প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ‘প্রমাণ লোপাটে’ নিজের এবং এক অনুচরের ইমেল আইডি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র মুছে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেছে সিবিআই। তবে তার পরেও শেষরক্ষা হয়নি। সিবিআই জানিয়েছে, যে দু’জনের কাছে ওই তালিকা সংক্রান্ত ইমেল গিয়েছিল তাঁদের সূত্র ধরেই সুজয়কৃষ্ণ ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-র যোগসূত্রের খোঁজ মিলেছে। সেই তথ্য চার্জশিটেও পেশ করেছেন তদন্তকারী অফিসার। সিবিআই সূত্রের ব্যাখ্যা, ইমেল মুছে ফেলা থেকেই স্পষ্ট যে দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত এবং তদন্ত শুরু হওয়ার পরে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন। তাই চার্জশিটে প্রমান লোপাট এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারাও যুক্তকরা হয়েছে।
তবে অনেকে এ-ও বলছেন, যে ইমেল আইডি থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছিল তা যে সুজয়কৃষ্ণেরই সেই সংক্রান্ত তথ্যও সিবিআইকে কোর্টে পেশ করতে হবে। না হলে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। সিবিআই অবশ্য ইমেল মোছার পাশাপাশি লেনদেনের হিসাব লেখা ডায়েরি এবং কথোপকথনের রেকর্ডিং-সহ মোবাইল ফোন নষ্টের কথাও চার্জশিটেউল্লেখ করেছে।
চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক নিয়োগে ১৫৭ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম-তালিকা দয়াল হাজরা নামে সুজয়কৃষ্ণের এক দালাল ইমেল মারফত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার এক মহিলা রিসেপশনিস্টকে পাঠিয়েছিলেন। সেই মহিলা ওই তালিকা সুজয়কৃষ্ণের ইমেলে পাঠান। তিনি সেই তালিকা অরবিন্দ রায়বর্মণ এবং দীপক বিশ্বাসকে ইমেল করে পাঠান। পরবর্তী কালে সুজয়কৃষ্ণ নিজের এবং নিখিল হাতি নামে তাঁর এক অনুচরের ইমেল আইডি মুছে ফেলেন। সেগুলি পুনরুদ্ধার করা যায়নি। তবে তদন্তকারীরা জানান, অরবিন্দ এবং দীপকের ইমেল তাঁরা পরীক্ষা করতে গিয়ে সুজয়কৃষ্ণের ওই ইমেলের সন্ধান পান এবং কোন উৎস থেকে ওই তালিকা এসেছিল তারও সন্ধান পান। অমিতাভ দত্ত নামে আরেক দালাল ৮৫ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা সুজয়কৃষ্ণকে পাঠিয়েছিলেন। সেই সূত্রও তদন্তকারীদের হাতে আছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন যে ওই ২৪২ জন অযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে ৬১ জন চাকরি পেয়েছেন।
চার্জশিটে সিবিআই আরও লিখেছে যে বিভিন্ন দালালেরা অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা এনে দিত ডায়েরিতে তার হিসাব লিখতেন সুজয়কৃষ্ণের অনুচর নিখিল হাতি। তেমন কিছু ডায়েরি ওই চক্রের দালালদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হলেও সুজয়কৃষ্ণের ডায়েরি মেলেনি। সিবিআই দাবি করেছে যে, তারা এই মামলার তদন্তভার নেওয়ার পরে ওই ডায়েরি সুজয়কৃষ্ণ নষ্ট করে দেন। শেখ আব্দুল সালাম নামে এক দালালের ফোনে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ডিং ছিল। চার্জশিটে তদন্তকারী অফিসার দাবি করেছেন যে তদন্ত শুরু হওয়ার পর সালামকে হুমকি দেন সুজয়কৃষ্ণ এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য সেই ফোনটিও নষ্ট করে দেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)