ে দেখা যায় সঙ্গে। রেলের জমি দখল করে থাকে।

ধৃত রঞ্জন শীলের বাড়ি শ্রীপুর ২৯ নম্বর রেলগেট এলাকায়। সে-ও রেলের কোয়ার্টার দখল করে বসে আছে। এক সময়ে শ্রীপুর রেলরোডে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। কিন্তু সেখানে এক যুবকের আত্মহত্যার পরে তাঁর প্রেমিকাকে হেনস্থা করা, স্কুটার ভাঙার অভিযোগে এলাকার লোকজন পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিল। রেল পুলিশের উপরে পুরনো রাগেই সে মঙ্গলবারের গোলমালে জড়ায় বলে অনুমান পুলিশের।

মিঠুন দাস ওরফে বুল্টনের বয়স সবে উনিশ। ৩ নম্বর রেল কলোনির এই সদ্য তরুণ সিনেমা হলে কাজ করে। পাড়া-পড়শিদের অনুমান, স্রেফ হুজুগে পড়ে গোলমালে ভিড়েছিল। না হলে ছা-পোষা ছেলেটার নিত্যযাত্রী মহিলাদের উপরে রাগের কারণ দেখছেন না তাঁরা!

শ্রীপুর ২৯ নম্বর কলোনির বাসিন্দা রাজু দাসও ধরা পড়েছে। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল বিক্রি করে সংসার চলে। শ্রীনগর এলাকায় তার বাড়ি থাকলেও থাকেন রেলের কোয়ার্টার দখল করে। বন্ধুদের সঙ্গে হুজুগে মেতেই সে ঘটনার সময়ে স্টেশনে গিয়েছিল বলে তার পরিবার-পরিজনের দাবি।

বছর আঠেরোর প্রসূন রায়চৌধুরীও গোলমালে জড়াল কেন, বুঝতে পারছেন না পড়শিরা। উল্টোডাঙায় গেঞ্জির দোকানে কাজ করে যুবক। তার নিজের দাবি, গণ্ডগোলে যায়নি সে।

স্টেশনের দু’পাড়ে কলোনি এলাকার এই সব বাসিন্দা অবরোধে সামিল কেন হল, কেনই বা ভাঙচুর-মারধর করল, তা ঠাহর করতে পারছেন না নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। অশোকনগরের এক ব্যক্তির বললেন, ‘‘আমরা কিছু লোক শান্তিপূর্ণ ভাবেই অবরোধ করছিলাম। একে তো পুলিশ এসে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করল। আবার দেখি অসংখ্য লোক হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল স্টেশনে।’’ ওই যাত্রীর কথায়, ‘‘একটা অল্পবয়সী ছেলেকে হাতে ধরে বললাম, ভাই সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করিস না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।’’ অবরোধে যোগ দেওয়া অন্য এক যাত্রীর কথায়, ‘‘যারা হামলা চালাল, তাদের কাউকে তো দেখে নিত্যযাত্রী বলে মনেই হয়নি।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, পুলিশ বা রেলের উপরে পুরনো রাগ থাকতেই পারে এলাকার লোকের। হঠাৎ একটি অবরোধের সূত্র ধরে তা এমন ভয়াবহ আকার নিল কেন? পিছনে অন্য ইন্ধন ছিল? তৃণমূল অভিযোগ তুলেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সিপিএমের কিছু লোক উস্কানি দিয়েছে। না হলে ঘটনা এত বড় আকার নিত না।’’ অভিযোগ যথারীতি মানতে চায়নি সিপিএম। দলের নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য এ দিনও বলেন, ‘‘খামোখা লোক খেপিয়ে আমাদের কী লাভ? ওরা এখনও সবেতেই সিপিএমের জুজু দেখছে।’’ মঙ্গলবার ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হলে চার দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

rail police arrested hooligan train attack matribhumi attack rail policeholligan attack angry hooligan local youths matribhumi local youth attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy