হতেই পারে রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে এক দল, আর কিছু পুরসভা ও পঞ্চায়েত রয়েছে অন্য দলের হাতে। তার জন্য কি স্থানীয় প্রশাসনের কাজ আটকে যাওয়া উচিত? নিজে ভুক্তভোগী হয়ে এ বার এই প্রশ্নে দেশ জুড়েই বিতর্ক চাইছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
রাজ্য যাতে পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে দেয়, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ১৬ অগস্ট শিলিগুড়িতে এক বিতর্ক-সভার আয়োজন করছেন অশোকবাবু। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ থেকে শুরু করে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, এমনকী জিটিএ-র প্রতিনিধিকেও আমন্ত্রণ জানান তিনি। শিলিগুড়ির পরে কলকাতা এবং দিল্লিতেও সভা করতে চান অশোকবাবু।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে বুধবার অশোকবাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্য তো বটেই, অন্য রাজ্যগুলিও পুরসভা, পঞ্চায়েতের গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সাংবিধানিক এক্তিয়ার মানছে না। এ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের প্রয়োজন।’’ তাঁর মতে, সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে দেখা উচিত। তাই বিতর্কের বিষয় রাখা হয়েছে— স্থানীয় গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪তম সংশোধনীর গুরুত্ব। বস্তুত, শিলিগুড়ির মেয়র হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতাই যে তাঁকে এ ধরনের বিতর্ক-সভা ডাকতে প্ররোচিত করেছে, তা-ও কবুল করেছেন অশোকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় মেয়র কাউন্সিলের সভাপতি নাগপুরের মেয়রকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’
প্রতিটি পুরসভার প্রধান, পুর-নিগমের মেয়র এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতিদেরও বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন অশোকবাবু। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে সুব্রতবাবু ছাড়াও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভা ও জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে। তাই তাঁদের প্রতিনিধিদের সুচিন্তিত মত জরুরি।’’
জয়রাম বা কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষেরা অংশগ্রহণের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিলেও তৃণমূলের কেউ যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অশোকবাবু অতীতে মেয়র হিসাবে সুব্রতবাবুর পেশ করা যুক্তিকেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু যখন কলকাতার মেয়র ছিলেন, তখন ‘সিটি গভর্নমেন্ট’-এর কথা বলেছিলেন। তাই তাঁকেই প্রধান অতিথি হিসাবে চাইছি।’’ সুব্রতবাবু জানান, এ ব্যাপারে চিঠি পেলে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব, তা চিঠি দিয়ে অশোকবাবুকে জানিয়ে দেব।’’ তবে ‘ব্যস্ততা’র জন্য মন্ত্রী ফিরহাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য ছাড়াও আইনজ্ঞ, গবেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তবে সভার আয়োজন করতে গিয়েও অশোকবাবু শাসকের অসহযোগিতার মুখে পড়েছেন! তিনি জানান, শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজনের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে জানানো হয়, ওই দিন ‘বুকিং’ আছে। একটি বেসরকারি হোটেলে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে অশোকবাবুদের।
সিপিএম পরিচালিত জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম যেমন অশোকবাবুর সুরেই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা যেখানে উন্নয়ন খাতে পাচ্ছে ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, সেখানে আমরা পাচ্ছি ২০ লক্ষ। বাকি বঞ্চনার বিষয়টা বুঝন!’’ কংগ্রেস পরিচালিত রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও আমলেই ভাল নেই। আর কিছু বলে বিতর্কে জড়াব না!’’ যদিও কংগ্রেসেরই ঝালদার পুর-প্রধান মধুসূদন কয়ালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশাসনের থেকেও সাহায্য পাচ্ছি।’’
অশোকবাবুর সঙ্গে সহমত নন চন্দননগরের মেয়র, তৃণমূলের রাম চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা পুর-পরিষেবা পান, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কাজ করছি। রাজ্য সরকার নাগরিকদের প্রতি সংবেদনশীল।’’ তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার মতে, ‘‘স্বশাসন মানে আমি যা খুশি, তা-ই করব, সেটা তো নয়! অনেক ক্ষেত্রে মানিয়ে গুছিয়েই চলতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy