হাতে সাপ নিয়ে তখন অভিনয় করছিলেন কালীদাসী মণ্ডল। সেই সময়ই তাঁকে ছোবল মারে সাপটি।
বিষধর সাপের ছোবলে মৃত্যু হল মনসা মঙ্গল পালা গানের প্রধান শিল্পী এক মহিলার। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাসনাবাদ থানার বরুণহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মহিলার নাম কালীদাসী মণ্ডল (৬৩)। তাঁর বাড়ি পার হাসনাবাদের কদমতলা গ্রামে। হাসপাতাল কাছে থাকা সত্ত্বেও সাপের ছোবল মারার পর দীর্ঘ তিন ঘণ্টা তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরে সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পর ওই পালা গানের দলের সঙ্গে যুক্ত ওঝা দয়াল ঠাকুর-সহ দু’জন পালিয়েছে। মৃতের ভাই পরিতোষ মণ্ডলের দাবি, ‘‘মনসা মঙ্গলের ‘মনসা ভাসান’ এবং ‘জ্যান্ত সাপের ভাসান’ পালা করে দিদির বেশ নামডাক হয়েছিল। তা সহ্য করতে না পেরে দলের কেউ ষড়যন্ত্র করে বিষহীনের পরিবর্তে বিষধর সাপ এনেছিল। সাপের ছোবলের পর দিদিকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে ঝাড়ফুঁক করা হয়।’’ গোটা ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে মাঠে কাজ করা কালীদাসী গত কুড়ি বছর হচ্ছে মনসা মঙ্গল পালা গানের সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক মাস হচ্ছে জীবন্ত সাপ নিয়ে মনসার ভূমিকায় কালীদাসীর সুনাম ছড়িয়েছে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বসিরহাট মহকুমায়। এমনকী বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও তিনি অনুষ্ঠান করতেন। আশেপাশে যেখানেই মনসার ভাসান গান হয় ডাক পড়ে কালীদাসীর। তিনি একটি পালা গানের দলও খুলেছেন। গত দু’দিন হচ্ছে হাসনাবাদের বরুণহাট বাজারের পাশে মনসা পুজো উপলক্ষে এক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বাড়তি চার হাজার টাকার বিনিময়ে জীবন্ত সাপ নিয়ে পালা গান করার জন্য কালীদাসী মণ্ডলের ভাসান যাত্রা দলের ডাক পড়ে।
দেখুন ভিডিয়ো
পুলিশ জানায়, গত রাতে সেখানে গলায় কেউটে এবং হাতে পদ্মগোখরো সাপ নিয়ে মনসা সেজে পালাগান করছিলেন কালীদাসী। রাত তখন ৭টা। সাপ নিয়ে গান করে দর্শকদের কাছ থেকে টাকা তোলার সময়ে হঠাৎ কঁকিয়ে ওঠেন কালীদাসী। হাত দেখিয়ে বলেন সাপে ছোবল মেরেছে। এ দিন কালীদাসীর ছেলে মেঘনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘সাপের ছোবলে মা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তখন তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝা বলে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে না, ঝাড়ফুঁকে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই বলে মাকে স্থানীয় একটি ধর্মীয় স্থানে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ২-৩ ঘণ্টা ধরে ঝাড়ফুঁকের পর মা যখন গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন বিপদ বুঝে সরে পড়ে ওঝা। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ স্থানীয়রা হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলের বিল ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।’’
মৃতের ছেলে, বৌমা, ভাই-সহ আত্মীয় পরিজনদের বক্তব্য, বাড়তি টাকার জন্য বিষহীন সাপ নিয়ে গান করতেন কালীদাসী। তা জানত হাড়োয়ায় বাসিন্দা সাপুড়ে তথা ওই ওঝা। তা হলে কেন বিষধর সাপ আনা হল? কেনই বা দুর্ঘটনার পর দলের দু’জন পালাল? পুলিশ সবটাই খতিয়ে দেখছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy