Advertisement
E-Paper

‘আত্মনির্ভরতার’ পরামর্শ চেয়ে শুনতে হল দেশে মৌলিক অধিকার হরণ নিয়ে প্রশ্ন! এনআইটি পড়ুয়াকে কী বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত

দুর্গাপুর এনআইটিতে শুক্রবার ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি প্রথমে প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চেই ছিলেন। পরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য তিনি মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকাসনে হাজির হন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:১৭
Asked suggestions for ‘Atmanirbhar Bharat’, Got confronted by question of fundamental rights, What was Sukanta Majumdar’s reply to NIT student

কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে দুর্গাপুর এনআইটির ছাত্র আয়ুষের বাদানুবাদের মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত।

ছাত্রছাত্রীদের সামনে মন্ত্রী হাজির হয়েছিলেন ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার বিষয়ে পরামর্শ নিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এনআইটি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি) পড়ুয়াদের সেই মতবিনিময় কিছু ক্ষণের জন্য গড়িয়ে গেল বাদানুবাদের দিকে। দেশের নাগরিকদের ‘মৌলিক অধিকার হনন’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এক ছাত্র। মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সমাধান আপনার জানা রয়েছে কি?’’ দুর্গাপুর এনআইটিতে শুক্রবার এই ঘটনায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্তারা। তবে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা পড়ুয়া সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও সমাধানের কথা বলতে না পারায়, বাদানুবাদ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

দুর্গাপুর এনআইটিতে শুক্রবার ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি প্রথমে প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চ থেকেই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথোপকথন শুরু করেছিলেন। কিন্তু মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য তিনি মঞ্চ থেকে নেমে ‘কর্ডলেস মাইক্রোফোন’ হাতে নিয়ে দর্শকাসনে হাজির হন। ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ করে তুলতে কী কী করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের মতামত নেওয়া শুরু করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের এই কথোপকথনের অধিকাংশটাই নির্বিঘ্নে কেটেছিল। পরিস্থিতি বদলে যায় রাজস্থান থেকে দুর্গাপুর এনআইটিতে পড়তে আসা আয়ুষ নামে এক ছাত্রের প্রশ্নে।

সুকান্তকে আযুষ প্রশ্ন করেন, ‘‘দেশের নাগরিকদের যেখানে মৌলিক অধিকারগুলো পাওয়ার জন্যই লড়তে হয়, সেখানে আত্মনির্ভরতা কী ভাবে আসবে?’’ এই প্রশ্ন শুনে সুকান্ত বলেন, ‘‘সমাধান বলুন। আপনার কাছ থেকে সমাধান জানতে চাইছি।’’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এনআইটি নির্দেশক অরবিন্দ চৌবেও সক্রিয় হন। ওই ছাত্রকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার কোন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে?’’ ছাত্র আয়ুষ বলার চেষ্টা করেন, তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত না-হলেও অন্য অনেকের হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেই সুকান্ত বলেন, ‘‘মন্ত্রীর সামনে এসে আপনি বলছেন যে, আপনার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এর চেয়ে বড় অধিকার কোন দেশে পাবেন? চিনে বলতে পারবেন এ কথা?’’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা এনআইটি নির্দেশক, কারও কথাতেই তখন দমতে রাজি নন রাজস্থানের আয়ুষ। তিনি বলতে থাকেন, ‘‘দেশের মানুষকে অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে। স্কুলে বাচ্চাদের বসার জায়গা নেই।’’ আয়ুষের এই কথা শুনে দর্শকাসনের একাংশ হাততালিও দিয়ে ওঠেন। তা দেখে সুকান্ত বলেন, ‘‘সমাধান দিন। বামপন্থী হবেন না। বামপন্থীরা শুধু সমস্যা তৈরি করেন আর সমস্যা দেখাতে থাকেন। সমাধানের কথা বলেন না। আপনি আমাকে সমাধানটা বলুন। বলুন আমাদের কী করা উচিত! আমি আমার চেয়ারে আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি। প্রয়োজনে এক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। সমাধান করে দিতে পারবেন?’’

কোনও সুনির্দিষ্ট ‘সমাধানসূত্র’ অবশ্য বলে দিতে পারেননি আয়ুষ। তিনি সুকান্তকে বলেন, ‘‘আপনাদের উচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা বোঝা।’’ সুকান্ত বলেন, ‘‘সেই জন্যই তো আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।’’ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সমস্যার কথা তো রাস্তায় যে কোনও মানুষ আমাকে বলে দেবেন। কিন্তু আপনি তো দেশের সবচেয়ে নামী প্রতিষ্ঠানগুলির একটিতে পড়েন। কঠিন পরীক্ষায় সফল হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন। আপনার তো মেধা রয়েছে। তা হলে আপনি সমাধান দিন। আপনারা সমাধান দেবেন না তো কে দেবেন!’’

মন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রের এই বাদানুবাদ প্রায় মিনিট পাঁচেক গড়ায়। ছাত্রটিকে নিজের ছাত্রজীবন সম্পর্কে কিছু কথাও বলেন সুকান্ত। শুধু অধিকার নয়, কর্তব্য নিয়েও ভাবার পরামর্শ দেন তিনি। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের সরকার জনগণের করের টাকা আপনাদের জন্য খরচ করছে। দেশের প্রতি আপনাদের কর্তব্য রয়েছে। দেশকে কী দিয়েছেন বা কী দেবেন, সে সব ভাবুন। প্রশ্ন সবাই তুলতে পারেন। উত্তর খুঁজতে বললে আর কারওকে পাওয়া যায় না।’’

আয়ুষ ছাড়া অন্য কোনও ছাত্রছাত্রীকে অবশ্য এ রকম প্রশ্ন করতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ পড়ুয়াই ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ করার বিষয়ে নিজেদের মতই জানিয়েছেন। কেউ বলেছেন, ভারতীয়দের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস কম। কেউ বলেছেন, ভারতকে পরিষেবা প্রদানকারী থেকে প্রযুক্তি নির্মাণকারী হয়ে উঠতে হবে। কেউ কৃত্রিম মেধা নিয়ে গবেষণার উপরে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। অধিকাংশ পরামর্শই ‘ধন্যবাদে’র সঙ্গে গ্রহণ করেন মন্ত্রী।

Aatmanirbhar Bharat NIT Durgapur Sukanta Majumdar West Bengal Politics BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy