Advertisement
E-Paper

নিশানায় আগেই ছিলেন প্রতিবাদী, বলছেন বন্ধুরা

যে কোনও অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বভাব ছিল তাঁর। আর এই প্রতিবাদী স্বভাবের জন্যই সালকিয়া বিবিবাগান এলাকার তরুণ অরূপ ভাণ্ডারী অনেক আগে থেকেই দুষ্কৃতীদের নিশানা ছিলেন বলে মনে করছেন তাঁর বন্ধু ও গত বুধবার রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র একটি ঘটনা ঘিরে গণ্ডগোলের জেরে অরূপকে পিটিয়ে মারা হল, ব্যাপারটা এত সোজা নয়। দুষ্কৃতীরা অনেক দিন ধরেই তাঁর উপরে চড়াও হওয়ার সুযোগ খুঁজছিল।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩১
অরূপ ভাণ্ডারী

অরূপ ভাণ্ডারী

যে কোনও অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বভাব ছিল তাঁর। আর এই প্রতিবাদী স্বভাবের জন্যই সালকিয়া বিবিবাগান এলাকার তরুণ অরূপ ভাণ্ডারী অনেক আগে থেকেই দুষ্কৃতীদের নিশানা ছিলেন বলে মনে করছেন তাঁর বন্ধু ও গত বুধবার রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র একটি ঘটনা ঘিরে গণ্ডগোলের জেরে অরূপকে পিটিয়ে মারা হল, ব্যাপারটা এত সোজা নয়। দুষ্কৃতীরা অনেক দিন ধরেই তাঁর উপরে চড়াও হওয়ার সুযোগ খুঁজছিল।

বন্ধুদের মতে, সেই রাতে যে ভাবে বেছে বেছে অরূপকে পেটানো হচ্ছিল তাতেই বোঝা যায়, অনেক আগে থেকে তাঁকে নিশানা করে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। বস্তুত, প্রচণ্ড আক্রোশ থাকলে যে ভাবে আঘাত করা হয়, অরূপের দেহে সে রকমই চোট ছিল বলে পুলিশকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন। গত বুধবার রাতে সরস্বতী পুজোর ভাসানের সময়ে স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক জন তরুণীকে উত্যক্ত করছিল কিছু যুবক। অরূপ প্রতিবাদ করায় ওই তৃণমূল কার্যালয়ের সামনেই তাঁকে ফেলে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারা হয়। এমনকী এক দুষ্কৃতী পার্টি অফিসের সামনে রাখা একটি লোহার চেয়ার দিয়ে অরূপের মাথায় ও শরীরের নানা অংশে ক্রমাগত আঘাত করছিল বলেও পরে জানা যায়। অরূপের বন্ধুদের কথায়, “সাপকে যে ভাবে পিটিয়ে মারা হয়, সে ভাবেই পিটিয়ে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল ওকে।”


এখানেই পেটানো হয়েছিল অরূপ ভাণ্ডারীকে। —ফাইল চিত্র

কিন্তু দুষ্কৃতী-নিশানায় কেন ছিলেন অরূপ? স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, অরূপের প্রতিবাদী চরিত্রই এর প্রধান কারণ। বুধবার রাতে অরূপ যে ভাবে এলাকার তরুণীদের নিগ্রহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এলাকায় গৃহবধূ নির্যাতন হোক বা কোনও ব্যবসায়ীর উপর চাঁদার জুলুম ব্যায়াম করা সুঠাম চেহারা নিয়ে সবেতেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন অরূপ। এটাই স্থানীয় কয়েক জন উঠতি দুষ্কৃতীর কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অরূপের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল তিন বছর আগে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের একটি ঘটনাও। যে সংঘর্ষে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অরূপ। তাতে পিছু হটেছিল দুষ্কৃতীরা (তাদের মধ্যে অরূপ-হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত পাঁচ যুবকও ছিল)। বন্ধুদের দাবি, অন্যান্য আক্রোশের পাশাপাশি ওই পুরনো সংঘর্ষের বদলা নিতেও অরূপকে ‘টার্গেট’ করে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাতে অরূপ তরুণী-নিগ্রহের প্রতিবাদ করতেই বদলার সুযোগ চলে আসে তাদের সামনে।

কী ঘটেছিল তিন বছর আগে?


অরূপ ভাণ্ডারি হত্যা-সহ সাম্প্রতিক নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গ
লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সদস্যরা। মঙ্গলবার সিউড়িতে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সে বছর সালকিয়া হিন্দু স্কুলের মাঠে একই পাড়ার দুই দলের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচ হয়েছিল। একটি দল ছিল অরূপদের। আর একটি দলে ছিল অভিযুক্ত পাঁচ যুবক-সহ আরও কয়েক জন। খেলায় ৬-০ গোলে এগিয়ে ছিলেন অরূপরা। অভিযোগ, সেই সময়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়েরা অরূপের দলের খেলোয়াড়দের মারতে শুরু করে। এর প্রতিবাদ করেন অরূপ। তিনিও বিপক্ষ খেলোয়াড়ের মুখে ঘুসি চালিয়ে দেন। এর পরেই গণ্ডগোলে খেলা ভেস্তে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে দিন সন্ধ্যায় মাঠের মারপিটের বদলা নিতে একদল ছেলে চড়াও হয় অরূপদের উপর। কিন্তু অরূপ ও তাঁর সঙ্গীরা রুখে দাঁড়াতে পিছু হটে হামলাকারীরা।

অরূপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বুধবার রাতে একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়া যুবক অভিজিত্‌ বসু এ দিন বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকেই অরূপকে নিশানা করে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু অরূপ তাতেও দমে যায়নি। নিজের স্বভাবও বদলায়নি।” অভিজিত্‌ জানান, সেই রাতে বিসর্জন সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁরা তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে আসতেই ৬-৭ জন তাঁদের ঘিরে ধরে। প্রথমে তাঁকে মেরে নর্দমায় ফেলে দেয়। এর পর লাঠি, রড, লোহার চেয়ার দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ধরে অরূপকে রাস্তায় ফেলে পেটায় তারা। অভিজিত্‌দের ক্ষোভ, রাস্তায় দু’পাশে দাঁড়িয়ে অরূপকে পেটানোর দৃশ্য দেখেছিলেন বহু লোক। কিন্তু কেউই বাঁচাতে আসেনি।


পাড়ার তরুণীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করে নিহত হন অরূপ ভাণ্ডারী।
ওই খুনের প্রতিবাদে মিছিল বাঁকুড়ায়। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

অভিজিত্‌ বলেন, “আমাকে ছেড়ে ওকে যে ভাবে মারছিল, মনে হচ্ছিল ওরা অরূপকে খুন করতেই এসেছে। অরূপকে সরিয়ে এলাকার প্রতিবাদটাই স্তব্ধ করতে এসেছিল ওরা।”

debashis das arup bhandari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy