Advertisement
E-Paper

ধৃত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অপহরণের নালিশ

ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিনের বিরুদ্ধে এ বার তাঁরই দুই ঘনিষ্ঠ শাগরেদকে অপহরণের অভিযোগও উঠল। মালদহের রতুয়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ইয়াসিনের এই দুই শাগরেদের নাম মন্টু আলি ও সফিকুল ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬

ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিনের বিরুদ্ধে এ বার তাঁরই দুই ঘনিষ্ঠ শাগরেদকে অপহরণের অভিযোগও উঠল। মালদহের রতুয়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ইয়াসিনের এই দুই শাগরেদের নাম মন্টু আলি ও সফিকুল ইসলাম।

জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকায় গত ২৩ অগস্ট খুদু মণ্ডল নামে ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়। মন্টুর দাদা ভুটু আলি পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে তাঁর ভাই ও সফিকুলের কাছে। ইয়াসিনই তাঁদের অপহরণ করেছেন বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ভুটু। জেলা পুলিশের একাংশও তেমনই সন্দেহ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ভাড়াটে খুনি সন্দেহে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে ঋষিদেব মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পরেই ইয়াসিন সতর্ক হয়ে যান। যে কারণে তিনি পালাতে চেয়েছিলেন। পরে রামপুরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তাই গোপন কথা যাতে ফাঁস না হয়ে যায়, সে কারণে মন্টু ও সফিকুলকে অপহরণ করাও অসম্ভব নয়। তবে গোটা বিষয়টিই তদন্ত সাপেক্ষ। আপাতত মন্টু ও সফিকুলের খোঁজ করা হচ্ছে।

তবে ইয়াসিন এখনও বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করে চলেছেন। ফলে ভাড়াটে খুনি ও তাঁকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার আগে আরও কিছু অকাট্য প্রমাণ পেতে চাইছে পুলিশ। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। আরও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’

ইয়াসিনকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও রীতিমতো ক্ষোভ ছড়িয়েছে। দলের সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রতুয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে নির্দল হিসেবে জেতার পরে ইয়াসিন তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর তৃণমূলের দুই সদস্য সহ ইয়াসিন বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে বোর্ড তৈরি করেন। ইয়াসিন পূর্ত কর্মাধক্ষ হন। তার কিছু দিন বাদে ২০১৩ সালের ১ অগস্ট বাহারালে প্রকাশ্য জনসভায় ফের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের হাত ধরে আনুষ্ঠানিক ভাবেও দলে যোগ দেন ইয়াসিন। তারপর থেকে এলাকায় দলের যে কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে সর্বাগ্রে দেখা যেত বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য এদিনও দাবি করেছেন, ‘‘তিনি আমাদের দলের কেউ নন। কোনও সাংগঠনিক পদেও তিনি ছিলেন না। ফলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন নেই। আর ইয়াসিন কর্মাধ্যক্ষের পদে থাকবেন কি না, তা প্রশাসনের বিষয়।’’ চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক জয়ন্ত মন্ডল বলেন, ‘‘ধৃতের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ যাতে খারিজ হয়, প্রশাসনের তরফে সেই প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।’’

ইয়াসিন নিজে অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, তিনি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার। পাশাপাশি ইয়াসিনের অনুগামীরাও দাবি করেছেন, বারবার বিতর্কে জড়ালেও এলাকায় তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেটাই অনেকেরই ঈর্ষার কারণ। এই অনুগামীদের দাবি, সেই ঈর্ষা থেকেই ইয়াসিনকে বারবার বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছেন দলেরই অনেক নেতা। মালতিপুরের বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘‘ইয়াসিনের এক কাকা সিপিএমের উপপ্রধান ছিলেন। কিন্তু ইয়াসিনকে কখনও বামেরা প্রশ্রয় দেয়নি। ইয়াসিন পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে শুনেছি।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ অবশ্য ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মোয়াজ্জেম।

পুলিশ জানিয়েছে, আগের ৯টি ও হালের ২টি মিলিয়ে মোট ১১টি গুরুতর মামলা রয়েছে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে নিজের প্রথম স্ত্রীকে খুনের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ জানায়, ইয়াসিন রীতিমতো দাপুটে নেতা। তিনি রতুয়া থানার পিছনে থানার নামে থাকা ১৪ বিঘার একটি আমবাগানও দলবল নিয়ে দখল করে নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তা দখলমুক্ত করা হয়েছে। ইয়াসিনের নামে যে ক’টি মামলা রয়েছে সেগুলি একত্রিত করে এক সঙ্গে তদন্ত চালানোর কথাও ভাবছে পুলিশ। এসডিপিও রানাবাবু বলেন, ‘‘ইয়াসিনের বিরুদ্ধে পুরনো সব মামলাও ফের নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

malda ratua mohammed yasin malda tmc leader malda tmc leader aide aide abducted
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy