E-Paper

শীর্ষ নেতাদের খুশি করেই কি বিধায়কের টিকিট জীবনকৃষ্ণের

ইডির সূত্রের দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদায় করা টাকা সাধারণত চার ভাগ করতেন জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর এজেন্টরা। দু’টি ভাগ দলের শীর্ষ স্তরে এবং এসএসসি কর্তাদের কাছে পাঠানো হত বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১০
জীবনকৃষ্ণ সাহা।

জীবনকৃষ্ণ সাহা। —ফাইল চিত্র।

নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা নিয়মিত শীর্ষ নেতাদের পৌঁছে দেওয়ার পুরস্কার হিসেবেই ২০২১এ বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা কেন্দ্রের টিকিট জীবনকৃষ্ণ সাহা পেয়েছিলেন বলে প্রাথমিক তথ্য উঠে আসছে। একদা জীবনকৃষ্ণের কার্যত ছায়াসঙ্গী, তাঁর অন্তরঙ্গ বলয়ের এক ব্যক্তির বয়ান সম্প্রতি নথিভুক্ত করেছে ইডি। তাতে সামগ্রিক নিয়োগ দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে শাসকদলের নব‍্য বিধায়কের ভূমিকা অনেকটাই স্পষ্ট।

তদন্তকারীদের দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায এবং ইডি, সিবিআইয়ের মামলায় জামিনে মুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের ঘনিষ্ঠতার নানা সূত্র তো মিলেইছে। সেই সঙ্গে তদন্তে উঠে আসছে, ওই মামলায় জেল হেফাজতে থাকা দুর্নীতি চক্রের আর এক মিডলম‍্যানপ্রসন্ন রায়ের সঙ্গে অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থার একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন জীবনকৃষ্ণ।তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রসন্ন মারফত এসএসসি কর্তাদের কাছে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন শাসক দলের সেই নেতা।

ইডির সূত্রের দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদায় করা টাকা সাধারণত চার ভাগ করতেন জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর এজেন্টরা। দু’টি ভাগ দলের শীর্ষ স্তরে এবং এসএসসি কর্তাদের কাছে পাঠানো হত বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হয়েছে। আরও দাবি, বাকি দুই ভাগ জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর এজেন্টের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হত বলে প্রাথমিক ভাবে নানা সূত্র পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তকারীদের কথায়, বছর দুয়েক আগে জীবনকৃষ্ণের দু’টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই। দু’টি ফোনের সূত্রে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছিল। এখন জীবনকৃষ্ণের আরও দু’টি মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে প্রভাবশালী যোগের আর্থিক লেনদেনের হদিস আরও স্পষ্টতর হয়ে উঠছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত জীবনকৃষ্ণের আত্মীয়-স্বজন এবং ঘনিষ্ঠদের নামে, বেনামে বিবিধ সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যা হিসেব মিলছে তাতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। গত সাত বছর ধরে ওই সব সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন চলেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, জীবনকৃষ্ণের ভাগে যদি নিয়োগ দুর্নীতির ৩০ কোটি পড়ে থাকে, তা হলে ওই প্রভাবশালী বিধায়কের মাধ‍্যমে মোট দুর্নীতির বহর ১০০ কোটি টাকার কম হবে না। কারণ অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে জীবনকৃষ্ণদের আদায় করা টাকা সাধারণত চার ভাগ হত।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, অন্তত ১০-১২ বছর ধরে জীবনকৃষ্ণের পরিবারের অত‍্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ব‍্যক্তির বয়ানে দুর্নীতির নানা খুঁটিনাটি দিক উঠে এসেছে। জীবনকৃষ্ণ ও তাঁর বাবার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি তাঁদের ব‍্যবসায়িক লেনদেন বা সম্পত্তির বিষয়ে অনেকটাই ওয়াকিবহাল বলে দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, অযোগ্যপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং ওই টাকা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ওই ব্যক্তির ভূমিকা ছিল। প্রভাবশালীদের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের যোগাযোগেরও তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বলে দাবি। দু’দফায় তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করেছে ইডি। পরে আরও কয়েক দফায় তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হবে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। নিয়োগ দুর্নীতির চক্রে জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগাযোগের বিষয়টি ওই ব্যক্তি স্পষ্ট করেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের কথায়, জীবনকৃষ্ণের মারফত শতাধিক অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক সূত্র মিলেছে। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, কিছু নামের তালিকা ও টাকা জীবনকৃষ্ণেরা প্রভাবশালীদের কাছে পাঠালেও শেষমেশ তাঁদের চাকরি হয়নি। কয়েক জনের টাকা ফেরতও দিতে পারেননি জীবনকৃষ্ণ। পরে তাঁদের চাকরির আশ্বাস দেওয়া হলেও এর মধ্যে হাই কোর্টে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার ভিত্তিতে তদন্তে নামে সিবিআই ও ইডি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jiban Krishna Saha TMC MLA TMC Bengal SSC Recruitment Case financial corruption

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy