রাজ্যে বুথ বেড়ে হতে চলেছে প্রায় এক লক্ষ। ফলে সমসংখ্যক বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, স্থায়ী পদে কর্মরত কর্মী-আধিকারিকদেরই বিএলও হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিএলও নিয়োগের প্রশ্নে জেলা প্রশাসনগুলির তরফে ডাকা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। যদিও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর (সিইও) সূত্রের বক্তব্য, এই কাজ আংশিক সময়ের। ছুটির দিন বা কোনও ফাঁকা সময়েও তা করা সম্ভব। তা ছাড়া যেখানে এক জন শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের যে এ কাজে নিয়োগ করা যাবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, গ্রুপ-সি এবং তার উপরের স্তরের কর্মীদের থেকে বিএলও নিয়োগ করতে হবে। পুরসভা, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের স্থায়ী কর্মীদেরও নিয়োগ করা যাবে। কোনও কারণে সরকারি কর্মী না পাওয়া গেলে তখন জেলাশাসককে সেই শংসাপত্র দিয়ে অনুমতি নিতে হবে সিইও-র। অনুমতি গ্রাহ্য হলে তখন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগ করা হতে পারে।
প্রশাসনিক মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষকদেরই এই কাজে নিয়োগ করা হত। কিন্তু তাতেও সমস্যা হয়েছে। কারণ, ২৬ হাজার তেমন শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে আদালতের বিচারাধীন। ফলে সেই সংখ্যক শিক্ষককে আপাতত বাদ রেখেই বিএলও নিয়োগ করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই কমিশনের বেঁধে দেওয়া বিধি অনুযায়ী বিএলও নিয়োগ করতে গিয়ে অন্যান্য স্থায়ী কর্মীদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনগুলি ডাকছে শিক্ষকদেরই একাংশকে।
শুঁড়াকন্যা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা পালিত জানান, বুথ লেভেল অফিসারের জন্য তাঁদের স্কুলের ছ’জন শিক্ষিকাকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা কোনও একটি বিষয় পড়ানোর জন্য একমাত্র শিক্ষিকা। সুদেষ্ণা বলেন, “চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্লাস করার পাশাপাশি বিএলও-র কাজ করতে হবে। কিন্তু আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সারাদিন ঘোরাঘুরি করে বিএলও-র কাজ করার পরে স্কুলে এসে পড়ানোর সময় মেলে না। এই কাজ সম্ভবত ভোট আসা পর্যন্ত চলবে। সেপ্টেম্বরে উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা। ফলে ক্লাসগুলো তাঁরা যদি নিতে না পারেন, তা হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম কী ভাবে শেষ হবে?”
ফুলবাগানের ডঃ শ্যামাপ্রসাদ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা সুলগ্না মুন্সী জানান, আট জন শিক্ষককে বিএলও হিসেবে নেওয়া হয়েছে। স্কুলে প্রায় ১৩০০ মতো পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে আট জনকে বিএলও-র কাজে ব্যবহার করলে পড়াশোনা যথেষ্ট ক্ষতি হবে। সুলগ্না বলেন, “আমি চিঠি দিয়ে বলেছি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের যদি ছেড়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে, সেই সম্ভাবনা কার্যত নেই।” বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির এক নেতার কথায়, “কেন্দ্রের সরকার নতুন শিক্ষা নীতিতে পরিষ্কার বলেছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষা বহির্ভূত কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সেটা মানছে না। এমনিতেই শিক্ষকের অভাবে ছাত্রছাত্রীদের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।”
কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, এক একটি বুথ এলাকায় ৩০০-৩৫০ পরিবারের মধ্যে কাজ করতে হয়। ভোটের অনেক আগে থেকে এই কাজ করা হচ্ছে, যাতে বাড়তি চাপ কারও উপর না পড়ে। তাতে দিন-সময় ভাগ করে সেই কাজ করতে পারবেন শিক্ষকেরা। ছুটির দিনগুলির কিছুটা সময়ও এ কাজে ব্যবহার করা যায়। আবার তাঁদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অন্য সরকারি কর্মীদের ব্যবহার করাও সম্ভব নয়। কারণ, বিএলও দরকার অন্তত এক লক্ষ। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “সকলেই যদি বলেন এ কাজ করা সম্ভব নয়, তবে কাজগুলি করবেন কারা? কী ভাবেই বা সঠিক পথে ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে? কমিশনের নিজস্ব তো লোকবল নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)